পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

`වය WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:১৭, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)...~. কুলিরা সারি সারি চলিয়াছে এবং রেল-গাড়ীর কামরায় চড়াও করিয়া উঠিয়া পড়িতেছে। যাচ্ঞার ভাবে প্রসারিত দুই হন্তে দুই-দুই পয়স। নিঃক্ষেপ করিব মাত্র তাহারা ধূলাচ্ছন্ন ও গলদঘৰ্ম্ম কলেবরে আর একটা তোড়ঙ্গের সন্ধানে, একদৌড়ে চলিয়া গেল। ইত্যবসরে আমার ‘ছোকরা, গাড়ীর কামরায় উপরিতন বেঞ্চের উপর আমার বিছানা পাতিয়া দিল। কাম্রার চারিটা শয্যাই অধিকৃত হইয়াছে। আমার নীচের শয্যাটি একজন পার্সি অধিকার করিয়াছে। আমার সম্মুখস্থ একটা জায়গায় একজন ইংরেজ পূৰ্ব্ব হইতেই দখল করিয়া বসিয়া আছে তাহার চুরোটের বাক্সটা খোলা, সে একটুকরা বরফ ভাঙ্গিল, এবং একটা রূপার গেলাস বাহির করিয়া তাহাতে হুইস্কি ঢালিল। এক গাদা তোড়ঙ্গ ও বাক্সে গাড়ীর কাম্রাট ভরিয়া গিয়াছে। এগুলা বোধ হয় তাহারই জিনিসপত্র। পরে কাম্রার ঠিক মাঝখানে একটা টেবিল খাড়া করিল। এই টেবিল ও তোড়ঙ্গগুলার মাঝে একটা কুকুর ঘুমাইতেছে। এই তোড়ঙ্গগুলা তুমি যে একটু সরাইয়া রাখিবে তাহার জে নাই। পরদিন প্রত্যুষে দুমদাম শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গিয় গেল,—চোখ মেলিয়া দেখি কি না,—কতকগুলা থলে, কতকগুলা খেলনার প্যাটরা, কতকগুলা অদ্ভূতধরণের বাক্স আমাদের গাড়ীতে চোরা-গোপ্তান চালান দিতেছে। সেই সঙ্গে কতকগুলা ঘৰ্ম্মাক্তগাত্ৰও উকি-ঝুকি মারিতেছে। একজনকে গাড়ীর ভিতরে ঠেলিয়া দিয়া, গাড়ীর দরজাটা ধড়াস করিয়া কে বন্ধ করিয়া দিল। লোকটি ভারতবাসী— তোড়ঙ্গাদির উপর দিয়া অতি কষ্টে প্রবেশ করিল। আবার সব নিস্তব্ধ। আর স্থান নাই—কি বেঞ্চের উপর, কি অন্যত্র, কোথাও তিলাৰ্দ্ধ স্থান নাই। এখন হইতে আমরা নিশ্চিন্ত । উপর হইতে আমি আমার সহযাত্রীদিগকে নিরীক্ষণ করিতেছি। হিন্দুটি এই গোলমালের মধ্যে প্রবেশ করিয়া আপনার জিনিসগুলি বেশ গুছাইয়। রাখিয়াছে। প্রথমে একটি লোহার বাক্স খুলিল-এটি লেখিবার বাক্স-আর একটি বাক্স খুলিল ;–তাহাতে চ্যাপটা “কৰ্ণেটের আকারে ভঁাজ করা এক তাড়া সবুজ পাতা রহিয়াছে—এটি পানের প্রবাসী । মাথার পাগড়ীর উপর বড় বড় তোড়ঙ্গ লইয়া, নগ্নকায় বাক্স। তারপর সাজসজ্জা আরম্ভ হইল। এই স্ট্রি মুখ, ও সমস্ত মাথা কামানে, কেবল চুড়াদেশে লম্বা পাৰু ধরা এক গোচ্ছা লম্বা চুলে গেরো বাধা.পাশিটির ইংরেঞ্জি পরিচ্ছদ-মাথায় ধুচনী টুপী নাই-ধুচনী-টুপিটা কংগ্রেস্ট্রে পরা হইবে। এই হিন্দু ও এই পার্শি—দুজনেই প্রধান। কংগ্রেস-ওয়ালা ; দশবৎসর পূৰ্ব্বে, লগুনে হিন্দু-প্রতিবাদে পক্ষ সমর্থন করিবার ভার এই হিন্দুটির উপর প্রদত্ত হয়। ইনি অত্যন্ত বহুভাষী। ইনি উকীল, জাতাংশে ব্রাহ্মণ। কে জানে কেন উনি প্রথমেই আমার সঙ্গে তত্ত্ববিদ্যা সম্বন্ধে কথা পাড়িলেন, খুব আলাদের সহিত