পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২২ প্রবাসী ১৩৪৬ বিভাগে ও দিকে সময়সীভূত উন্নতি ও অগ্রগতির আদর্শ স্বয়ং উপলব্ধি করিয়া তাহা নিজের রচনা ও আচরিত নানা কার্য্য দ্বারা জনসমাজের গোচর করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। এই সমুদয় দিকের উন্নতি ও অগ্ৰগতি পরস্পরসাপেক্ষ এবং পরস্পরের সহিত সম্পর্কযুক্ত। ধৰ্ম্ম তাহার অন্তজীবনের, এবং বহির্জীবনের কার্য্যাবলীর, নিয়ামক ছিল। বিশ্বের বিধান অনুসারে সত্য ও ন্যায়ের জয় হইবেই এইরূপ বিশ্বাস থাকায় তিনি বহু বাধা উৎপীড়ন ও নিন্দ সত্বেও নিজের সংকল্পে দৃঢ় থাকিয় কাজ করিতে পারিয়াছিলেন। “যুগপ্রবর্তক” কথাটি আজকাল মামুলি ও সস্ত হইয়া গিয়াছে। তথাপি তাহাকে যুগপ্ৰবৰ্ত্তক বলিতে হইবে । তিনি রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শৈক্ষিক এবং অন্ত নানাবিধ প্রচেষ্টার যে স্বত্রপাত করিয়া গিয়াছিলেন, দেশে তৎসমুদয় ব্যাপক ভাবে প্রচালিত হইয়াছে। কিন্তু ধৰ্ম্মবিষয়ে তাহার মত কেবল অল্পসংখ্যক লোকের দ্বারা গৃহীত ও অসুস্থত হইয়াছে। তাহার কিম্বা অন্ত কোন উপদেষ্টার ধৰ্ম্মমতের আলোচনা প্রবাসীর উদেশ্ববহির্ভূত। কিন্তু পরমাত্মার উপাসনা সম্বন্ধে তাহার একটি ব্যবস্থার উপযোগিতার উল্লেখ এখানে করিতে পারা যায় । কলিকাতায় চিৎপুর রোডে আদি ব্রাহ্মসমাজের যে ব্ৰহ্মমন্দির আছে, তাহাতে উপাসনা সম্বন্ধে রামমোহন রায় যে ট্রস্ট-উীড রাখিয়া যান, তদনুসারে সেই উপাসনায় সকল আস্তিক ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের লোক যোগ দিতে পারেন । ভারতবর্ষের মত যে দেশে বহু ধৰ্ম্মমত ও ধৰ্ম্মসম্প্রদায় বিদ্যমান, সেখানে এরূপ ব্যবস্থার বিশেষ প্রয়োজন আছে । র্যাহারা ধৰ্ম্মে বিশ্বাস করেন, র্তাহারা ধৰ্ম্মকে জীবনের শ্রেষ্ঠ বস্তু মনে করেন । ধৰ্ম্মে মিলিত হইতে না-পারিলে, মিলন প্রগাঢ় ও আস্তরিক হয় না । অথচ, দেখা যায় যে, ভারতীয় অনেক ধৰ্ম্মেরই লৌকিক অনুষ্ঠানে অন্য ধৰ্ম্মের লোকদের যোগদানে বাধা আছে। হিন্দুর প্রতীকোপাসনায় মুসলমান খ্ৰীষ্টিয়ান প্রভৃতি যোগ দিতে অসমর্থ। আবার গোঁহত্যা যেখানে হয়, সেখানে হিন্দু কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন না। অন্তবিধ কারণেও হিন্দুদিগকে মসজিদে যাইতে বা যাইতে দিতে দেখা যায় না। খ্ৰীষ্টের অবতারত্বে বিশ্বাসহীন হিন্দু বা মুসলমান গির্জার উপাসনায় যোগ দিতে পারেন না। কিন্তু হিন্দুর বহু শাস্ত্রে যেমন প্রতীকোপাসনার বিধান আছে, সেই রূপ ব্রহ্মের উপাসনাও শাস্ত্রবিহিত । স্বতরাং পরমাত্মার উপাসনায় যোগ দিতে হিন্দুর বাধা নাই। সেই রূপ এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী খ্ৰীষ্টয়ান মুসলমান ও শিখেরও ইহাতে যোগ দিতে বাধা নাই । আস্তিকবেীদ্ধেরাও ইহাতে যোগ দিতে পারেন। কবীরপন্থী প্রভৃতি অন্যান্য আস্তিকও ইহাতে যোগ দিতে পারেন । মানবজীবনের সারভূত বস্তু ধৰ্ম্ম ; পরমাত্মার উপাসনা তাহার প্রধান অঙ্গ । তাহাতে একটি প্রধান বিযয়ে মিলিত হইবার যে উপায় ও ব্যবস্থা রাজা রামমোহন রায় করিয়া গিয়াছেন, তাঙ্গর দ্বারা সাম্প্রদায়িক ঐক্য স্থাপন ও মহাজাতি গঠনের সাহায্য হইতে পারে। ইহার জন্য ব্রাহ্মসমাজের কোন মন্দিরেই যে যাইতে হইবে এমন নয়, যদিও ব্রাহ্মসমাজের সকল মন্দিরের দ্বার পরমপুরুষের উপাসনার নিমিত্ত সকল মানুষের জন্যই উন্মুক্ত ; যে-কোন স্থানে সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের লোকদিগের দ্বারা একত্র শান্তসমাহিত ভাবে তাহার উপাসনা হইতে পারে । সাম্প্রদায়িক ঐক্য স্থাপন ও মহাঞ্জাতি গঠনের অন্য ষত প্রকার উপায় প্রস্তাবিত ও অবলম্বিত হইয়া থাকে, তাহার কোনটিই উপেক্ষণীয় নহে । আমরা যেটির উল্লেখ করিলাম, ধৰ্ম্মে বিশ্বাসবান গম্ভীর প্রকৃতির লোকেরা তাহাও বিবেচনার অযোগ্য মনে ন-করিতেও পারেন । রাজা রামমোহন রায় সম্বন্ধে একটি নূতন আবিষ্কৃত । তথ্যের উল্লেখ এখানে করি । তিনি ইংলণ্ড-প্রবাসকালে, ভারতীয়দিগের জন্য ব্রিটিশ পালেমেণ্টে প্রবেশ ও তাহার কাৰ্য্যে যোগদান সুগম করিবার নিমিত্ত স্বয়ং পালেমেণ্টের সভ্য হইতে চাহিয়াছিলেন । বিশেষ বৃত্তান্ত প্রমাণ সহ বর্তমান . অক্টোবর মাসের মডার্ণ রিভিয়ুতে প্রকাশিত । হইয়াছে। ১৯৪১ সালের লোকসংখ্যা-গণনার আইন দশ বৎসর অস্তর অন্তর ভারতবর্ষের লোকসংখ্যা গণিত .