পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ஒர প্রবাসী צ08אג পারে যে, কথক গানের স্বরে সব ব’লে বালির হিন্দুদের একটা গুণ, এরা নূতন কিছু গ্রহণ যাচ্ছে। আসলে কথক সাধারণ ভাবে উচ্চকণ্ঠে করতে কখনও নারাজ নয়। নৃত্যের মধ্যে সে মনোভাবের বলে যায় যাতে দর্শক সব শুনতে পায়। এই কথকই প্রকাশ বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করেছি। গ্রামের যার নাচ ঠিক অভিনেতাদের মত নানা প্রকার স্বরে প্রত্যেক অভিনেতার কথা ব’লে যাচ্ছে । যেখানে করুণ সেখানে সে নিজের গলায়ও সে কোমলতা আনতে চেষ্টা করে, এই রকম ভাবে বিভিন্ন ভাব কণ্ঠস্বরে প্রকাশের চেষ্টা করে। এদেশের অন্যান্ত নৃত্যাভিনয়ে অভিনেতারা নিজেরাই গান গায়, কথা বলে, এমন কি প্রাচীন রামায়ণ-মহাভারতের গল্পেও তাই, কিন্তু এই নাচে সে-রকম হয় না । এখানে উল্লেখ করতে পারি যে, বালির কণ্ঠসঙ্গীত খুব ভাল মনে হয় নি। এদের নৃত্যাভিনয়ের গানগুলি ঠিক যেন কথা বলে যায় একই স্বরে, কোন পরিবর্তন নেই। আমাদের দেশের গ্রামের মেয়েদের বা পূজারীদের পাচলি পড়ার মত। এ দেশে মেয়েদের মধ্যে সাধারণতঃ অঙ্গাবরণ ব্যবহারের রীতি বহুপ্রচলিত না হ’লেও, নৃত্যের সময় এরা এক-এক নাচে এক-এক রকমের অঙ্গাবরণ ব্যবহার করে । গান নিয়ে চর্চা করে তারা প্রায় সকলেই সাধারণ চাষী বা মজুরশ্রেণীর লোক, অথচ সৰ্ব্বদা তারা ভাবছে কি ক’রে তাদের নাচ ও বাজনায় নূতনত্ব সঞ্চার করতে পারে। তাদের এই চেষ্টায় সজীব শিল্পী-মনের পরিচয় স্বম্পষ্ট। তারই একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে আলোচনা শেষ করি। দশ-বারো বৎসর হ’ল এদেশে সম্পূর্ণ নূতন পদ্ধতির একটি নাচের প্রচলন হয়েছে, তাকে বলে এর “ফবিয়ার” । এ নাচের প্রবত্তক একটি গ্রাম্য চাষীর ছেলে । আজকাল সৰ্ব্বত্র এ নাচের বিশেষ চলন হয়েছে। দেশী-বিদেশী সকলের কাছেই এই নাচ প্রশংসা লাভ করেছে । এই অশিক্ষিত বালক যে-নৃত্যের রচনা করেছে তাতে তাকে অনায়াসে এক জন বড়দরের শিল্পী বলা যেতে পারে । দেনপাশার দার্জিলিঙে শ্ৰীধীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানাল খুলিয়া আছি, কুয়াশায় চারিদিক ছাওয়া, স্বমুখের গাছপাল! সাদা হয়ে গেছে কুয়াশায়, মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে, বহে আসে কন্‌কনে হাওয়া, ঘরবাড়ী মুছে গেছে, ঢেকে গেছে ঘন আবছায় । শীতের রাত্রির মত ঘনাইছে অলস আবেশ, দিনের দুপুরবেলা বাষ্পমাঝে আপন হারায়, চেনা সে পৃথিবী নহে, অপরূপ স্বপনের দেশ, এ কোন নূতন রাজ্য, ঘিরিয়াছে ছায়ার মায়ায় । কুয়াশা সরিয়া যায়, ঘরবাড়ী ছবির মতন, উচু নীচু পাহাড়ের কতদূর সোপানের মালা, ফুল-পাত, মেঘমালা ছবি অঁাকে শতেক বরণ, প্রকৃতি সাজায় নিতি অপরূপ স্বযমার ডাল । কত উচু ঢেউ জাগে, কত নীচে ঢেউ ভেঙে যায়, আকাশের গায়ে হাসে পাথরের কঠিন সাগর, তুষার-গিরির শির রূপালি মেঘেতে মিশে যায়, আবার কুয়াশা এসে ঘিরে ফেলে দিকৃদিগন্তর।