পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৮ প্রবাসী । ৮ম ভাগ। | ৩য় সংখ্যা । ] এই যে, দেখন ক্রিয়ার বীজ-দর্শনেন্দ্রিয়, যাহা চৰ্ম্ম চক্ষুর চক্ষুতে আলোক অভ্যর্থনা করিয়া আনাও যা, আর, চন্ধান্ত । অন্তরাকাশে শক্তিরূপে (potential রূপে ) অন্তনিলীন, তাহাই চৰ্ম্ম চক্ষুর বহিরাকাশে দৃশু ফলাকারে অভিব্যক্ত হয়। অন্তরাকাশের মোট ব্যাপার হচ্চে দৃশু-দেখা চক্ষু ; বহিরাকাশের মোট ব্যাপার হচ্চে চক্ষে-দেখা দৃশু ; এ দুইটি মোট ব্যাপারের একটিতেও যেমন - আর একটিতেও তেমি, দুয়েতেই, চক্ষু, দেখা, এবং দৃশু, এই তিনটি উপাদান পরস্পরের সহিত অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধ-স্বত্রে জড়িত ; প্রভেদ কেবল এই যে, অন্তরাকাশে ঐ তিনটি উপাদানের সমষ্টি বীজৰূপে অন্তনিগুঢ় ; বহিরাকাশে উহ। ফলস্কপে অভিব্যক্ত। তবেই হইতেছে যে, x = 1 অর্থাৎ অন্তরাকাশের মোট ব্যাপার= বহিরাকাশের মোট ব্যাপার। কিন্তু ৪=ye ( অর্থাৎ2 = অন্তরাকাশস্থিত চক্ষুর একত্ব x অন্তরাকাশস্থিত ছবি বৈচিত্র্য ) ; তথৈব, A = BC ( অর্থাৎ A = বহিরাকাশস্থিত আলোকের একত্ব × বহিরাকাশ স্থিত রূপ-বৈচিত্রা )। ইহাতে এইরূপ দাড়াইতেছে যে, yz= BC - কিন্তু 2=C (প্রথম সিদ্ধান্ত দেথ )। অতএব y = B অর্থাৎ অন্তরাকাশস্থিত চক্ষুর একত্ব = বহিরাকাশস্থিত আলোকের একত্ত্ব । এইরূপ তাক কসিয়া পাওয়া যাইতেছে যে, y = B দিশী ভাষায়—য = ঐ অর্থাৎ যে চক্ষু তোমার এই চক্ষুর (চৰ্ম্ম চক্ষুর ) অস্তুরাকাশে নিমগ্ন তাহ ঐ আলোক। ফলেও এইরূপ দেখা যায় যে, এক দিকে যেমন— আকাশ করিলে প্রকাশ বন্ধ নয়নের হয় নয়ন অন্ধ ॥ আর একদিকে তেমি আঁখি দ্বার বন্ধ যা'র আলো তার অন্ধকার ॥ অতএব এটা স্থির যে, অন্তরাকাশের চক্ষু= বহিরাকাশের আলোক। একই গঙ্গাজল যেমন অসংখ্য পাইপের জল, তেমি একই আলোক সৰ্ব্ব জীবের চক্ষু চক্ষু হইতে আলোককে বাহির করিয়া দেওয়াও যা, আর, চক্ষু হইতে চক্ষুকে বাহিৰ করিয়া দেওয়াও তা, একই ; তেন্নি আবার চক্ষু অভ্যর্থনা করিয়া আনাও তা, একই । আলোকের আবাহন বিসর্জনেই চক্ষুর আবাহন বিসর্জন হয় ; অতএ। বহিরাকাশের আলোকই অন্তরাকাশের চক্ষু স্বহ্ম ধরিড়ে । গেলে--বহিরাকাশ এবং অন্তরাকাশ বলিয়া দুই পৃষ্ণ শ্রেণীর আকাশের অবতারণা একপ্রকার-কল্পনা রাৰো গন্ধৰ্ব্ব নগরের পত্তন বই আর কিছুই না ; কেননা আকাশ অথণ্ড এবং তাহা এক বই দুই নহে ; আর, সেই কারণ গতিকে অন্তরাকাশ এবং বহিরাকাশ একই অথও আকাশেৰ । ছই কল্পিত খণ্ডাংশ বই আর কিছুই হইতে পারে না। কিন্তু সে কথা বারাস্তরে যথাসময়ে হইবে—এ যাত্ৰা আৰু ন|--যৎ স্বল্পং তন্মিষ্টং ৷ শ্ৰীদ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভারতের রাষ্ট্ৰীয় মহাসভা। ( পিরিউর