కాfపాపా ঐতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় সৰ্ব্বনাশ চর ! উহার বুকের মধ্যে কোথায় যেন লুকাইয়া আছে রক্তবিপ্লবের বীজ। দাদায় খুন হইয়া গেল একটা ; তাহার উপর জখমের সংখ্যাও অনেক। চরের ঘাস বাহিয়া রক্তের ধারা মাটির বুকে গড়াইয়া পড়িল । কিন্তু এইখানেই তো শেষ নয় ; ইহার পর মামলামোকদ্দমা আরম্ভ হইয়া গেল। দীর্ঘ দুই বৎসর ধরিয়া মোকদমা—দায়রা আদালতে দাঙ্গা ও নরহত্যার অপরাধে শেষ পৰ্য্যন্ত নবীন বাগ দী ও তাহার সহচর দুই জন বাগদীর কঠিন সাজা হষ্টয়া গেল। নবীনের প্রতি শাস্তি বিধান হইল ছয় বৎসর দ্বীপান্তরবাসের আর তাহার সহচর দুইজনের প্রতি হইল দুই বৎসর করিয়া সশ্রম কারাবাসের আদেশ । প্রথমে , অবশ্য চালান গিয়াছিল উভয় পক্ষই ; ঐবাস ও তাহার পক্ষীয় কয়েক জন লাঠিয়াল এবং এ-পক্ষের রংলাল, নবীন ও আরও চার-পাচ জন। কিন্তু মজুমদারের তদ্বিরে, শ্ৰীবাসের অর্থের প্রাচুর্য্যে শ্ৰীবাসের পক্ষই আইনের চক্ষে নির্দোষ বলিয়া প্রতিপন্ন হইল । শ্ৰীবাসের ন্যায্য অধিকারের উপর চড়াও হইয়া নবীনের দল দাঙ্গা করিয়াছে, যাহার ফলে নরহত্যা পর্য্যস্ত হইয়া গিয়াছে—এই অপরাধে তাহারা দায়রা-সোপর্দ হইয় গেল । রং লাল অনেক দিন পর্য্যস্ত দৃঢ় ছিল, কিন্তু শেষের দিকে সে ভাঙ্গিয়া পড়িল । রাজসাক্ষীরূপে শ্রীবাসের ন্যায্য অধিকার স্বীকার করিয়া সে নবীনের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিল । তবু ঘরে মুখ লুকাইয়া সে কাদিত, বার বার ভগবানের কাছে প্রার্থনা করিত—ভগবান, নবীনকে বাচাইয়া দাও, ঐবাসের অন্যায় তুমি প্রকাশ করিয়া দাও। কিন্তু ভগবান হয় दधिग्न नग्न भूक । দণ্ডাদেশের সংবাদ শুনিয়া সুনীতি কঁাদিলেন। নবীনের জন্য র্তাহার মৰ্ম্মাস্তিক দুঃখ হইল। এই বাড়ীর তিন পুরুষের চাকর এই নবীনের বংশ, তাহারাই তাহার চাকরি ছাড়াইয়া দিয়াছেন, কিন্তু সে তাহাদের ছাড়ে নাই। নবীনই ছিল এ-বাড়ীর শেষ বাহুবল । সেও চলিয়া গেল । সৰ্ব্বনাশা চর ! ঐ চরটার কথা ভাবিতে বসিয়া সুনীতি এক-এক সময় শিহরিয়া উঠেন। মনশ্চক্ষে তিনি যেন একটা নিষ্ঠুর চক্রাস্তের ক্রুর চক্রবেগে চরখানাকে এই বাড়ীটিকে কেন্দ্র করিয়া আবৰ্ত্তিত হইতে দেখিতে পান। এ আবৰ্ত্ত হইতে সরিয়া যাইবার যেন পথ নাই। মঙ্গীকে বলি দিয়াও সরিয়া ষাওয়া গেল না। প্রাণপণ শক্তিতে সরিয়া যাইবার চেষ্টা করিলেও সরিয় ষ ওয়া যায় না। সঙ্গে সঙ্গে চক্রাস্তের চক্রের পরিধি বিস্তৃত হইয়া যায় ; এ-বাড়ীর সংশ্লিষ্ট জনকে আবৰ্ত্তে ফেলিয়| সেই নিমজমান জনের সহিত বন্ধনসূত্রের আকর্ষণে আবার টানিয়া আনিয়া আবৰ্ত্তের মধ্যে ফেলিতেছে । নবীনের মামলায় সেটা যেন স্বনীতি প্রত্যক্ষ দেখিতে পাইয়াছেন । দায়রার মামলায় তাহাকে পর্য্যন্ত টানিয়া প্রকাশু আদালতের সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাড়াইতে হইয়াছে । আইীন্দ্রকেও সাক্ষী দিতে হইয়াছে । যাহার ফলে রামেশ্বরের অবস্থা অতি শোচনীয় হইয়া উঠিয়াছে, এখন তিনি প্রায় বদ্ধপাগল। ভাবিতে ভাবিতে স্বনীতি আর কুলকিনারা দেখিতে পান না, তাহার অন্তরাত্মা থর থর করিয়া কাপিয় উঠে । ভবিষ্যতের একটা করাল ছায়া যেন ঐ কল্পিত আবর্তের ভিতর হইতে সমুদ্রমন্থনের শেষ ফল গরল বাষ্পের মত কুণ্ডলী পাকাইয়া পাকাইয়া উঠিতে থাকে। সে বিষবাম্পের উগ্র তিক্ত গন্ধের আভাস যেন তিনি প্রত্যক্ষ অনুভব করিতেছেন।