পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক -গায়ের অংশটা দেখা যায় না চামড়ার সাজের দরুন । জামার হাত হাতের সঙ্গে সম্পূর্ণ লেগে থাকে। এরা মুখে এদেশী এক রকম ঈষৎ হলদে রং মাথে, ভ্র কালো রঙে ভাল ক’রে অঁাকে, ঠোটে অল্প লাল রং লাগায়, দুই ভ্রর মাঝখানে দেয় সাদা রঙের মোট একটি টিপ । এদেশে সব মেয়ের ভিতরেই কানের গয়না পরার রীতি আছে । গয়নাগুলি সাধারণ বেশ মোটা নলের মত দেখতে, দু-তিন ইঞ্চি লম্বা। অবস্থাপন্ন লোকেরা সোনার তৈরি ব্যবহার করে, গরিবরা করে শুক্নো সাদা নারকেল-পাতার তৈরি নলের মত । এই লাচিয়েদের কানের ফুটোতে সোনার কাজ করা নল থাকে, দেখতে সেটি বেশ সুন্দর । এই তিনটি বালিকার সাজের মধ্যে মাঝেরটির সাজ অপেক্ষাকৃত সাধারণ | এই মেয়েটি নাচের সুত্রধার। একে এরা বলে “চনডং’ । গামেলান-বাজনার সঙ্গে এ খালি-হাতে একটি উদ্বোধন-নৃত্য করে। তার পর কিছু দূরে মাটি থেকে এদেশী প্রথায় নক্সাকাটা ও কাপড়ে তৈরি দুটি জাপানী হাতপাথা তুলে নেয়। ইতিমধ্যে বাকী দুটি মেয়ে নাচ আরম্ভ করে । একসঙ্গে নাচতে নাচতে তারা এগিয়ে এসে দুটি পাথ! দু-জনে অপর বালিকার দু-হাত থেকে তুলে নেয় । ( চিত্র দ্রষ্টব্য, পৃ. ৯৬১ ) এ দেশের মেয়েদের নাচে দাড়াবার একটা বিশেষ ভঙ্গী আছে যা ভারতে বা ব্ৰহ্মদেশে কোথাও দেখি নি। এদের দাড়াবার ভঙ্গ অৰ্দ্ধেকটা হাটু মুড়ে এবং যতটা সম্ভব পিঠের মেরুদণ্ড বেঁকিয়ে । এই ভাবেই তাদের সব সময় নাচতে হয়। একেবারে পা বা শরীর সোজা ক’রে নাচতে কখনও কোথাও দেখি নি। কটিদেশ থেকে দেহ ঈষৎ সামনের দিকে ঝুকে থাকে। পাখা-হাতে এই মেয়ে দুটি নাচতে স্বরু করলে, একই নিয়মে এক পদ্ধতিতে। প্রথম মেয়েটি কিছুক্ষণ অন্য দুটির সঙ্গে নাচবার পর বিদায় নেয়। এ দুটি মেয়ে পাথা-হাতে যত প্রকারে সম্ভব ঘুরে এপাশে-ওপাশে দ্রুত পদক্ষেপে নেচে যায় । এই নাচ পৰ্য্যস্ত উদ্বোধন-নৃত্য চলতে থাকে। এর পরে স্বরু হয় গল্পের যেখানে, যে-গ্রামের দলেরই নাচ দেখেছি, সেখানেই লক্ষ্য করেছি দুটি মেয়ের `O অংশ | বলীদ্বীপের লেগং নৃত্য > নাচের মিল এত চমৎকার যে মুখের পার্থক্য না থাকলে হয়ত মনে এক বার সন্দেহ হ’ত যে একই নাচিয়ে দুই হয়ে নাচছে, শিক্ষাদানের পদ্ধতি এমনই নিখুং । দুটি মেয়েই গল্পের রাজা ও রাজকুমারী সাজে ; নাচের পদ্ধতির কোন বিশেষ পার্থক্য হয় না, এবং এবারে অভিনয়ের দিকেই ঝোক দেয় বেশী । নৃত্যাভিনয় আরম্ভ হয় রাজা লাসেমের রাজকুমারীর কাছ থেকে বিদায় নেবার অভিনয় থেকে । রাজকুমারী বিশেষ উৎসাহ না দেখিয়ে বিদায় নেয় রঙ্গভূমি থেকে ও গামেলান-দলের মধ্যে বিশ্রাম নেয় । এর পরে আসে প্রথম মেয়েটি, চামড়ায় আঁকা দুটি পাখীর পাখা হাতে নিয়ে । এই হচ্ছে গল্পের দাড়কাক । পার্থীর পাখা হাতে নাচটি বিশেষ চিত্তাকর্ষক | দেন।পাশার শহরের পাশের গ্রামের দলের “রেনডি” নামে একটি ছেলে এই পার্থীর নাচ করে অতি চমৎকার ( চিত্র দ্রষ্টব্য )। মাটিতে হাটু মুড়ে পা পিছনে দিয়ে বসে, লাফিয়ে লাফিয়ে ওঠে । দুই হাতে পার্থীর মত পাথা ঝাপটে যা নাচ দেখায় তা রীতিমত দুঃসাধ্য। এই পার্থীটি রাজাকে আক্রমণ ক’রে পাথার ঝাপটায়ু রাজাকে অস্থির ক’রে তোলে, রাজ; অস্ত্রের দ্বারা পার্থীর সঙ্গে যুদ্ধ করে, হাতের পাখা তখন হয় রাজার তলোয়ার । পার্থীর মৃত্যু আর দর্শককে দেখানো হয় না, পাখী পলায়ন করে। এইখানে নৃত্যাভিনয়ের শেষ । গল্পটিকে দুই ভাগ ক’রে নাচের মধ্য দিয়ে তা বর্ণনা করে। গল্পের সমস্ত ঘটনা, বর্ণনা ও কবিত্ব শ্রোতাদের কল্পনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। এক বৃদ্ধ কথক থাকে গামেলান-সঙ্গীতের দলে, তার কাজ হ’ল আগাগোড়া গল্পটি নানা প্রকার কবিত্বপূর্ণ কথার দ্বারা প্রকাশ করা। এই কারণেই কখকের কথা ও নাচ উভয়ে মিলিয়ে না দেখলে এ নৃত্যাভিনয়ের ব্যাপার বোঝা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। এখানে রাজার সাজ ও রাণীর সাজে কোন পার্থক্য নেই, পার্থীর সাজেও নেই, কেবল হাতের এটি পাথা ছাড়া । এ নাচের কোন পর্দা নেই, আড়ালের দরকার ও এরা বোধ করে না । এটি নৃত্যাভিনয় ব’লে স্বভাবতই মনে হ’তে