পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>> 8 - --WikitanvirBot (আলাপ)---- --------------------- - --- --- গ্রহণ করে তবে তাহাকে ধিক্কার দিবার কিছুই নাই, এমন কি, বিরুদ্ধ সংস্কার অতিক্রম করিয়াও তাহাকে শ্রদ্ধা করা যাইতে পারে এই ভাবটা স্বচরিতাকে সেদিন সম্পূর্ণ অধিকার করিয়াছিল। মনের এই অবস্থাটা সুচরিতার পক্ষে একেবারে নূতন। মতের পার্থক্য সম্বন্ধে সে অত্যন্ত অসহিষ্ণু ছিল ;–পরেশবাবুর একপ্রকার নির্লিপ্ত সমাহিত শাস্ত জীবনের দৃষ্টান্ত সত্ত্বেও সে সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে বাল্যকাল হইতে বেষ্টিত ছিল বলিয়৷ মত জিনিষটাকে অতিশয় একান্ত করিয়া দেখিত –সেই দিনই প্রথম সে মাম্বর্ষের সঙ্গে মতের সঙ্গে সম্মিলিত করিয়া দেখিয়া একটা যেন সজীব সমগ্র পদার্থের রহস্যময় সত্তা অনুভব করিল। মানব সমাজকে কেবল আমার পক্ষ এবং অন্যপক্ষ এই দুই শাদা কালে ভাগে অত্যন্ত বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখিবার যে ভেদদৃষ্টি, তাহাই সেদিন সে ভুলিয়াছিল এবং ভিন্ন মতের মানুষকে মুখ্য ভাবে মানুষ বলিয়া এমন করিয়া দেখিতে পাইয়াছিল যে ভিন্ন মতটা তাহার কাছে গৌণ হইয়া গিয়াছিল। সেদিন সুচরিতা অনুভব করিয়াছিল যে তাহার সঙ্গে আলাপ করিতে গোর একটা আনন্দ বোধ করিতেছে। সে কি কেবল মাত্র নিজের মত প্রকাশ করিবারই আনন্দ ! সেই আনন্দানে স্বচরিতারও কি কোনো হাত ছিল না! হয়ত ছিল ‘ਜ!! হয়ত গোরার কাছে কোনো মানুষের কোনো মূল্য নাই—সে নিজের মত এবং উদ্দেশু লইয়াই একেবারে সকলের নিকট হইতে মুদূর হইয়া আছে --মানু্যরা তাহার কাছে মত প্রয়োগ করিবার উপলক্ষ্য मॉय ! - স্বচরিত। এ কয়দিন বিশেষ করিয়া উপাসনায় মন দিয়াছিল। সে যেন পূৰ্ব্বের চেয়েও পরেশবাবুকে বেশি করিয়া আশ্রয় করিবার চেষ্টা করিতেছিল। একদিন পরেশবাবু তাহার ঘরে একলা বসিয়া পড়িতেছিলেন এমন সময় স্বচরিতা তাহার কাছে চুপ করিয়া গিয়া বসিল। পরেশবাবু বই টেবিলের উপর রাথিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন—“কি রাধে !” স্বচরিত কলি—“কিছু না।" বলিয়া, তাহার টেবিলের উপরে যদিচ বই কাগজ প্রভৃতি গোছানোই ছিল তবু সেগুলিকে নাডিয়া চড়িয়া অন্তরকম করিয়া গুছাইতে লাগিল। •


~. -- o একটু পরে বলিয়া উঠিল, “বাবা, আগে তুমি আমাকে- "জাগ


