পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩২ এক ক্রোশ দূরে তাহার কথা একবারও কেহ মনে করিতেছে না...সুন্দর একটি বাসস্থান স্থাপন করিবার জন্য মোগল সম্রাটের ঐ সহরটিকে সৰ্ব্বপ্রকার বিলাস বিভবে বিভূষিত করিয়াছিলেন। সেই মোগল সম্রাটের মৃত, এখন উহার সিংহদ্বার দিয়া বাদশাদিগের নগরযাত্রার জমকালো ঠাট আর বাহির হয় না। এবং এখনকার প্রভূরা এই সকল সুন্দর সিংহদ্বার দিয়া কদাচিৎ যাত্রা করেন। তাহারা এই দেশীয় লোকের কুষ্ঠাশ্রমে,—এই সকল সরু রাস্তায় যাইতে ভয় করেন, যেখানে পোকার মত লোক কিলবিল করিতেছে। এই সকল রাস্তা এক এক স্থানে যেন হঠাৎ উপরে চড়িয়া গিয়াছে, এবং কত ঘোরপাক করিয়া মাৰ্ব্বেলের দুর্গপ্রাসাদ পর্য্যস্ত, স্বর্ণ মস্জেদ পর্য্যস্ত, চিনেমাটর মস্জেদ পর্য্যন্ত চলিয়া গিয়াছে—রাস্তায় অসমান আকারের ঠাসা গোলাপী বাড়ীগুলা জলন্ত আলোকে পরিয়াত জালিকাটা গবাক্ষগুলা, নীলময়ূরের দ্বারা পরিষ্কৃত, রং করা, খোদিত জাফরির কাজ করা জানলা গুলা একটা চমৎকার দৃশু! এই সকল স্বক্ষ আবরণের অন্তরালে কত আগ্রহপূর্ণ জলন্ত নেত্র প্রচ্ছন্ন থাকে ! বাজারের ভিতর, —মুসলমান,শিখ, আফগানদের বহুমিশ্র জনতা—লাল পশমি ৰন্ত্রে উহাদের গাত্র আচ্ছাদিত, মাথায় উচু পাগড়ী। স্ত্রীলোকের তাম্র-কলস মাথায় বহিয়া লইয়া যাইতেছে ; কলসগুল সূৰ্য্যালোকে ঝকমক করিতেছে ; কোথাও বা দৈন্তস্থচক মলিন চীর বস্ত্র, কোথাও বা কুষ্ঠরোগীর জঘন্ত ক্ষত পটী ; স্বর্ণবর্ণ ধূলারাশি স্বৰ্য্যকিরণে ঝিকমিক্‌ করিতেছে.প্রাচ্য দেশের সমস্ত দৈন্ত, জঘন্ততা ও সমস্ত জঁাকজমক একত্র মিলিত হইয়াছে। বাদশাহী ভোজের খাদ্য সামগ্রীতেই বাজারের গুজরান চলিত। বাদশাহী ভোজের মত বহুমূল্য ও স্তোন্য স্বক্ষ রুচির ভোজ আর কোথাও দেখা যায় না। লাহোর ও আগ্রার ঐন্দ্রজালিক প্রাসাদের মধ্যে যাহারা মোগল বাদশাহদিগের উৎসবাদি প্রত্যক্ষ করিয়াছে, নিশ্চয়ই তাহাদের চোখ ঝলসিয়া গিয়াছে—চিরকালের মত ঝলসিয়া গিয়াছে.কি চমৎকার এই সকল জালিকাটা সাদা মাৰ্ব্বেলের জাফ্রি! একবার কল্পনা করিয়া দেখ, এই সকল দরবারদালান আগাগোড়া অসংখ্য শাসি-আয়নায় মণ্ডিত, খুদিয় প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ। ঘর-কাটা রত্বরাজির ছায় ঝিকমিক্‌ করিতেছে, তা চারিধারে নীলরঙ্গের লতাপাতায় নক্সা ও মাৰ্ব্বেলের পুঙ্গ রাজি, ও তাহা হইতে সাদা সাদা পুষ্পকেশর রাহির হইয়াছে। রাজদরবারের বিবিধ পোষাক কল্পনা করিয়া দেখ এৰ আলোকের ছটা কিরূপ অনন্তগুণে চারিদিকে প্রতিফলিত হইতেছে—ঠিকরাইয়া পড়িতেছে—তাহা কল্পনা করিয়া দেখ.সমস্তই চোখের সোহাগ, চোখের বিলাস, চোখের আরাম —শুধু তাহা নহে, দীপ্তিতে চোখ ঝলসিয়া যায়। উহা অতীতের কথা। নিৰ্ব্বাপিত দীপ্ত-গৌরবের কতকগুলি দেদীপ্যমান অবশেষ মাত্র ...ভবিষ্যৎ, ভাবী ভারত কংগ্রেসের ক্রোড়ে লালিত হইতেছে..সেই কংগ্রেসের f অধিবেশন খুব নিকটেই হইবে।

