পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

— প্রবাসী । >ミ8 [ ৮ম ভাগ। ৩য় সংখ্যা । ] হৃদয়ের সঙ্গে, ধৰ্ম্মের সঙ্গে পালন করলে তবেই সমস্ত দেশের সন্ধান পাইয়াছ কি ? সন্ধান যদি পাইয়া থাক । . তে বুঝায় শুদ্ধ কেবল দেখিবার যন্ত্র। কিন্তু তুমি মুখত্ৰ উজ্জল হয়ে সুন্দর হয়ে উঠবে এ কথা আমার কাছে আজ ভারি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মা, আমি আর বেশি বকবো না। আমি বেশি কথা কই বলে আমার কথাকে কেউ আমারই মনের কথা বলে বিশ্বাস করে না। এবার থেকে কথা কমাব ।” - বলিয়া বিনয় আর বিলম্ব না করিয়া উৎসাহদীপ্ত চিত্তে প্রস্থান করিল। আনন্দময়ী মহিমকে ডাকাইয়া বলিলেন, “বাবা, বিনয়ের সঙ্গে আমাদের শশিমুর্থীর বিবাহ হবে না।” মহিম। কেন ? তোমার অমত আছে ? আনন্দময়ী। এ সম্বন্ধ শেষ পর্যন্ত টি কবে না বলেই আমার অমত, নইলে অমত করব কেন ? মহিম। গোরা রাজি হয়েছে, বিনয়ও রাজি, তবে টিকবে না কেন ? অবশু, তুমি যদি মত না দাও তা হলে বিনয় এ কাজ করবে না সে আমি জানি। আনন্দময়ী । আমি বিনয়কে তোমার চেয়ে ভাল জানি। মহিম। গোরার চেয়েও ? আনন্দময়ী। হা, গোরার চেয়েও ভাল জানি, সেই জন্তেই সকল দিক ভেবে আমি মত দিতে পারচি নে। মহিম। আচ্ছা গোরা ফিরে আমুকু। আনন্দময়ী। মহিম, আমার কথা শোনো। এ নিয়ে যদি বেশী পীড়াপীড়ি কর তাহলে শেষ কালে একটা গোলমাল হবে। আমার ইচ্ছা নয় যে, গোরা বিনয়কে এ নিয়ে কোনো কথা বলে । “আচ্ছা দেখা যাবে’ বলিয়া মহিম মুখে একটা পান লইয়৷ রাগ করিয়া ঘর হইতে চলিয়া গেল। চক্ষু পদার্থটা কি ? ১ম। তুমিও জান’ তোমার চক্ষু আছে—আমিও জানি আমার চক্ষু আছে। আমি কিন্তু আমার চক্ষুটিকে বিস্তর সাধ্যসাধনা করিয়াও কোনো স্থানেই খুজিয়া পাইতেছি না। তোমাৰ চক্ষু কোন স্থানে বাস করে, তাহার ভূমি কোনে তোমাকে আমি জিজ্ঞাসা করি—বল’ দেখি–পৃথিী বিস্তীর্ণ থালে এই যে তরোবেতরো নানা বর্ণের স্বামী তোমার সম্মুখে নৈবেদ্য-সাজানে রহিয়াছে—ইহার মন্ধে কোন সামগ্ৰীটা তোমার চক্ষু ? ২য়। ( আপন চক্ষুতে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া ) এই দে আমার চক্ষু । - ১ম । তুমি আপ্লি যাহা জন্মেও দেখ নাই, আমাকে তা দেখাইতে আসিয়াছ বুক ফুলাইয়া—এ এক রহস্ত মন্দ সক্রেটিস কি সাধে বলিয়াছিলেন "Physician hea thyself হে চিকিৎসক আপন রোগের চিকিৎসা কর” । ২য়। কে তোমাকে বলিল-আমার আপনার চক্ষু আiি জন্মেও দেখি নাই ? ঐ দেথ আয়নার ভিতরে আমা দুইছটা চক্ষুর প্রতিচ্ছবি জল জল করিতেছে। ১ম । আয়নাটার আধ-হাত