পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>や、 বসিয়া আছি ;-পরম্পর সম্বন্ধে আমাদের সেই ঔদাসীন্ত, অবজ্ঞা, সেই বিরোধ আমাদিগকে যে একান্তই ঘুচাইতে হইবে সে কি কেবলমাত্র বিলাতী কাপড় ত্যাগ করিবার সুবিধা হইবে বলিয়া, সে কি কেবলমাত্র ইংরেজ কর্তৃপক্ষের নিকট নিজের শক্তি প্রচার করিবার উদ্দেশে ? এ নহিলে আমাদের ধৰ্ম্ম পীড়িত হইতেছে, আমাদের মনুষ্যত্ব সঙ্কুচিত হইতেছে ; এ নহিলে আমাদের বুদ্ধি সঙ্কীর্ণ হইবে, আমাদের জ্ঞানের বিকাশ হইবে না, আমাদের ছৰ্ব্বল চিত্ত শত শত অন্ধ সংস্কারের দ্বারা জড়িত হইয়া থাকিবে,—আমরা আমাদের অন্তর বাহিরের সমস্ত অধীনতার বন্ধন ছেদন করিয়া নিৰ্ভয়ে নিঃসঙ্কোচে বিশ্বসমাজের মধ্যে আমাদের মাথা তুলিতে পারিব না। সেই নির্ভীক নির্বাধ বিপুল মনুষ্যত্বের অধিকারী হইবার জন্তই আমাদিগকে পরস্পরের সঙ্গে পরম্পরকে ধৰ্ম্মবন্ধনে বঁাধিতে হইবে। ইহা ছাড়া মানুষ কোনো মতেই বড় হইতে পারে না, কোনোমতেই সতা হইতে পারে না। ভারতবর্ষে যে-কেহ আছে যে-কেহ আসিয়াছে সকলকে লইয়াই আমরা সম্পূর্ণ হইব ; ভারতবর্ষে বিশ্বমানবের একটি প্রকাও সমস্তার মীমাংসা হইবে । সে সমস্ত এই যে, পৃথিবীতে মানুষ বর্ণে ভাষায় স্বভাবে আচরণে ধৰ্ম্মে বিচিত্র ; নরদেবতা এই বিচিত্রকে লইয়াই বিরাট ; সেই বিচিত্রকে আমরা এই ভারতবর্ষের মন্দিরে একাঙ্গ করিয়া দেখিব। পার্থক্যকে নিৰ্ব্বাসিত বা বিলুপ্ত করিয়া নহে কিন্তু সৰ্ব্বত্র ব্রহ্মের উদার উপলব্ধি দ্বারা ; মানবের প্রতি সৰ্ব্বসহিষ্ণু পরম প্রেমের দ্বারা ; উচ্চ নীচ আত্মীয় পর সকলের সেবাতেই ভগবানের সেবা স্বীকার করিয়া। আর কিছু নহে শুভ চেষ্টার দ্বারা দেশকে জয় করিয়া যাহারা তোমাকে সন্দেহ করে তাহাদের সন্দেহকে জয় কর, যাহারা তোমার প্রতি বিদ্বেষ করে তাহদের বিদ্বেষকে পরাস্ত কর। রুদ্ধদ্বারে আঘাত কর, বারম্বার আঘাত কর ; কোনো নৈরাতে, কোনো আত্মাভিমানের ক্ষুণ্ণতায় ফিরিয়া যাইয়ো না ; মানুষের হৃদয় মানুষের হৃদয়কে চিরদিন কখনই প্রত্যাখ্যান করিতে পারে না। ভারতবর্যের আহবান আমাদের অন্তঃকরণকে স্পর্শ করিয়াছে।" সেষ্ট আহবান যে সংবাদ পত্রের ক্রুদ্ধ গর্জনের লও ! প্রবাসা | ৮ম ভাগ। মধ্যেই ধ্বনিত হইয়াছে বা হিংস্র উত্তেজনার মুথরতা। মধ্যেই তাহার যথার্থ প্রকাশ একথা আমরা স্বীকার করি। না কিন্তু সেই আহবান যে আমাদের অন্তরাত্মাকে উদ্বোধিত করিতেছে তাহ তখনই বুঝিতে পারি যখন দেখি আমর জাতি বর্ণ নিৰ্ব্বিচারে দুর্ভিক্ষকাতরের দ্বারে অন্নপাত্র বহন করিয়া লইয়া চলিয়াছি, যখন দেখি ভদ্রাভদ্র বিচার না করিয়া প্রবাসে সমাগত যাত্রীদের সহায়তার জন্য আমর বদ্ধপরিকর হইয়াছি, যথন দেখি রাজপুরুষদের নিৰ্ম্মম সনে ও প্রতিকূলতার মূপেও অত্যাচার-প্রতিরোধের প্রয়োজন কালে আমাদের যুবকদিগকে কোনো বিপদের সম্ভাবনা বাধা দিতেছে না। সেবায় আমাদের সঙ্কোচ নাই, কৰ্ত্তব্যে আমাদের ভয় ঘুচিয়া গিয়াছে—পরের সহায়তায় আমর উচ্চ নীচের বিচার বিস্তৃত হইয়াছি, এই যে স্বলক্ষণ দেখা দিয়াছে ইহা হইতে বুঝিয়াছি এবার আমাদের উপরে ৷ে আহবান আসিয়াছে তাহাতে সমস্ত সঙ্কীর্ণতার অন্তরাল হইতে আমাদিগকে বাহিরে আনিবে—ভারতবর্ষে এবার মানুষের দিকে মানুষের টান পড়িয়াছে। এবারে, যেখানে যাহার কোনে অভাব আছে তাহার পূরণ করিবার জন্ত আমাদিগকে যাইতে হইবে ; অন্ন ও স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিতরণের জন্ত আমাদিগকে নিভৃত পল্লীর প্রান্তে নিজের জীবন উৎসর্গ করিতে হইবে ; আমাদিগকে আর কেহই নিজের স্বাথ ও স্বচ্ছন্দতার মধ্যে ধরিয়া রাখিতে পারিবে না। বহুদিনের শুষ্কতা ও অনাবৃষ্টির পর বর্ষ যখন আসে তখন সে ঝড় লইয়া আসে—কিন্তু নববর্ষার সেই আরম্ভকালীন ঝড়টাই এই নূতন আবির্ভাবের সকলের চেয়ে বড় অঙ্গ না | তাহা স্থায়ীও হয় না। বিছাতের চাঞ্চল্য, বজের গর্জন এবং বায়ুর উন্মত্ততা আপনি শাস্ত হইয়া আসিবে,--তখন মেঘে মেঘে জোড়া লাগিয়া আকাশের পূৰ্ব্বপশ্চিম স্নিগ্ধতা আবৃত হইয়া যাইবে-চারিদিকে ধারা বর্ষণ হইয়া কৃষিতো পাত্রে জল ভরিয়া উঠিবে এবং ক্ষুধিতের ক্ষেত্রে আর আশা অঙ্কুরিত হইয়া দুইচক্ষু জুড়াইয় দিবে। মঙ্গলে পরিপূর্ণ সেই বিচিত্র সফলতার দিন বহুকা প্রতীক্ষার পরে আজ ভারতবর্ষে দেখা দিয়াছে এইকথা ; নিশ্চয় জানিয়া আমরা যেন আননে প্রস্তুত হই। কিসে? জন্য ? ঘর ছাড়িয়া মাঠের মধ্যে নামিবার জন্য, মাটি চর্ষিবা | ৩য় সংখ্যা। ] জন্ম, বীজ বুনিবার জন্ত—তাহার পরে সোনার ফসলে যখন লক্ষ্মীর আবির্ভাব হইবে তখন সেই লক্ষ্মীকে ঘরে আনিয়া নিত্যাৎসবের প্রতিষ্ঠা করিবার জষ্ঠ । স্ত্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঠাকুমার ঝুলি। \!. এই নামের একখানি উপকথার বহির ভূমিকায় কবি ঐরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিথিয়াছেন, তিনি (গ্রন্থকার) ঠাকুরআর মুখের কথাকে ছাপার অক্ষরে তুলিয়া পতিয়াছেন তবু তাহার পাতাগুলি প্রায় তেমনি সবুজ তেমনি তাজাই হিয়াছে। রূপকথার সেই বিশেষ ভাষা, বিশেষ রীতি, তাহার সেই প্রাচীন সরলতাটুকু তিনি যে এতটা দূর রক্ষা করিতে পারিয়াছেন, ইহাতে র্তাহার স্বঙ্গ রসবোধ ও ও স্বাভাবিক কলানৈপুণ্য প্রকাশ পাইয়াছে।’ এই ভূমিকা পড়িয়া উপকথার বহিখানির ভাষা দেখিতে কৌতুহল হয়। কেন না, প্রাচীন কালের ঠাকুরমাএর মুখের উপকথা অক্ষরে বসান। যেমন-তেমন কর্ম নয়। মুখে মুথে যে কথা যেমন শুনি, সে কথা তেমন বানান করিয়া অন্তের বোধগম্য করা অল্প নৈপুণ্যের পরিচয় নয়। স্থানভেদে ভাষার ইতর বিশেষ হয় ; স্থানভেদে উপকথার ভাষার প্রভেদ হয়। অন্তের, বিশেষতঃ সকল স্থানের বালক-বালিকাদের বোধগম্য হইবে, অথচ গ্রাম্যতা বা ভাখার দোষ থাকিবে না ; লেখার ভাষার বাধন পড়িবে, অথচ রস-ভংগ হইবে না ; এমন ভাষা-চালনা যে-সে লোকের কর্ম নয়। কাজটা এত কঠিন যে, শিশুদের নিমিত্ত হাসি-তামাসা, হাসি-খুসির যত বহি বাগলায় ছাপা হইয়াছে, তাহাদের কদাচিৎ এক আধ খানা নির্দোষ হইয়াছে। যিনি বুড়া হইয়াও ছেলে সাজিতে পারেন, যিনি ছোট ছেলেমেয়েদের জ্ঞান-পরিধি, প্রবৃত্তি-নিবৃত্তি মনোযোগ করিয়া দেখিয়াছেন, তিনি ব্যতীত অন্তে ছেলে-ভুলানা গল্প লিথিয়া সফল-কাম হইতে পারেন না। বোধ হয়, উপকথায় ছেলেকে শিখাইবার কিছু থাকে না। ছেলে উপকথা বুঝিতে পারিবে, উপকথার কল্পনায় নিজের কল্পনা জাগাইতে ঠাকুমার ঝুলি। ులి .----------- পরিবে, এবং সঙ্গে উপকথার উদ্দেশু। o এখানে আমি উপকথার আলোচনা না করিয়া ঠাকুরমার ঝুলির ভাষা বুঝিতে চেষ্টা করিতেছি। এই বহিতে বাগলা ভাষা শিখিবার প্রচুর উপাদান আছে। কিন্তু প্রথমে বহির নামেই খটকা লাগিতেছে। বহির সঙ্গে প্রচুর আনন্দ পাইক্টে-ইহাই মলাটে আছে, ঠাকুমার ঝুলি, ভিতরে আছে ঠাকুরমার । বুলি । ঠাকুম, কুমার বুঝি ; কিন্তু ঠাকুরমাএর না হইয়া ঠাকুরমার কেন হইল ? কোন কোন স্থানে মার, ঠাকুরমার পদ আছে বটে ; কিন্তু যাহার এরূপ সম্বন্ধ পদ শুনিতে পান না, তাহদের কানে মার, ঠাকুরমার পদ কটু শোনায়, অনাদর বুঝায়। কুলির ভিতরে দুই এক স্থানে মায়ের ভা মুর পদও আছে। সে । হউক, রূপকথা কি ? ইহা কি উপকথার গ্রাম্য ৰূপ কোন কোন স্থানে গ্রাম্য লোকের উইকে বলে রুই, আগু নামের লোককে ডাকে রাণ্ড। কিন্তু এই ৷ প্রমাণেও রূপকথা পাই না, পাই ৰূপকথা বহির নাম । বাগলার পকথা। আমরা ছেলেবেলায় গল্প ও উপ- | কথা শুনিতাম । | ‘নিবেদনে গ্রন্থকার লিথিয়াছেন, উপকথা শুনিতে । শুনিতে তাহার চোক বুজিয়া আসিত, “আমার মত । দুরন্ত শিশু, শান্ত হইয়া ঘুমাইয়া পড়িতাম।” “ম আমার । অফুরণ ৰূপকথা বলতেন, “আজ মনে হয়, আজ বরের । শিশু তেমন করিয়া জাগে না, তেমন করিয়া ঘুম পাড়ে । नl ।” নিবেদনে গ্রন্থকার এমন করিয়া কলম ছাড়িয়া দিয়াছেন । কেন ? কেবল এই খানেই চোক বুজে নাই, আর এক । স্থানেও (১৩৪ পৃ: ) বুজিয়াছে। লেখক অষ্ট কএকটা । পরেও অনাবশ্বক চন্দ্রবিন্দু দিয়াছেন। দুই তিন স্থানে পাই | উই । ‘হেঁটে কাটা উপরে কাটা-হেটে—অধোভাগে– । যেমন হেট-মাথা শুনি। ‘ঘোমটার স্বাড়ে' (১৯২ পৃ: ), - দৃষ্টির আঁড়ালে (১৩৩ পূঃ)। অাড় ও আড়াল শব্দের মূল সংস্থত অন্তরাল শৰে যদিও অস্থানসিকৰ আছে, স্বপন জুড়, জাড়াল শুনি না। সংস্কৃত অমুনাসিক 'শৰ মাত্রেই বাগল বুপান্তরে অমুনাসিক পা নাই।