পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২০ প্রবাসী OH8ෂ් বিবাহকে যে হিন্দু খ্ৰীষ্টিয়ান প্রভৃতি ধৰ্ম্মে সংস্কার বলা হইয়া থাকে, তাহাকে তিনি মানুষের দুর্বলতার প্রতি কৃপা প্রদর্শন মনে করেন। ব্রহ্মচৰ্য্য অর্থে তিনি চিরকৌমায্য বুঝেন। এ বিষয়ে তাহার মত চিরকুমার সন্ন্যাসীদিগের মতন । তিনি বর্তমান ভারতে অস্পৃশ্যতাদূরীকরণের নিমিত্ত সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক আগ্ৰহান্বিত ও সচেষ্ট—যদিও তিনি এই কু-সংস্কার ও কুপ্রথা দূরীকরণের চেষ্টা কংগ্রেসের কৃত্য-তালিকার মধ্যে সন্নিবিষ্ট করেন পুণা ও বোম্বাইয়ের ব্রাহ্মধৰ্ম্মপ্রচারক বিঠলরাম শিন্দের স্বচনায় । গান্ধীজী কুটারশিল্প-বিশেষত: চরকায় স্থত কাটা— প্রচলন জন্য সর্বাপেক্ষা অধিক চেষ্টা করিয়াছেন। খাদি প্রচলন দ্বারা অনেকের জীবনযাত্রাপ্রণালী অনাড়ম্বর ও সরল হইয়াছে। চরকায় স্থত কাটা সৰ্ব্বত্র সকল শ্রেণীর মধ্যে—বিশেষতঃ কৃষিজীবীদের মধ্যে—প্রচলিত হইলে দেশের অর্থনৈতিক সাহায্য ছাড়া অনলসতা বুদ্ধিও হইতে পারে। তাহা খুব বড় নৈতিক লাভ। ভারতীয় রাষ্ট্রনীতিক্ষেত্রে মহাত্মাজীর দ্বারা সকলের চেয়ে বড় কাজ এই হইয়াছে যে, দেশে বিস্তর লোকের মনে ভারতবর্ষের স্বাধীন হওয়ার সম্ভাবনায় বিশ্বাস জন্মিয়াছে এবং স্বাধীনতা লাভের প্রবল আকাঙ্ক্ষা ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাও বদ্ধমূল হইয়াছে। আগে লোকে মনে করিত, সশস্ত্র বিদ্রোহ ও সংগ্রাম ভিন্ন ভারতবর্ষ স্বাধীন হইতে পারিবে না। কিন্তু এরূপ বিশ্বাসবাণ প্রায় সকলেই মনে করিত, এরূপ বিদ্রোহের কোন উপায় নাই। গান্ধীজীর সত্যা গ্ৰহ-প্রচারে ও সত্যাগ্রহ-অনুষ্ঠানে লোকের মনে বিশ্বাস জন্মিয়াছে যে, অহিংস উপায়ে ভারতবর্ষ স্বাধীন হইতে পারে । ভারতীয় মহাজাতির মনের উপর যে নৈরাশ্যের গুরুভার চাপিয়া বসিয়াছিল, এইরূপ বিশ্বাসের উদ্রেক হওয়ায় তাহ আপস্থত হইয়াছে এবং অবসাদের পরিবর্তে উৎসাহ ও উদ্যমের আবির্ভাব হইয়াছে । মহাজাতি নিজের শক্তি আবিষ্কার করিতেছে। মহাত্মাঙ্গীর কয়েকটি মত যেরূপ বুঝি, উপরে বিনা সমালোচনায় তাহা বিবৃত করিলাম। কংগ্রেসের দাবীতে লর্ড স্নেলের গুরুত্ব আরোপ না-করিবার কারণ পালেমেণ্টের লর্ড-সভায় লর্ড স্নেল বলিয়াছেন, কংগ্রেস ব্রিটিশ গবন্মেণ্টকে ভারতবর্ষ সম্বন্ধে যে রাজনৈতিক ঘোষণা করিতে অনুরোধ করিয়াছেন, তাহাতে ব্রিটেন যেন বিশেষ গুরুত্ব আরোপ না করে । তন্ত্বারা মোলায়েম ভাষায় ইহাই সুচিত হইয়াছে যে, তাহ উপেক্ষণীয় বিবেচনা করিলেও ক্ষতি নাই । লর্ড স্নেলের এরূপ ধারণার একটা কারণ অকুমান করা যাইতে পারে। ভারতবর্ষের সেনাদলের উপর ভারতীয় ব্যবস্থাপক সভার বিন্দুমাত্রও ক্ষমতা নাই। তাহারা ইহার এক জন সৈন্তও বাড়াইতে কমাইতে পারেন না । সৈন্যদিগকে কোথায় রাখা বা পাঠান হইবে, কোথায় যুদ্ধ ঘোষিত হইবে বা হইবে না, এ রকম বিযয়েও,ব্যবস্থাপক সভার কিছু বলিবার অধিকার নাই। সৈন্যদলে নূতন লোক ভৰ্ত্তি করিতে সাক্ষাৎ বা পরোক্ষ ভাবে বাধাদান দণ্ডনীয় বে-আইনী কাজ ; সুতরাং ব্যাপকভাবে সেরূপ কাজ হইতে পারে না। সিপাহীদিগকে সৈন্যদল ত্যাগ করিতে বা সেনাপতিদের ও নায়কদের হুকুম তামিল না করিতে সাক্ষাৎ বা পরোক্ষ ভাবে প্ররোচিত করা ও দণ্ডনীয় বে-আইনী কাজ । তাহাও ব্যাপকভাবে হইতে পারে না । সৈন্যদলের জন্য যে ব্যয়ের বরাদ হয়, সে-বিষয়ে ব্যবস্থাপক সভার সদস্যেরা বক্তৃতা করিতে পারেন বটে, কিন্তু ভোট দ্বারা সেই বরাদ এক পয়সাও কমাইবার অধিকার ও ক্ষমতা তাহাদের নাই। নূতন ট্যাক্স বসানর বা পুরাতন ট্যাক্সের হার বাড়ানর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাপক সভার সদস্তের। অমত করিতে পারেন বটে, কিন্তু বড়লাট সার্টিফিকেট দ্বারা তাহাদের সে অমত ব্যর্থ করিতে পারেন । অতএব, কংগ্রেস সহযোগিতা করুন বা না করুন, সৈন্যদল দ্বারা যাহা কিছু কাজ ব্রিটিশ গবন্মেটি করাইতে চান, তাহ করাইতে গবন্মেণ্ট পারিবেন। কংগ্রেস সহযোগিতা করিলে অতিরিক্ত সুবিধা কিছু হইবে বটে, কিন্তু লর্ড স্নেল বোধ হয় মনে করেন যে, তাহা না হইলেও চলিবে । প্রাদেশিক কংগ্রেসী মন্ত্রীদের পদত্যাগ ঘটিলেও