স্পেনসারের কথা পাড়িলেন। স্পেনসারের উপর তার খুব ভক্তি। কিন্তু আ৷ি কংগ্রেসের কথা পড়িলাম। তিনি কংগ্রেসের সমস্ত বিষ। আমাকে বুঝাইয়া বলিলেন। তিনি একটু হাসিয়া বলিলেন; ---“না, আমরা বিদ্রোহীর দল নহি, আমরা মহারাণীর নিতান্ত অমুগত ভক্ত প্রজা ; কারণ, সব দিক বিবেচন৷ করিয়া দেখিলে, আমাদের আত্ম-শাসনের এখনও সময় হয় নাই ; আর যদি শুধু প্রভূ-পরিবর্তনের কথা হয়, তা ৷ হইলে রুস্ অপেক্ষ বরং আমরা ইংরেজকেই বেশী পছন্ন করিব।” এই কথা বলিয়া, তিনি তাহার সহকৰ্ম্ম পালীয় হস্তে একটা দেশ সংবাদপত্র দিলেন। উহাতে কংগ্রেসের কথা জ্বলন্ত ভাবে বর্ণিত হইয়াছে। এই প্রবন্ধের লেখক একজন মুসলমান। তিনি বলিলেন, “এই দেখ, লোকটা কতকগুলা জলন্ত চ্যাল কাঠ নিঃক্ষেপ করিয়া, আমাদের উপর দোষারোপ করিতেছে যে আমরাই চারিদিকে আগুন জালাইতেছি.কিন্তু এখন মুসলমানদের রাগ অনেকটা পড়িয়া গিয়াছে এবং তাদের বিদ্বেষের আর প্রতিধ্বনি হয় না"। পার্স ঐ সংবাদপত্র আমার হাতে দিলেন ; আরও আমাকে একটা চুরোট দান করিলেন। ইংরেজ, তাহার বেঞ্চের উপর নীরব ও গৰ্ব্বিতভাবে রহিয়াছেন ; এই কংগ্রেস-ওয়ালারা, এই বাক্সৰ্ব্বস্ব বক্তারা যাহা বলিতেছে, তাহা তাহার শুনিবার যোগ্য নহে ; তাহার ভাব দেখিা মনে হয় বাস্তবিকই তিনি যেন বিস্ময়ে নিমগ্ন-বিস্ময়ের আরও একটা কারণ এই যে, একজন “উচ্চতর জাতির’ লোক, একজন ফরাসী, এই সকল ঘুণিত লোকদের সহিত - - ৮ম ভাগ । ৩য় সংখ্যা । ] 碗 রাজকৰ্ম্মচারীর যাইতেছে, খৃষ্টধৰ্ম্ম-প্রচারকেরা বাইতেছে। ভোজনাগারে আবার সকলেই একত্র মিলিত হইল। মাদ্রাজ হইতে আগত কতকগুলি কংগ্রেসওয়ালার তি আমি একত্র প্রাতভোজন করিলাম। উহাদের কেপীন মস্তক গোলাকার ও তেল-চুকচুকে, দেহের গঠন পরিপাটী, মুখাবয়ব গোলগাল ও ভারী ভারী, প্রায় কৃষ্ণবর্ণ। প্তাহারা তাহাদের হিন্দু ভূতাদের নিকট লুকাইয়া আহার করিতেছেন। ভূত্যেরা যদি দেখিতে পায়, তাহার গোমাংস খাইতেছেন, তাহা হইলে ভয়ানক নিন্দ রটিবে ! আমাদের ট্রেণ উত্তরাভিমুখে উঠিতেছে, হাজা-পোড়া ভূমির উপর দিয়া চলিয়াছে—বুনো ময়ূর ও হরিণের পালকে ভাগাইয়া দিতেছে ; একে একে অনেক গুলি পুল গার হইয়া স্রোত-পথের বিস্তৃত বালুকাময় ভূমির উপর আদিয়া পড়িতেছে—এই স্রোতপথে স্থতার মত একটি সরু জলস্রোত প্রবাহিত। ষ্টেশনে ষ্টেশনে, একটা দড়ির পিছনে, শ্যে রেল-যাত্রীর দল, কখন পথ খুলিয়া দিবে তাহারই জন্য অপেক্ষা করিতেছে ; এই সব লোকদিগের নগ্ন জঙ্ঘা, শ্বশ্বশ্ৰ সযত্নে কুঞ্চিত কিংবা হাত-পাখার আকারে চারি দিকে বিস্তারিত ; মাথায়, সাদা, জর্দা, সবুজ রঙ্গের কাপড় শোভন ভাবে জড়াইয়া বাধা মুন্দর শিরোবেষ্টন। স্ত্রীলোকীিগের চিক্‌চিকে মসৃণ চুলের উপর, তাহাদের গোলাপী কিংবা বেগ্নী শাড়ীর কিয়দংশ টানিয়া আনা হইয়াছে গায়ে ও হাতে কাচের গহনা, নাকে একটি অলঙ্কার, কপাল— লাল ও সাদা রেখায় অঙ্কিত, কঁাকে একটি কচি শিশু. তীিয় দিনের সায়াহ্নে, দিগন্তদেশে