যে রকম পড়াতে এখন সেই রকম করে পড়াও না কেন ?" পরেশবাবু সস্নেহে একটুখানি হাসিয়া কহিলেন “আমার ছাত্রী যে আমার ইস্কুল থেকে পাস করে বেরিয়ে গেছে। ] এখন ত তুমি নিজে পড়েই বুঝতে পার।" - স্বচরিত কহিল, "না, আমি কিছু বুঝতে পারি নে, , পরেশবাবু কহিলেন, "আচ্ছা বেশ, কাল থেকে পড়াব।" স্বচরিত আবার কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া হঠাৎ বলিয়া । উঠিল—“বাবা, সেদিন বিনয়বাবু জাতিভেদের কথা অনেক বলেন, তুমি আমাকে সে সম্বন্ধে কিছু বুঝিয়ে বল না কেন ?" পরেশবাবু কহিলেন—“ম, তুমি ত জানই, তোমর আপনি ভেবে বুঝতে চেষ্টা করবে, আমার বা আর কারে মত কেবল অভ্যস্ত কথার.মতো ব্যবহার করবে না। আমি বরাবর তোমাদের সঙ্গে সেই রকম করেই ব্যবহার করেছি। ! প্রশ্নটা ঠিক মত মনে জেগে ওঠবার পূৰ্ব্বেই সে সম্বন্ধে কোনো উপদেশ দিতে যাওয়া আর ক্ষুধা পাবার পূর্বেই থাবার খেতে দেওয়া একই—তাতে কেবল অরুচি এবং অপাক হয়। আমি যা বুঝি বলব।” স্বচরিতা কহিল—“আমি তোমাকে প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করচি, আমরা জাতিভেদকে নিন্দা করি কেন ?" পরেশ বাবু কহিলেন—“একটা বিড়াল পাতের কাছে বসে ভাত খেলে কোনো দোষ হয় না, অথচ একজন মানুষ । সে ঘরে প্রবেশ করলে ভাত ফেলে দিতে হয়—মানুষের প্রতি মানুষের এমন অপমান এবং ঘৃণা যে জাতিভেদে জন্মায় সেটাকে অধৰ্ম্ম না বলে কি বলা ? মানুষকে যারা এমন ভয়ানক অবজ্ঞা করতে পারে তারা কখনই পৃথিবীতে বড় ! হতে পারে না—অন্তের অবজ্ঞা তাদের সইতেই হবে।" স্বচরিতা গোরার মুখে শোনা কথার অনুসরণ কবি । - কহিল—“এখনকার সমাজে যে বিকার উপস্থিত হয়েচে । তাতে অনেক দোষ থাকৃতে পারে ; সে দোষ ত সমাজের সকল জিনিষেই ঢুকেছে, তাই বলে আসল জিনিষটাকে দোষ দেওয়া যায় কি ?” পরেশ বাবু তাহার স্বাভাবিক শাস্তস্বরে কহিলেন

ਾਂ i মাছ ঘূণা করচে এবং তাতে আমাদের সকলকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্চে, এমন অবস্থায় একটা কাল্পনিক আসল জিনিষের কথা চিন্তা করে মন সাস্তুনা মানে কই ?” আমি আগের মত তোমার কাছে পড়ব ।” কহিল—“আচ্ছ, সকলকে সমদৃষ্টিতে দেখাই ত আমাদের - দেশের চরমতত্ত্ব ছিল।” - নেই-সমদৃষ্টি রাগদ্বেষের অতীত। মানুষের হৃদয় এমনতর হৃদয়ধৰ্ম্মবিহীন জায়গায় স্থির দাড়িয়ে থাকতে পারে না। সেইজন্তে আমাদের দেশে এরকম সাম্যতত্ত্ব থাকা সত্ত্বেও নীচজাতকে দেবালয়ে পৰ্য্যন্ত প্রবেশ কর্তে দেওয়া হয় না। দি দেবতার ক্ষেত্রেও আমাদের দেশে সাম্য না থাকে তবে শন শাস্ত্রের মধ্যে সে তত্ত্ব থাকলেই কি আর না থাকলেই স্বচরিতা পরেশ বাবুর কথা অনেকক্ষণ চুপ করিয়া তুমি আমাকে যখনি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে । লসিয়া মনে মনে বুঝিতে চেষ্টা করিতে লাগিল। অবশেষে কহিল—“আচ্ছা বাবা, তুমি বিনয় বাবুদের এ সব কথা বোঝাবার চেষ্টা কর না কেন ?” পরেশ বাবু একটু হাসিয়া কহিলেন—“বিনয় বাবুদের