পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ಆಸ್ಟ್ರ কালিন্দী sae মুহুর্তে রামেশ্বরের মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল, তিনি খর থর করিয়া কঁাপিয়া উঠিলেন, বস্থকষ্টে আত্মসম্বরণ করিয়া বলিলেন–রায়-গিল্পী, আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে না ? yo সেই বন্দোবস্তই হইল । অহীন্দ্র কলেজ কামাই করিয়া আসিল ; সুনীতি অহীন্দ্রকে লইয়া একটু শঙ্কিত ছিলেন। রামেশ্বরের সন্তান মঙ্গীর ভাই সে ! অহীন্দ্র কিন্তু হাসিয়া বলিল—এর জন্য তুমি এমন লজ্জা পাচ্ছ কেন মা ? এ সংসারে সত্যকে খুজে বের করতে সাহায্য করা প্রত্যেক মামুষের ধৰ্ম্ম— এতে রাজা-প্রজা নেই, ধনী-দরিদ্র নেই । বিচারক মানুষ হ’লে ৪ তিনি তখন বিধাতার আসনে ব’সে থাকেন। স্বনীতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া বাচিলেন, শুধু তাই নয়, বুকে যেন তিনি বল পাইলেন ; সঙ্গে সঙ্গে বুকখানি পুত্ৰগৌরবেও ভরিয়া উঠিল। তিনি ছেলের মাথার চুলগুলির ভিতর আঙুল চালাইতে চালাইতে বলিলেন— মুখ-হাত ধুয়ে ফেল বাবা, আমি দুখানা গরম নিমকি ভেজে দি । ময়দা আমার মাখা আছে । মালদা নীরবেষ্ট দাড়াইয়াছিল, সে এবার বলিয়া উঠিল—আপনি ভালই বললেন দাদাবাবু; কিন্তু আমার মন ঠাণ্ড হ’ল না। বড়দাদাবাবু হ’লে—, অকস্মাৎ ক্রোধে সে দাতে দাত ঘষিয়া বলিয়া উঠিল—বড়দাদাবাবু হ’লে ঐ মজুমদার আর ঐবাসের মুণ্ডু দুটাে নখে ক’রে ছিড়ে নিয়ে আসতেন । স্থনীতি শঙ্কায় স্তব্ধ হইয়া গেলেন ; অহীন্দ্র কিন্তু মৃদ্ধ হাসিল, বলিল—আমিও নিয়ে আসতাম রে মানদা—যদি মুণ্ডু দুটো আবার জোড়া দিয়ে দিতে পারতাম । স্বনীতির চোখে এবার জল আসিল, অহীন তাহার মৰ্ম্মকে বুঝিয়াছে, সংসারে দুঃখ কি কাহাকেও দিতে আছে ! আহ, মামুষের মুখ দেখিয়া মায়া হয় না। মানদা কি উত্তর দিতে গেল, কিন্তু রাস্তাঘরে কাহার জুতার দ্রুত শব্দে সে নিরস্ত হইয়া দুয়ারের দিকেই চাহিয়া রহিল । একা মানদাই নয়, সুনীতি অহীন্দ্র সকলেই । পরমুহুর্তেই ষোল-সতর বৎসরের কিশোর ছেলে একটি বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করিয়া থমকিয়া দাড়াইল । স্নিগ্ধ গৌর দেহবর্ণ, পেশীসবল দেহ—সৰ্ব্বাঙ্গে সৰ্ব্বপরিচ্ছদে পরিচ্ছন্ন তারুণ্যের একটি স্বকুমার লাবণ্য যেন ঝলমল করিতেছে। স্বনীতি সাগ্রহে আহবান করিয়া বলিলেন—আমল,


سtriی

স্বনীতির কথা শেষ হইবার পূৰ্ব্বেই অমল অহীন্দ্রের হাত দুটি ধরিয়া বলিল—অহীন ? অহীন্দ্র স্নিগ্ধ হাসি হাসিয়া বলিল-ই অহীন। তুমি অমল ? অমল বলিল—উঃ কত দিন পরে দেখা বল তো ? সেই ছেলেবেলায় পাঠশালায় । কত দিন যে আমি তোমাকে চিঠি লিখব ভেবেছি ! কিন্তু ইংলণ্ডের রাজা আর ফ্রান্সের রাজায় যুদ্ধ হ’ল—ফলে দুটাে দেশের দেশবাসীরা অকারণে পরস্পরের শক্ৰ হ’তে বাধ্য হ’ল । বলিয়া সে হাসিয়া উঠিল। অহীন্দ্রও হাসিয়া বলিল—ইউ টক ভেরী নাইস্! অমল বলিল—ইউ লুক ভেরী নাইস্। ব্রাইট ব্লেড অফ এ শাপ সোর্ড ! কবির ভাষায় খাপখোলা বাকা তলোয়ার ! হনীতি বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে দুইটি কিশোরের মিতালির লীলা দেখিতেছিলেন । তিনি এইবার মানদাকে বলিলেন— মানদা, দে তো মা একখানা ছোট সতরঞ্চি পেতে। ব’স বাবা তোমরা, আমি নিমকি ভাজব, খাবে দু-জনে তোমরা । উমাকে আনলে না কেন বাবা অমল ? অমল বলিল—তার কথা আর বলবেন না পিসীমা । অকস্মাৎ সে কাব্য নিয়ে, যাকে বলে ভয়ানক মেতে ওঠা, সেই ভয়ানক মেতে উঠেছে। অনবরত রবীন্দ্রনাথের কবিতা মুখস্থ করছে আবৃত্তি করছে! আমায় তো জালাতন ক’রে খেলে । মুনীতির সেই দিনের ছবি মনে পড়িয়া গেল । তিনি একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন, আহা তাহার যদি এমনি একটি কন্যা থাকিত—সে এমনি কবিতা আবৃত্তি করিয়া র্তাহাকে ভুলাইয়া রাথিতে পারিত !