পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

یک سط প্রবাসী ృఠిES জল নদীনালা দিয়া বাহির হইয়া যায়। কিছুদিন অনাবৃষ্টি হইলে, ক্ষেত্রের আলিতে যে জল আবদ্ধ থাকে তাহাও শুকাইয়া যায় । এই জন্য জলসেচন ব্যবস্থার প্রয়োজন । এই স্থানে যাহার প্রথম জঙ্গল কাটিয়া কৃষির জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়াছিল, তাহারা এই প্রাকৃতিক বিয়ের প্রতিবিধানের ব্যবস্থাও করিয়াছিল। সেচনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল সংরক্ষণ করিতে না পারিলে এতদঞ্চলে কৃষিকাৰ্য যে নিষ্ফল ও নিরর্থক হইবে, তাহা ইহারা যে ভাবে হৃদয়ংগম করিয়াছিল, অদ্যাপিও সর্বত্র তাহার প্রভূত নিদর্শন বতর্মান বহিয়াছে। বাধ ও পুষ্করিণীর অবস্থান ভূমির বন্ধুরতার উপর নির্ভর করে । এই সকল জলাশয়ে উচ্চভূমি হইতে নিম্নগামী বৃষ্টির জলকে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য সঞ্চয় ও সংরক্ষণ করা হয় । সুতরাং জলাশয়ের স্থান এমন কৌশলসহকারে নির্ণয় করা প্রয়োজন যাহাতে অল্পায়াসে বথেষ্ট পরিমাণ জল সংগৃহীত হয় এবং প্রয়োজনকালে অতি সামান্য পরিশ্রমেই জলাশয় হইতে কৃষিক্ষেত্রের সেচনকার্য সম্পন্ন হইতে পারে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক শিক্ষালাভ না করিয়াও এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রাদির সাহায্য ব্যতিরেকে, এই প্রকার স্থান নির্ণয়ে তাহাদের যে বিচক্ষণতা ও নিপুণতার পরিচয় পাওয়া যায়, তাহা বতর্মান যুগের শিক্ষিত এঞ্জিনিয়ারগণের বিস্ময় উদ্রেক করে । ধানই এই অঞ্চলের প্রধান কৃষি । বৃষ্টির অভাব হইলে, এই সকল জলাশয় হইতে ধানের জমিতে জলসেচন করা হইত। শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় না বলিলেই চলে, তখন জমিতে রস থাকে না । বাধা-পুষ্করিণীতে জল থাকিলে, তাহাদের সমীপবর্তী ক্ষেত্রে সেচনদ্বারা ইক্ষু, সরিষা, গম ইত্যাদি মূল্যবান রবিশস্য আবাদ হইত। অধিক দিনের কথা নহে, এই সকল স্থলে অনেক তাতির বাস ছিল । তাহাদের প্রস্তুত বস্ত্র বভূপরিমাণে বিদেশে রপ্তানি হইত। বীরভূম জেলার পুরাবৃত্ত হইতে জানা যায় যে, শ্ৰীনিকেতনের সমীপবর্তী গ্রামসমূহ বস্থশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল, এবং চীপ নামক এক জন ইংরাজ ব্যবসায়ী এই সকল বস্ত্র সংগ্ৰহ করিয়া বিদেশে চালান দিতেন। র্তাহার বাসগৃহের ভগ্নাবশেষ এখনও বতর্মান রহিয়াছে। বস্ত্রবয়নের জন্য যে তুলার প্রয়োজন হইত, তাহী এই জেলার ক্ষেত্রেই জন্মিত। জলসেচনের ব্যবস্থা ব্যতীত তুলার চাষ সম্ভব নহে। কেবল কৃষির উন্নতি বিধান নহে, এই সকল জলাশয়ের স্বারা পল্লীবাসিগণ নানা প্রকারে উপকৃত হইত। যখন এই সকল জলাশয় পরিপূর্ণ ছিল, তখন স্বানপানাদির জন্য নিত্যব্যবহার্য জলের অভাব হইত না । জলাশয়সমূহের অবনতির সহিত কেবল যে অন্নাভাব ঘটিয়াছে তাহা নহে, স্বাস্থ্যেরও অবনতি হইয়াছে। কুষ্ঠরোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মুইর জলাভাবকে এই রোগের বিস্তৃতির অন্যতম কারণ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন । যত দিন গ্রামে প্রাণ ছিল, পল্লীবাসীদের মধ্যে একত। ও উৎসাহের অভাব ঘটে নাই, তত দিন এই সকল জলাশয়ের প্রয়োজনমত সংস্কার হইত। কালক্রমে সেক্ট জীবনীশক্তির অভাব হইল। দ্বেষহিংসা, কলহ, ক্ষুদ্র স্বার্থপরতা আত্মপ্রকাশ করিল । তথন গ্রামের প্রাণস্বরূপ, কুযককুলের স্বথ ও সমৃদ্ধির ভিত্তিস্থানীয় এই সকল জলাশয়ের প্রতি মনোযোগ রহিল না, সংস্কারের যথোচিত ব্যবস্থা হইল না । সকল জলাশয়েরই পঙ্কোদ্ধার করা প্রয়োজন হয় । না করিলে, জলাশয় অব্যবহার্য হইয়া যায়। যে সকল বাধ-পুষ্করিণী সেচনের জন্য নিমিত হয়, তাহ দ্রুতগতিতে মজিয়া যায়। বর্ষার জলের সহিত উচ্চভূমি হইতে প্রচুর বালি, মাটি ও প্রস্তরখণ্ড আসিয়া জলাশয় ভরাট হইতে থাকে। বযার জলে পাড় ধুইয়া যায়। সেচনের জন্য পাড় কাটিয়া যে প্রণালী প্রস্তুত করা হয়, তাহ সময়মত বন্ধ করা হয় না। এই সকল কারণে বাধ ও পুষ্করিণী নষ্ট হইয়া যায় । এই সকল জলাশয়ের অবনতিতে যে অবস্থার উদ্ভব হইয়াছে, তাহাতে বাকুড়া, বীরভূমের সহিত শস্যহানি ও দুর্ভিক্ষের এক প্রকার নিত্যসম্বন্ধ স্থাপিত হইয়াছে বলিলেই চলে। যখন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হয়, বা উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টি হয় না, তখন ভিক্ষাপাত্র হাতে লইয়া বাহির হওয়া ব্যতীত আর উপায় থাকে না।