  • * * - - —“মেরি ক্রিসমাস, মেরি ক্রিসমাস, মিষ্টার ফ্রেঞ্চ,

ম্যান” --- এই শুভ কামনার শুভ বাণী কাশ্মীরী মিসিবাবাদের মুখ হইতে, গোলাপী ওষ্ঠাধর হইতে নিঃক্ষিপ্ত হইল। এই শুভ কামনা আমাদের আসল ব্যাপারটা স্মরণ করাইরা দিল। আজ ক্রিসমাস , পরদিন কংগ্রেসের অধিবেশন আরম্ভ হইবে সৰ্ব্বপ্রকার প্রতিকূলতা সত্বেও কিরূপে এই কংগ্রেস বৰ্দ্ধিত হইয়াছে তাহার ইতিহাস তোমাদের নিকট এইবার বিবৃত করিব। আমার সহভোজীদের মধ্যে কংগ্রেস সম্বন্ধে খুব কৌতু হল হুইয়াছে। ভোজন-টেবিলে, আমার পাশে যে ইংরাজট বসিয়াছিল সে আমাকে বলিল “উহাদের কেবলি কথা, কথাই সার”। দেশী কিছুই ইহাদের ভাল লাগে না...কংগ্রেসটা যে ইংরেজের কার্য্য একথা তাহারা স্বপ্নেও ভাবে না। কংগ্রেস, মেকলের মরণোত্তরজাত সন্তান। এই রাজনৈতিক পুরুষ আজ বাচিয়া থাকিলে একথা অস্বীকার করিতে পারিতেন না । যিনি সমসাময়িক ভারতের উপর একটা সুস্পষ্ট সুনিশ্চিত প্রভাব প্রকটিত করিয়াছিলেন, সেই | মেকলে আজ নিশ্চয়ই র্তাহার জাতভাইদের অন্ধ ও অযৌক্তিক প্রতিকূলতার প্রতিবাদী হইতেন। তিনি মনে করিয়াছিলেন, নিরবচ্ছিন্ন ইংরাজি শিক্ষার দ্বারা তিনি ভারতকে অতীতের পথ হইতে ছিনাইয়া আনিবেন। তিনি | দাড়াইয়াছে। ৩য় সংখ্যা । ] ছো দূরদৃষ্টির দ্বারা যাহা দেখিয়াছিলেন, এখন তাছা কাজে ঘটিয়াছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলেজে, মধ্যবিদ্যালয়ে যে বিলাতী শিক্ষা প্রদত্ত হয় তাহারই প্রভাবে একটি শিক্ষিত্ব উদারনৈতিক শ্রেণী গঠিত হইয়াছে। তাহারা বিলাতী ধরণে চিন্তা করে, বিলাতী ধরণে জীবন বারা নিৰ্বাহ করে। ইহারাই নবা ভারত ; কি করিয়া ভারতকে পৃথিবীর বর্তমান উন্নতির উপযোগী করিয়া লওয়া বায়, ইহাই নব্য ভারতের একমাত্র ধ্যান ও কল্পনা। কেরা ইংলণ্ডের ইতিহাস পাঠ করিয়াছে। কি করিয়া মাস্তে আস্তে পরিবর্তন হইয়া সেই স্বাভাবিক পরিবর্তন ক্রমে পালেমেণ্ট-পদ্ধতিতে পর্য্যবসিত হইল তাহ ঐ ইতিহাস পাঠেই জানা যায়। উহারা ফক্সের জালাময়ী বক্তৃতা পাঠ করিল, আবৃত্তি করিল, অমুকরণ করিল। উহার লঙ্ক, বেনথাম ও মিলের গ্রন্থ অধ্যয়ন করিতে লাগিল। কি বাগ্মী, কি ঐতিহাসিক, কি দার্শনিক—সকলেই উচদিগকে একইরূপ শিক্ষা প্রদান করিল। উহাদের মনে অজ্ঞাতপূৰ্ব্ব বৃহৎ কল্পনা সকল উদ্বোধিত হইল। কিন্তু যখন তাহারা চারিদিকে একবার তাকাইয়া দেখিল, তখন দেখিল কি ?—দেখিল এই সকল জলস্ত উচ্চভাবের কথাগুলা কেবল অধ্যাপকদিগের মুখের কথামাত্র—তাহা ছাড়া আর কিছুই নহে। এখন সামান্ত ইংরেজ রাজকৰ্ম্মচারী একজন মহারাজা অপেক্ষাও স্বেচ্ছাচারী প্রভু ; তাহার কোন আটক নাই ; বেঙ্ক বলেন, কৰ্ত্তব্যের আটকই তাহার একমাত্র আটক। এই আটকট একটু বেশীরকম মানসিক ! এই আটককে ইচ্ছামত উঠান যায়, নামানো যায়। নিমন্ত্ৰিতবর্গের ঠেলা সামলাইবার পক্ষে, এ আটকট একটু ভঙ্গুর। যে সকল আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্ত করিতে পারিবে না তাহ উদ্বোধিত করা অদূরদর্শীর কাজ। বিদ্যালয় হইতে প্রথম शांश्ञि श्हेग्नl, डेशाब्रटेनङिकङ ७५न ज५ळकांभक श्ब्र বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগণ এবং যাহারা সাহস করিয়া “কালাপানি” পার হয় তাহারা স্বকীয় অধ্যয়ন ও ভ্রমণ হইতে স্বাধীন চিন্তার একটা রুচি ও স্বাধীনতার একটা জলন্ত অনুরাগ আনিয়াছিল। আবার হিন্দুরা এই কথা বলে, বিলাতী শিক্ষাতেই ভারতের রাষ্ট্রীয় মহাসভা । প্রভাবশালী কৰ্ত্তারাই এই সমিতির সদস্ত। সব হয় নাই। বিলাতী শিক্ষা, কেবল কতকগুলি গভীর স্বাভাবিক ভাবকে জাগাইয়া তুলিয়াছে মাত্র। পৃথিবীর মধ্যে হিন্দুরাই সৰ্ব্বাপেক্ষা পার্লামেণ্ট-পদ্ধতিতে আসক্ত। Anstey s Sir Bartle Frerers aề TE | বলিয়াছেন যে, “প্রাচ্য ভূভাগই মূনিসিপ্যালিটির জনক ।” বস্তুত একথা খুবই সত্য যে ভারতের সমস্ত ছোটখাটাে বিষয় পালেমেটি পদ্ধতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। গ্রাণের কাজ, সমবেত গ্রামসমূহের কাজ একটা স্থায়ী সমিতির দ্বারা সম্পাদিত হয়। পরিবারবিশেষের ধনশালী ও পঞ্চায়ং নামে একটা অপূৰ্ব্ব প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে এমন সকল ৰিষয় সম্বন্ধে স্বাধীনভাবে বাদানুবাদ হয় যে সকল বিষয় আমাদের দেশে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত। প্রত্যেক গ্রামেই এইরূপ এক একটি প্রাচীন লোকের মণ্ডলী আছে। এই পঞ্চায়ৎ সভা জাতের বিষয়ে, সামাজিক বিষয়ে, ধৰ্ম্মের বিষয়ে, চরম নিম্পত্তি করিয়া থাকে। এবং শাস্তিরক্ষার এক প্রকার আদালৎ রূপে আপনাকে দাড় করাইয়া এই পঞ্চায়ং বাটোয়ারা ও সীমানা সরহর্দের সমস্ত গোলযোগ মীমাংস করিয়া দেয়। অতএব দেখ, ইহার অধিকার কত বিস্তৃত –সমাজসম্বন্ধীয় অধিকার, ধৰ্ম্মসম্বন্ধীয় অধিকার, বিচারসম্বন্ধীয় অধিকার। উহার কোন আপীল নাই। উহার সৰ্ব্বাপেক্ষা গুরুতর দ্বও—সমাজ হইতে বহিস্করণ। কেহ কেহ বলেন, এই সকল গ্রাম্য সভা এই সকল পঞ্চায়ং, ভাবী পালেমেন্টের বিস্তৃত ও পাক৷ বনিয়াদ হইতে পারে। .. কিন্তু সে যাহাই হউক, এই সকল স্থানীয় সভা হইতে বহু দূরে একটি রাষ্ট্রীয় সভা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। এমন কি ইহার কল্পনাটিও ইংরাজ অধিকারের পূৰ্ব্বে কাহারও মনে উদয় হইবার সম্ভাবনা ছিল না। রেল-পথ, টেলিগ্রাম দূরতম প্রদেশগুলিকেও নৈকট্য বন্ধনে আবদ্ধ করিয়াছে, Anstey যাতায়াতের সুগমতা বিধান করিয়াছে, বৃদ্ধ, ভারতের মনে । একতার ভাব উদ্বোধিত করিয়াছে। ইংরেজি, দেশের সাধারণ ভাষা হইয়া এই ঐক্য আরও সম্পূর্ণ করিয়া তুলিয়াছে। এখন দেখ দক্ষিণের তামিল, পশ্চিমের মারাঠা, উত্তরের বাঙ্গালী সকলে কেমন একত্র মিলিত হইয়াছে—পরম্পর-পরম্পরের >○○