পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহায়ণ আগল-দেওয়া ঘরে বাস করি সেখানে শত শত শতাব্দী ধরে বাইরে থেকে এসেছে সৈনিক, এসেছে বণিক, পড়েছে আমাদের পিঠের উপরে, ঢুকেছে আমাদের ভাড়ারে, অবশেষে আমাদের মেরুদণ্ড পড়েছে বেঁকে, ভাড়ারে বাকী আছে খুদকুড়ে । অতএব সনাতন শিক্ষাবিধির সাহায্যে ঐতিহাসিক পরীক্ষায় আমরা যে পাস করেছি সম্মানের সঙ্গে, এ-কথা বলবার মুখ নেই আমাদের। কেউ কেউ গর্ব করে বলেন আজও তো আমরা বেঁচে আছি। কিন্তু এমন বঁাচা আছে যা বিলম্বায়মান মৃত্যু। এই তো আমাদের দশ। এখন, যারা হিংস্ৰ শক্তির প্রধান চেলা অথবা অধ্যাপক তাদের কাছে আমার বলবার কথা এই যে, অনেক কাল দেখলুম তাদের সিদ্ধিলাভের চেহারা, তার ভার অনেকট আমরাই বহন করে এসেছি কিন্তু আজ কি তারা জয়লাভের সীমানায় এসে পৌছলেন ? পাস করলেন কি মনুষ্যত্বের পরীক্ষায় । মেতেছেন যারা প্রতিযোগিতায় তার জয়ের আশা করছেন কার ? হিংস্ৰ শক্তির। এ শক্তি সর্বনাশসাধনের পূর্বে কোনো কালেই তো শাস্তিতে পৌছতে পারে না। এ যে শুধু মামুষের জীবিকা ধ্বংস করছে তা নয় তার চিত্তশক্তিতে দিচ্ছে বিষ মিশিয়ে—যা কিছু তার শ্রেষ্ঠ সঞ্চয় বোমা ফেলে দিচ্ছে তাকে ধূলোয় গুড়িয়ে । আমাদের লজ্জার কারণ যথেষ্ট আছে কিন্তু আজ এই ষে দুৰ্গতির নাগরদোলায় নিরস্তর ঘুরপাক দেখতে পাচ্ছি এই লজ্জা কার ? হিংস্ৰ শক্তির পাদপীঠ মানুষের দৌর্বলো, আর মাটি চোঁচীর করে তার চাষ লাগাবার ক্ষেত্র দুর্বলের অসহায়তায় । এই নিয়েই তার ব্যবসায় । অনেক দিন থেকে এই ব্যবসায়েই পৃথুল হয়েছে শক্তিমানের কলেবর-তার প্রতাপের পরিধি । বহুকাল থেকে বহুসংখ্যক মানুষকে সে অতলে নামিয়ে এসেছে, দাবিয়ে রেখেছে ঘাড়ে জোয়াল চাপিয়ে আমরা তা জানি । তার প্রভাবের সীমানার মধ্যে পাছে কারো বললাভের স্বচনা হয় এ জন্ত তার স্থদুর প্রসারিত সতর্কত। নরহত্যার বিপুল আয়োজনে ও ব্যয়ভারে ক্লান্ত হয়ে ক্ষণকালের জন্তে যেই ভারলাঘবের চেষ্টা করে অামাজের অবস্থা ஆம் »ar অমনি চমকে উঠে দেখে ভুল হয়েছে। চৈতন্ত হয়েছে আপন মহিমার পরে বিশ্বাস রাখবার জন্যে তার দরকার জপরিমিতসংখ্যক খাড়া ও খর্পর। হিংস্ৰ শক্তির ষে নিদারুণ জাগন্ধকতা আজ জলস্থলশূন্তে মৃত্যুর বিভীষিকা বিস্তার ক'রে রেখেছে এর অনুরূপ দৃষ্টান্ত ইতিহাসে আর দেখা ষায় না। মানব-হননের অসংখ্য তোরণ নিমাণ করতে করতে পাশ্চাত্য সভ্যতার এই বিজয়-অভিযান কুচকাওয়াজ করে চলেছে। কেউ কোথাও থামতে পারছে না পাছে আর কেউ এগিয়ে যায়। ১৯৩১ খৃষ্টশতকে গিয়েছিলুম জমনিতে। জেতা যে নিশ্চিত জিতেছে এই কথাটাকে সে নানা রকমে দেগে দিচ্ছিল বিজিতের মনে । চিরস্থায়ী কালো কালিতে অপমানকে একে দিচ্ছিল ঐতিহাসিক স্মৃতিপটে । বিজিত দেশগুলির অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এমন করে বিভক্ত বিচ্ছিন্ন করছিল যাতে তাদের পঙ্গুতা অবিস্মরণীয় হয়। রাষ্ট্রস্বার্থৰুদ্ধির পক্ষে এমন মূঢ়তা আর কিছু হ’তে পারে না। কিন্তু হিংস্ৰ শক্তির এইটে প্রকৃতিসিদ্ধ ; অহংকারকে সে সম্ভোগ করতে চায়। ক্ষমাহীন প্রতিহিংসুক নীতি তার সুবিচার এবং শ্রেয়োবুদ্ধিকে অন্ধ ক’রে দেয়। দেখা গেল জয়ের দ্বারা হিংস্রতার উষ্মা শাস্ত হয় না, উত্তরোত্তর তার উদগ্রত রাঙিয়ে উঠতে থাকে । তখন জমনির তরুণসম্প্রদায়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল, আমার সমস্ত মন আকৃষ্ট হয়েছিল তাদের দিকে । তারা তখন স্বজাতির ভবিষ্যৎকে একটা মহৎ সফলতার দিকে নিয়ে যাবে সংকল্প করেছিল । তার মধ্যে ক্রোধ ছিল না, দ্বেষ ছিল না, ছিল নূতন স্বষ্টির আবেগ । ববরতার উপরে সত্যতার জয়লাভ নির্ভর করে এই সফলতার পরে । কিন্তু হিংস্র শক্তিই ববর। সার্থকতার পথ থেকে মানুষকে সে করে ভ্রষ্ট, মামুষের মনুষ্যত্বকে অপমানিত করায় তার আনন্দ । সেই তো খোচা দিয়ে দিয়ে তরুণ জমনিকে অবশেষে হিংস্র করে তুললে, তাকে বব রতার পথে টেনে নিলে। যুরোপের মাঝখানে হিংস্ৰ শক্তির প্রকাও একটা অনাস্থষ্টি দেখা দিল । ষে নিমমি শাসনশক্তি আমাদের দেশে ব্যেপে দিয়েছে নির্জীব তামসিষ্ণতা, সেই শক্তিই যুরোপে জাগিয়ে তুলেছে উগ্রকঠোর তামসিকতা। আমাদের ক্ষীণ রেখার ছবি