ফরাসী হইতে ) অভিজাত বর্গের উত্তরাধিকারিগণ, যাহারা পালেমেণ্ট-শাসন তন্ত্রের পরমায়ু শেষ হইয়া আসিয়াছে মনে করিয়া আগ্রহের সহিত দিন গুণিতেছেন, তাহাদিগকে আমি পরামর্শ দিই, তাহারা একবার এসিয়া ভ্রমণ করিয়া আসুন। তাহাম্বের ভুল ভাঙ্গিবে। যে অস্ত্র আমাদের হস্ত হইতে স্খলিত হইয়া পড়িতেছে, এসিমিকেরা তাহাই ভক্তিভাবে কুড়াই। লইতেছে। আমাদের পুরাতন সেকেলে বন্দুকগুলা নিগ্রে রাজার খুব জঁাকজমকের সহিত ব্যবহার করিতেছে। ১৮৯০ খৃষ্টাব্দ হইতে জাপানে শাসনকার্য্যের সাৰ্ব্বজনিক সভা এবং ১৮৮৬ হইতে ভারতে রাষ্ট্ৰীয় সভা স্থাপিত হইয়াছে। এমনও ঘটিতে পারে, আমাদের অস্ত্রগুলা লইয়াই এগিা তাহার নিজের ধরণে তাহাদিগকে আরও ভাল করির তুলিবে। জাপানীরা যখন সংবাদপত্রে পাঠ করে যে, ফরাসী পালেমেণ্টে কিংবা অষ্ট্ৰীয়ার পালেমেণ্টে সদস্তদের মধ্যে হাতাহাতি হইয়া গিয়াছে, তখন কি তাহার হাসে না! কেননা, জাপানে সদস্যদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি কখনই হয় না। যখন যুরোপে প্রতিনিধি নিৰ্ব্বাচনের সম্বর | | ৪৩৬ পর্য্যস্ত উঠিল । ৮ জনের প্রাণ যায়, কিংবা ১০১২ টার ঠ্যাং ভাঙ্গে, কিংবা ক্টকগুলার চোক ফুট হইয়া যায়, তখন টোকিওর সংবাদপুত্ৰ নিৰ্ব্বাচকদিগের এই মধুর ব্যবহার অতীব হৃষ্টচিত্তে লিপিবদ্ধ করে সন্দেহ নাই। নব্য জাপান Petit Poucerর বুট পরিয়াছে; পুরাতন ভারত, শবের বস্ত্র গায়ে আঁটিয়া, ধীরে ধীরে চলিয়াছে— হয় ত জাপান অপেক্ষ ধ্রুব পথে চলিয়াছে। ভারতে, রাষ্ট্ৰীয় শাসন-সভার স্থলে রাষ্ট্রীয় পরিষৎ স্থাপিত হইয়াছে ; ইয়াও কম উন্নতির কথা নহে। ভারতের সমস্ত প্রদেশ মইতে প্রতিনিধি নিৰ্ব্বাচিত হইয়া প্রতিবৎসর চারিদিন রিয়া এই রাষ্ট্রীয় পরিষদের অধিবেশন হয়। প্রভুদের দরকারী মতামতের বিরুদ্ধে, প্রজাপুঞ্জের স্বাধীন মতামত এই পরিষদে পরিব্যক্ত হইয়া থাকে। একবার ভাবিয়া খে-এটা কি অভূতপূৰ্ব্ব অভিনব ব্যাপার ; যেখানে এতদিন বিভিন্ন বর্ণের মধ্যে, বিভিন্ন জাতির মধ্যে বৈরীভাব ছিল-রুদ্ধভাব ছিল, সেই ভারতের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পৰ্য্যন্ত–কুমারিক অন্তরীপ হইতে পেশোয়ার পর্যন্ত-পরম্পরের সহিত মিলিত হইবার জন্য বাহু প্রসারণ করিতেছে! একটা বৃহত্তর ভাব আসিয়া বিশেষ বিশেষ ক্ষুদ্র ভাবগুলার স্থান অধিকার করিয়াছে। জাতীয় পতাকার তলে, এই প্রথম সকলে আসিয়া মিলিত হইয়াছে। গুটি অতীব হৃদয়গ্রাহী, স্বদেশপ্রীতি ও পালেমেণ্টতন্ত্র দুইটি যমজের ন্যায় এক সঙ্গে আবির্ভত হইয়াছে। ঐ দেখ, চাষা তাহার গ্রামের মাটির দেয়ালের পিছন হইতে মুদূরবর্তী কংগ্রেসের কথা কান পাতিয়া শুনিতেছে এবং স্বদেশ ও স্বাধীনতা এই দুই শব্দের অর্থ কিছুই বুঝিতে না পারিয়াও উহার মোহে মুগ্ধ হইতেছে। + - * আরম্ভটা বহুকষ্টে সম্পন্ন হইয়াছিল। বোম্বায়ের প্রথম কংগ্রেসে শুধু ৭ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল। তাহার পরের বৎসরে, কলিকাতায়, প্রতিনিধির সংখ্যা এক লাফে বোম্বায়ের দ্বিতীয় কংগ্রেসে, ২০ ০০ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল, এবং এই দ্বিতীয় কংগ্রেস, সমস্ত দেশের মুখপাত্র বলিয়৷ শ্লাঘা করিতে পারে। যদিও কংগ্রেসের সংস্থাপক হিউম একজন ইংরেজ, এবং ইহার সহকারীও কতকগুলি ইংরেজ, তথাপি কংগ্রেস wo ভারতের রাষ্ট্রীয় মহাসভা । >ミふ ভারতীয় ইংরেজের মতামত সন্দেহের চক্ষে দেখিতে লাগিল। একবার কল্পনা করিয়া দেখ, যাহারা সৰ্ব্বপ্রকার শাসনের বাহিরে, যাহার কোন প্রকার আটক সহ করিতে পারে না, যাহারা পদানত জনতার বুকের উপর দিয়া উন্নত মস্তকে চলিয়া যায়, সেই রাজপুরুষেরা কিরূপ বিষণ্ণভাবে জাগিয়া উঠিল । “বিশ্বাসঘাতক” বলিয়া তাহারা চীৎকার করিতে লাগিল, নানা প্রকার অশুভ ভবিষ্যদ্বাণী করিতে লাগিল, কানপুরের হত্যাকূপের কথা স্মরণ করাইয়া দিল! কিন্তু কংগ্রেস টলিল না। অরাজদ্রোহী মিত-বাদিতার দ্বারা, কংগ্রেস, রাজপুরুষদের গুপ্ত ষড়যন্ত্র ও গুরুতর অপবাদগুলাকে ব্যর্থ করিয়া দিল। অধুন, কংগ্রেস বড়লাটের সহিত গণনীয়। এক্ষণে কংগ্রেস, লোক-মতের অধিকারপ্রাপ্ত মুখপাত্র। এই স্বাধীন ও অবারিতদ্বার বিচারালয়ে আসিয়া, ধৰ্ম্ম, কৰ্ম্ম ও জাতি নিৰ্ব্বিশেষে সমস্ত ভারত, একজাতিতে পরিণত সমস্ত ভারত, —যাহারা ভারতকে শিক্ষা দিয়াছে, যাহারা ভারতকে শোষণ করিতেছে, সেই বিদেশী প্রভুদের নিকট চিরপ্রপীড়িতের দুঃখবেদন নিবেদন করে । এই ১৯০০ অব্দের শেষভাগে, ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমায়, হিমালয়ের অনতিদূরে, লাহোরে কংগ্রেস বসিবে। কাজেই একটু শীঘ্র শীঘ্র আমাকে বোম্বাই ছাড়িতে হইবে। আট দিন হইল আমি জাহাজ হইতে বোম্বায়ে নামিয়াছি। ইণ্ডিয়ান স্পেক্টেটরের আফিসে কংগ্রেস-ওয়ালাদের আড্ডা। সেইখানে সবাই সমবেত হইতেছে, যাইবার উদ্যোগ করিতেছে, তর্কবিতর্ক করিতেছে। আমি সেইখানে গিয়া মালাবারির সহিত সাক্ষাৎ করিলাম। বোম্বাক্সের উকীল মাননীয় চন্দাবরকারের সহিত আমার পরিচয় করিয়া দেওয়া হইল। ইনি উদারনৈতিক দলের প্রধান, সম্প্রতি হাইকোর্টের জজ হইয়াছেন। ইনিই এই বৎসরের কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতির আসন গ্রহণ করিবেন। এই শেষবার তিনি কংগ্রেসে উপস্থিত থাকিতে পারিবেন। ভিক্টোরিয়া ষ্টেশানের গুরুভার গম্বুজ-তলে ও খিলানপথে কি শ্বাসরোধী জনতা ! এই কংগ্রেসের ট্রেণ, আমাদের তীর্থযাত্রী কিংবা উপনিবেশযাত্রীর ট্রেণ স্মরণ করাইয়। দেয়। -