উপরে ঐ যে একটা জাপানি ছবি দেয়ালে টাঙ্গানো রহিয়াছে—না জানি ওটা কোন মহাত্মার ছবি ! তুমি অবশু জান ? ২য়। কেমন করিয়া জানিব—আমি তো দৈবজ্ঞ নছি। ১ম। দৈবজ্ঞ নহ? সে কি ? তবে আমার বুঝিতে স্থা হইয়াছিল—মার্জনা করিবে। তুমি আয়নাটার ভিত৷ একটা কিসের প্রতিচ্ছবি যেই দেখিলে-দেখিবামাত্রী চিনিতে পারিলে যে, সেটা তোমার চক্ষুর প্রতিচ্ছবি ; অথচ । তোমার চক্ষুর সঙ্গে জন্মেও তোমার চাক্ষুষ আলাপ পরিস ঘটে নাই। আমার তাই মনে হইল যে, ঐ জাপানি ছবিখানি দেখিবামাত্রই, উহা যে কোন মহাত্মার ছবি, তাই চিনিতে পারিতে তোমার একমুহূৰ্ত্তও বিলম্ব হইবে না; বিশেষতঃ, বৰ্ত্তমান অদশতাদ্ধে যখন জাপানে মহাত্মার অভাব নাই। ২য়। তোমাদেরই তো ন্যায়-শাস্ত্রে বলে “ধূমাংবহ্নি"। সে যাই হোক্—এটা তো তুমি মানে যে, “ফলেন পরি চীয়তে ?" এই দেখ আমি চক্ষু বুজিলাম—আর আমি আমার সম্মুখের সমস্ত বস্তু আমার দৃষ্টিপথ হইতে সরিয়া পলাইল । চক্ষু মেলিলাম—আর আমি আমার দৃষ্টিক্ষেত্রে পলায়িত-পূর্ব বস্তুগুলা স্ব স্ব স্থান অধিকার করিয়া বসিল । ১ম । চক্ষু পদার্থটা কি ? দর্শনেক্রিয় তো ? দর্শনেস্ক্রিয় বাং উন্মীলন-নিৰ্মীলন করিলে তাহ আর একতরো যন্ত্র— তাহা আলোকরশ্মিকে ঘরে ঢুকাইবার এবং ঘর হইতে ড়িত করিয়া দিবার কপাট। ঐ রকমের কপাট’কে চক্ষু বলিতে তোমার যদি কোনো আপত্তি না থাকে, তবে— রহ–তোমার আর একটি ঠিক্‌ ঐ রকমের চক্ষু তোমাকে আমি দেখাইতেছি। পাশের ঐ কুটুর ঘরটিতে আলোক যাতায়াতের একটিমাত্র পথ কেবল তাহার এই প্রবেশদ্বারটি, এতদ্ভিন্ন উহার আর কোনোদিকের কোনো স্থানে দুয়ার বা জানালা বা দেয়ালের গায়ে কোনো প্রকার ফুকর নাই । ঐ কুটুর ঘরটির ভিতরে আমি এই প্রবেশ করিলাম ; প্রবেশ করিয়া আমি আর কিছু দেখিতেছি না—কেবল নোলের এক কোণে কতকগুলা নূতন-ক্রীত চক্‌চোকে সার ঘটকলস স্ত,পাকারে সাজানো রহিয়াছে—এই যা দেখিতেছি। একবার আইস এখানে। আসিয়াছ ? উত্তম । এই নেথ আমি কপাট বন্ধ করিয়া আলোকের পথ আটক করিলাম, আর আমি তোমার দৃষ্টিপথ হইতে ঘটকলস গুলা দান করিল ; এই দেখ কপাট খুলিয়া আলোককে ঘরে কিতে পথ ছাড়িয়া দিলাম—আর আমি তোমার দৃষ্টিক্ষেত্রে টকলস গুলা যেখানকার সেইখানে অনাহূত আসিয়া উপস্থিত। “ফলেন পরিচয়তে” এই না তোমার কথা ? আমারও ঐ কথা। তুমি যেমন ফলেন পরিচীয়তে’র দোহাই দিয়া বলিতেছ যে, ঐ চৰ্ম্ম কপাট ছটা তোমার চক্ষু ; আমিও তেমি ফলেন পরিচয়তে'র দোহাই দিয়া বলিতেছি ৰে, এই কাষ্ঠ কপাট দুটা তোমার চক্ষু। এখন কাহার কথা সত্য ? তোমার কথা সত্য—না আমার কথা সত্য ? দেবদত্ত