পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক هو কিন্তু উহা স্থাপিত হইয়াছিল প্রয়াগের কয়েক জন নাগরিকের উদ্যোগে । গত শতাব্দীতে আমি যখন এলাহাবাদে চাকরি করিতাম, তখন ( বৰ্ত্তমানে বাঈ-কবাগ পাড়ার অধিবাসী ) অধ্যাপক স্বরেন্দ্রনাথ দেবের সৌজন্যে মিওর কলেজের একটি সচিত্র ইতিহাস দেখিয়াছিলাম। তাহা এখন অপ্রাপ্য বা দুষ্প্রাপ্য। যত দূর মনে পড়ে, তাহাতে দেখিয়াছিলাম উক্ত কলেজ স্থাপনে প্রধান উদ্যোগী ছিলেন বাঙালী রামেশ্বর চৌধুরী এবং ( যোদ্ধা মুন্সেফ’ উপনামে পরিচিত) প্যারীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। ইহাদের অন্যবিধ কৃতিত্বও ছিল । তাহা জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের “বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী” পুস্তকে লিথিত আছে। তৃতীয় যে বাঙালীর নাম লরিতে চাই, তিনি চিন্তামণি ঘোষ। তিনি এলাহাবাদে বৃহত্তম এবং যুক্তপ্রদেশে অন্যতম বৃহত্তম ইণ্ডিয়ান প্রেস নামক বেসরকারী ছাপাখানা ও পুস্তক প্রকাশালয়ের স্থাপনকর্তা হিসাবে পৌর সন্মান পাইবার অধিকারী । কিন্তু যদি কেহ মনে করেন যে, তদ্বারা তাহার কেবল ব্যক্তিগত সুবিধা হইয়াছে—যদিও তাহা সত্য নহে, সেই জন্য তাহার অন্য দুটি জনহিতকর কার্য্যের উল্লেখ আবশ্বক। তিনি সৰ্ব্বপ্রথম আধুনিক উচ্চ শ্রেণীর হিন্দী মাসিক পত্রিক “সরস্বতী” স্থাপিত করেন । বিখ্যাত হিন্দী লেখক পরলোকগত পণ্ডিত মহাবীর প্রসাদ দ্বিবেদীকে তিনি উহার সম্পাদক নিয়োগ করেন । দ্বিবেদীজীর সম্পাদকতাকালে উহা সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ হিনী মাসিক পত্রিক ছিল । চিস্তামণিবাবু কাশীর নাগরী-প্রচারিণী সভার সাহিত্যিকদিগের দ্বারা সম্পাদিত তুলসীক্লত রামায়ণের প্রথম প্রামাণিক সংস্করণ বহু সহস্র মুদ্রা ব্যয়ে প্রকাশ করেন। কাশীনরেশ ঐ রামায়ণের পুথি লক্ষাধিক মুদ্রা ব্যয়ে যে-সকল চিত্রে অলঙ্কত করিয়াছিলেন, চিন্তামণিবাবু তাহার অনেকগুলির প্রতিলিপি ইণ্ডিয়ান প্রেসের সংস্করণে দিয়াছিলেন । উপরে উদ্ধৃত শেষ প্রস্তাবটিতে প্রয়াগকে র্যাহাদের “জননী” বলা হইয়াছে, তাহাদের অন্ততঃ অধিকাংশের জন্ম প্রয়াগে হয় নাই । অবশু তাহাতে কিছু আসিয়া যায় না । শ্রীশচন্দ্র বসু ও র্তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা বামনদাস বম্বর জন্ম ও শিক্ষা হয় লাহোরে। প্রমদাচরণের জন্ম হয় বালী বিবিধ প্রসঙ্গ—লিখিল-ভারত বাংলাভাষা ও সাহিত্য-প্রচার সমিত্তি >>6. উত্তরপাড়া বা জনাইয়ে । তিনি বাংলা দেশেই শিক্ষালাভ করিয়াছিলেন ও আনন্দমোহন বসু মহাশয়ের সহপাঠী ছিলেন । ইত্যাদি । যুক্তপ্রদেশে বাঙালী ও অবাঙালীদের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চ বৃদ্ধির নিমিত্ত উপায় সুচিত করিয়া একটি প্রস্তাব অধ্যাপক অমিয়চরণ বন্দোপাধ্যায় উপস্থাপিত করেন। তাহাও সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এই প্রস্তাবে ইহাও বলা হয়, যে, নিখিল-ভারতীয় কোন সাধারণ ভাষা নির্বাচনের সময় ইহা নহে ; সমুদয় প্রদেশের প্রতিনিধিগণের মধ্যে আলোচনা ও বিচারের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কৰ্ত্তব্য ; কিন্তু যদি কোন একটি ভাষাকে নিখিল-ভারতীয় ভাষা করিতেই হয়, তাহ হইলে ংলাকেই নির্বাচন করা উচিত, যেহেতু ইত বঙ্কিমচন্দ্র রবীন্দ্রনাথ প্রভৃতি সাহিত্যিকদিগের দ্বারা সমৃদ্ধ হইয়াছে। “নিখিল-ভারত বাংলাভাষা ও সাহিত্য প্রচার সমিতি” গত ১লা আশ্বিন বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদ মন্দিরে এই সমিতির একটি অধিবেশন হয়। ঐযুক্ত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ইহার সভাপতি । সভায় গৃহীত প্রস্তাবগুলির মধ্যে নীচে কয়েকটি মুদ্রিত হইল । সাধারণ সভায় গৃহীত প্রস্তাবগুলির প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ, বঙ্গে ও বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালা ভাষার শ্রবৃদ্ধি ও প্রসারের জন্য এবং বাঙ্গাল। ভাষার রাষ্ট্রভাষা হইবার দাবী সমর্থনের জন্য সংবাদপত্রে আন্দোলনের ব্যবস্থা করা হউক । ভারতের বিভিন্ন সাহিত্য সঙ্ঘ ও অম্বষ্ঠানগুলিকে এই আন্দোলনে সাহায্য করিবার জন্য অমরোধ করা হউক । বাঙ্গালী ভাষায় ইংরেজী ও বিভিন্ন বিজাতীয় ভাষার শব্দের প্রতিশব্দ প্রস্তুত ও সংগ্ৰত করিয়া একটি প্রামাণিক অভিধান প্রস্তুত করিবার চেষ্টা করা হউক । কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা-সমিতিকে এই বিষয়ে পরামর্শ প্রদান ও সাহাষা কপ্লিভে অনুরোধ করা হউক । (ক) বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিবদের কর্তৃপক্ষকে এই প্রকার অভিধান সঙ্কলনের ভার গ্রহণ করিবার জন্য অনুরোধ করা হউক । দেবনাগরী, মহারাষ্ট্রীয়, গুজরাট ও তামিল অক্ষরে বাঙ্গালার বর্ণপরিচয় পুস্তক মুদ্রিত করিবার ব্যবস্থা করা হউক । অ-বাঙ্গালীদিগের বাঙ্গালা ভাষার সহিত পরিচয় ও র্তাহাদের মধ্যে বাঙ্গালা ভাষার প্রসার বৃদ্ধির জন্য ইত। একান্ত প্রয়োজন ।