বুদ্ধি কম বলে যে এ সব কথা বোঝেন না তা নয় –বরঞ্চ তাদের বুদ্ধি বেশি বলেই তারা বুঝতে চানন, কেবল বোঝাতেই চান। তারা যখন ধৰ্ম্মের দিক থেকে -অৰ্থাৎ সকলের চেয়ে বড় সত্যের দিক থেকে এসব কথা মন্তরের সঙ্গে বুঝতে চাইবেন তখন তোমার বাবার বুদ্ধির জন্তে তাদের অপেক্ষা করে থাকতে হবে না। এখন তারা অন্ত দিক থেকে দেখচেন, এখন আমার কথা তাদের কোনো কাজেই লাগবে না।” গোরাদের কথা যদিও স্বচরিতা শ্রদ্ধার সহিত শুনিতে ছিল তবু তাহ তাহার সংস্কারের সহিত বিবাদ বাধাইয়া তাহার অন্তরের মধ্যে বেদন দিতেছিল। সে শান্তি পাইতেছিল না। আজ পরেশ বাবুর সঙ্গে কথা কহিয়া সেই বিরোধ হইতে সে ক্ষণকালের জন্ত মুক্তিলাভ করিল। - দিতে চা না। পরেশ বাবুর সঙ্গে যাহার মতের ཕའ་ হইয়াছে স্বচরিতা তাহার উপর রাগ না করিয়া থাকিতে । - পারে নাই। সম্প্রতি গোরার সঙ্গে আলাপের পর গোরার । কথা একেবারে রাগ বা অবজ্ঞা করিয়া উড়াইয়া দিতে পারিতেছিল না বলিয়াই স্বচরিতা এমন একটা কষ্ট বোধ করিতেছিল। সেই জন্যই আবার শিশুকালের মত করি । পরেশ বাবুকে তাহার ছায়াটির স্থায় নিয়ত আশ্রয় করিবার । জষ্ঠ তাহার হৃদয়ের মধ্যে ব্যাকুলতা উপস্থিত হইয়াছিল। চৌকি হইতে উঠিয়া দরজার কাছ পৰ্য্যন্ত গিয়া আবার ফিরিয়া আসিয়া স্বচরিতা পরেশ বাবুর পিছনে তাহার । চৌকির পিঠের উপর হাত রাখিয়া কহিল—“বাবা - বিকালে আমাকে নিয়ে উপাসনা কোরো।” - পরেশ বাবু কহিলেন—“আচ্ছা।” । তাহার পরে নিজের শোবার ঘরে গিয়া দরজা বসিয়া স্বচরিতা গোরার কথাকে একেবারে - চেষ্টা করিল। কিন্তু গোরার সেই বুদ্ধি ও :ি মুখ তাহার চোখের সম্মুখে জাগিয়া রহিল—তাহার - হইতে লাগিল, গোরার কথা শুধু কথা নহে, সে যেন लेते । স্বয়ং ;—সে কথার আকৃতি আছে, গতি আছে, প্ৰাণ । আছে—তাহা বিশ্বাসের বলে এবং স্বদেশপ্রেমের ਾਂ পরিপূর্ণ। তাহ মত নয় যে তাহাকে প্রতিবাদ করিয়াই । চুকাইয়া দেওয়া যাইবে—তাহা যে সম্পূর্ণ মানুষ–এবং সে । মানুষ সামান্ত মানুষ নহে। তাহাকে ঠেলিয়া ফেলিতে ৰে হাত ওঠে না। অত্যন্ত একটা দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়িয়া হান্ত্ৰি । কান্না আসিতে লাগিল। কেহ যে তাহাকে এত বড় একটা । দ্বিধার মধ্যে ফেলিয়া দিয়া সম্পূর্ণ উদাসীনের মত অনায়াসে দূরে চলিয়া যাইতে পারে এই কথা মনে করিয়া তাহার বুক ফাটিয়া যাইতে চাহিল অথচ কষ্ট পাইতেছে বলিয়াও ধিক্কারের সীমা রহিল না। - - - -- - - - - R(R এইরূপ স্থির হইয়াছিল যে, ইংরেজি কবি ড্রাইডেনের - - রচিত সঙ্গীতবিষয়ক একটি কবিতা বিনয় ভাবব্যক্তির সহিত আবৃত্তি করিয়া যাইবে এবং মেয়ের অভিনয়মঞ্চে -