তো আর মিথ্যা বলিবার লোক নহেন—উ হাকে মধ্যস্থ মানিতেছি—উনি বলুন কোন কথাটা সত্য—তোমার কথা না আমার কথা ? দেবদত্ত। যদি কাষ্ঠকপাট চক্ষু হয়, তবে চৰ্ম্মকপাটও 'চক্ষু , আর যদি কাষ্ঠকপাট চক্ষু না হয়, তবে চৰ্ম্মকপাটও চক্ষু নহে। কেননা, একই রকমের প্রমাণ একটার ব্যালায় গ্রাহ, আর-একটার ব্যালায় অগ্রাহ, এরূপ হইলে একযাত্রায় পৃথক ফল হয় ; একযাত্রায় পৃথক্ ফল হইলে—ফলদৃষ্টে মূলের পরিচয় প্রাপ্তির সম্ভাবনা বিলুপ্ত হয় ; ফল দৃষ্টে চক্ষু পদার্থটা কি ? 〉&Q মূলের পরিচয় প্রাপ্তির সম্ভাবনা বিলুপ্ত হইলে—তোমাদের উভয়সম্মত গোড়া'র কথা সেই যে “ফলেন পরিচয়তে”— সেই গোড়া’র কথাটি একেবারেই ফাসিয়া যায় ; বিচারস্থলে বাদীপ্রতিবাদীর উভয়সম্মত গোড়া’র কথা ফাসিয়া গেলে তাহার উপরে ভর দিয়া দাড়াইয়া আর আর যত কথা অখণ্ডনীয় বেদবাক্যের ভান করে, সমস্তই নস্তাৎ হইয়া যায়। ২য় । তোমার কথার ভাবটা এতক্ষণে আমি করতলে নাগাল পাইলাম। তুমি বলিতে চাহিতেছ এই যে, আমার এই চৰ্ম্মচক্ষুর অন্তঃপুর-মহলে যে এক প্রকার অৰ্দ্ধ-মানসিক । অৰ্দ্ধ-শারীরিক দর্শনেন্দ্রিয় লুকাইয়া আছে, সেইটিই আমার প্রকৃত চক্ষু। তা আবার বলিতে ! ও যাহা তুমি বলিতে চাহিতেছ, উহা বেদবাক্যের দ্যায় অকাট্য। আমিও তাহাই বলি। অধিকন্তু আমি বলি এই যে, এ চক্ষু (অর্থাৎ চৰ্ম্মচক্ষু ) দ্বৈতগর্ভ ; কিন্তু সে চক্ষু ( অর্থাৎ খাস দর্শনেন্দ্রিয় ) দ্বিতীয় বর্জিত। দুঃখের বিষয় এই যে, অন্তঃপুরটা যেমন অস্থর্যাম্পশু, অন্তঃপুরের রত্নটিও তেন্নি ; চক্ষুমণিটি গৃহস্বামী ভিন্ন দোসর কোনো লোকের সাক্ষাতে প্রাণান্তেও বাহির হয় না। ১ম। সে জন্ত তুমি চিন্তা করিও না—তোমার গুপ্ত নিধিটিকে আমি দেখিতে চাহিতেছি না। তুমি আপ্নি তাহাকে দেখিতেছ কিরূপ—সেইটিই আমার জিজ্ঞাস্ত। ২য়। আমি দেখিতেছি যে, পক্ষিশাবক যেমন নীড়ের অন্তরাকাশে নিমগ্ন থাকে, অথবা সরস্বতী নদী যেমন বালুকাস্তরের অন্তরাকাশে নিমগ্ন থাকেন, সে চক্ষুটি (প্রকৃত দর্শনেন্দ্রিয়টি ) তেমি এ চক্ষুর ( চৰ্ম্মচক্ষুর ) অন্তরাকাশে নিমগ্ন রহিয়াছে। ১ম। কোন চক্ষে দেখিতেছ? ২য় । অবশু মনশ্চক্ষে । ১ম। তুমি আমার সঙ্গে বড় চালাকি খেলিতেছ। মনশ্চক্ষু তো কল্পনা-চক্ষু। জন্মান্ধব্যক্তি যদি বলে যে, “গতরাত্রের স্বপ্নে আমি কল্পনাচক্ষে স্বৰ্য্যোদয় দেখিয়াছি।” তবে তাহার সে কথায় তুমি বিশ্বাস কর কি ? জন্মান্ধ ব্যক্তি যেমন জন্মেও স্বৰ্য্যোদয় প্রত্যক্ষ করে নাই, তুমিও তেন্নি জন্মেও তোমার চক্ষুটিকে প্রত্যক্ষ কর নাই ; তবুও, যদি লজ্জায়