গগনস্পর্শী হিমাচলের নীহারময় চূড়াসকল আমাকে দেখাইয়া দিল। রাত্রি দুইটার সময় সকলে চীৎকার করিয়া উঠিল “লাহোর” ! এই সময়ে মূলধারে বৃষ্টি আরম্ভ হইল। চীনের রাস্তার মত গভীর কর্দমময় রাস্তার উপর দাড়াইয়া অপেক্ষা করিতে লাগিলাম, আমার ভূতা গাড়ী ও হোটেলের সন্ধান করিতে লাগিল। সেই রাত্রে, সমস্ত হোটেলই লোকে পূর্ণ হইয়া গিয়াছে *অনেক কষ্টে আমি একটা শুইবার থাট্ট পাইলাম— জাহাতে গদি নাই লেপ কম্বল কিছুই নাই। খৃষ্টমাসের পূৰ্বরাত্রি। এই রাত্রিটা খুব আমার মনে থাকিবে। বাক্যালাপ করিতেছে.এই ট্রেণে কংগ্রেস-ওয়ালারা যাই | মিলিয়ের দূরতম পৰ্ব্বত পর্যন্ত—সকল স্থান হইতেই i_ ভারতের রাষ্ট্রীয় মহাসভা | >○〉 -്.-l.----്.......................-- .نبي مم শিঙ্গাধ্বনি শ্রত হইতেছিল...ইংরেজ রাজপুরুষ, রাজকৰ্ম্মচারী, শুল্ক আদায়ের লোক-সকলেই আসিয়াছে। ইংরেজ রমণীরা ‘বল’-নাচের পরিচ্ছদ সঙ্গে আনিয়াছে, ইংরেজ পুরুষেরা “স্মোকিং”-পরিচ্ছদ সঙ্গে আনিয়াছে। অস্থায়ী পার্থিব জীবনের ক্ষণিক মোহে মুগ্ধ হইয়া, উহার ছোটলাটের ‘বলে’র নিমন্ত্রণ গ্রহণ করিয়াছে, ডেপুটি কমিশনারের উদ্যান-মজলিসের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করিয়াছে, তাহার পরেই হয় ত বিজন বিষণ্ণ কাশ্মীরে কয়েকমাস যাপন করিবে। পায়রার কাকের মত অম্লানকাস্তি নবযুবতীরা দলে দলে আসিয়াছে। এই উৎসব-আমোদে যোগ দিবার জন্ত মুক্তপিঞ্জর মুগ্ধ বিহঙ্গশিশুর মত বালিকারাও একাকী আসিয়াছে। - তাহার পরদিন, একটা অপ্রত্যাশিত মনোমুগ্ধকর ঘটনা! আমার ঘরটি আলোকে ভরিয়া গিয়াছে, নিবিড় মেঘের পর্দাটি উত্তোলিত হইয়াছে। আমি এখন কোথায় আছি ?–খোলা ময়দানের মধ্যে। যে হোটেলে দৈবক্রমে । আমি আসিয়া পড়িয়াছিলাম তাহার সাদা পিলান-পথ | ক্রমশ ফুলের বাগানে পর্যবসিত হইয়াছে। ফুলের উপর । শিশিরবিন্দুগুলি ঝুলিতেছে। হিন্দু সহরটি এখান হইতে প্রায় একক্রোশ দূরে। - সাদাছিটোন নীল আকাশে, শিকারী পার্থীরা চক্রাকারে ঘুরিতেছে—টিয়ার বাক অনবরত কিচিড়মিচিড় করিতেছে...আর্দ্র ভূমির মেঠো-পথগুলি আমার জন্মভূমিকে স্মরণ করাইয়া দিতেছে । এই দুপ্রেক্ষ্য জলস্ত আলোক আমাকে মাতাল করিয়া তুলিয়াছে। দুইটা রাত্রে এই পান্থশালায় আসিয়া আমি যে বিষাদমেঘে আচ্ছন্ন হইয়াছিলাম সেই মেঘ এখন কাটিয়া গিয়াছে ; এই বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করিবার জন্ত, ঐ গোলাপী রঙ্গের ধ্বজ- , স্তম্ভটি নিকট হইতে দেখিবার জন্ত, শিশিরসিক্ত সাদা সাদা গাছের মধ্য হইতে বহির্গত ঐ গোলাপী বাড়ীগুলা দেখিবার জন্য আমি খুব ত্বরা করিতেছি।. কিন্তু রাস্তায় বড় কাদা, গাড়ীর চাকা নাভিদেশ পৰ্য্যস্তু কাদায় বসিয়া যাইতেছে। ময়লা পরিষ্কারের ভার স্বর্যের উপর দিয়া, শিকারী পার্থীদের উপর দিয়া ইংরেজরা বেশ নিশ্চিস্ত রহিয়াছে। ভ্রমণকারীর দল - Cookএর নিকটে ভ্রমণপথের সংবাদ লইতেছে—যে প্রাচ্য সহর এখান হইতে