পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8רל অমল বলিল—এই দেখুন পিসীম, কাল তো আপনাকে নিয়ে আমি যাচ্ছি সদরে ; কিন্তু ফিরে এলেই ষে অহীন পালাবে—সে হবে না। অহীন হাসিয়া বলিল-আমার প্রাকৃটিক্যাল ক্লাস কামাই হবে ব’লে ভাবনা কিনা।-- অমল বলিল—তুমি বুৰি সায়েন্স স্ট,ডেন্ট ? আই সী। স্থনীতি কাঠগড়ায় দাড়াইয়া কাপিয়া উঠিলেন। লোকে আদালতটা গিসগিস করিতেছিল। অমল তাহার কাছেই দাড়াইয়াছিল, সে বলিল—ভয় ॥ক পিসীমা, কোন ভয় করবেন না ! পরমুহূর্বেই সে আত্মগতভাবেই বলিয়া উঠিল -এ কি, বাবা এসে গেছেন দেখাছ! হনীতি দৃষ্ট ফিরাইয়া দেখিল—ঘৰ্ম্মাক্ত পরিচ্ছদ, রুক্ষ চুল, শুষ্ক মুখ-অম্লাত অভূক্ত ইন্দ্র রায় আদালতে প্রবেশ করিতেছেন, সঙ্গে এক জন উকীল । উকীলটি আসিয়াই জজের কাছে প্রার্থনা করিল—মহামান্য বিচারকের দৃষ্টি আমি একটি বিশেষ বিষয়ে আকৃষ্ট করতে চাই । আদালতের সাক্ষীর কাঠগড়ায় এই যে সাক্ষী-ইনি এই জেলার একটি সম্রাস্ত প্রাচীন বংশের বধু। উভয় পক্ষের উকীলবৃন্দ যেন র্তার মর্য্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও জেরা করেন। মহামান্য বিচারক সে ইঙ্গিত তাদের দিলে সাক্ষী এবং আমরা—শুধু আমরা কেন সৰ্ব্বসাধারণেই চিরকৃতজ্ঞ থাকব । ইন্দ্র রায় সুনীতির কাঠগড়ার নিকট আসিয়া বলিলেন— তোমার কোন ভয় নেই বেfন, আমি এই দাড়িয়ে রইলাম তোমার পিছনে । সাক্ষ্য অল্পেই শেষ হইয়া গেল ; বিচারক স্থনীতির মুখের দিকে চাহিয়াই উকালের আবেদনের সত্যতা বুঝিয়াছিলেন, তিনি অতি প্রয়োজনীয় দুই-চারিট প্রশ্ন ব্যতীত সকল প্রশ্নই অগ্রাহ করিয়া দিলেন । কাঠগড়া হইতে নামিয়া স্বনীতি সেই প্রকাশ্ব বিচারালয়ের সহস্ৰ চক্ষুর সম্মুখে গলায় কাপড় দিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া ইন্দ্র রায়কে প্ৰণাম করিলেন। রায় রুদ্ধস্বরে বলিলেন—ওঠ বোন, eঠ । তার পর অমলকে বলিলেন—অমল নিয়ে এস अदांजौ $GBR, - & পিসীমাকে। একটা গাড়ীর ব্যবস্থা ক'রে রেখেছি—দেখি আমি সেটা । দেখিবার কিন্তু প্রয়োজন ছিল না। রায়ের কৰ্ম্মচারী মিত্তির গাড়ী লইয়া বাহিরে অপেক্ষা করিয়াই দাড়াইয়া ছিল। সুনীতি ও অমলকে গাড়ীতে উঠাইয়া দিয়া রায় অমলকে বলিলেন—তুমি পিসীমাকে নিয়ে বাড়ী চলে যাও। আমার কাজ রয়েছে সদরে, সেটা সেরে কাল আমি ফিরব । স্বনীতি লজ্জা করিলেন না—তিনি অসস্কোচে রায়ের সম্মুখে অৰ্দ্ধ-অবগুষ্ঠিত মুখে বলিলেন—আমার অপরাধ কি ক্ষমা করা যায় না দাদা ? রায় স্তন্ধ হইয়া রহিলেন, তার পর ঈষৎ কম্পিত কণ্ঠে বলিলেন—পৃথিবীতে সকল অপরাধই ক্ষমা করা যায় বোন, কিন্তু লজ্জা কোন রকমেই ভোলা যায় না । পরামর্শ-অঙ্কুযায়ী অতি যত্নে সংবাদটি রামেশ্বরের নিকট গোপন রাখা হইল। কথাটা তাহাকে বলিয়াছিলেন হেমাঙ্গিনী। তিনি বলিলেন—সুনীতি আপনাকে রেখে কিছুতেই যেতে চায় না। আমি বলছি যে, আমি আপনার সেবা-যত্বের ভার নেব ; ব্রত কি কখনও নষ্ট করে । আপনি ওকে বলুন চক্রবর্তী-মশায় ! রামেশ্বর বলিলেন—না না না । রায়-গিল্পী ঠিক বলেছেন স্থনীতি, ব্রত কি কখনও পণ্ড করে ! আমি বেশ থাকব । পূৰ্ব্বদিন সন্ধ্যায় মুনীতি অমলের সঙ্গে রওনা হইয়া গেলেন। রাত্রির খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা তিনিই করিয়া গিয়াছিলেন । অতীন্দ্র রামেশ্বরের কাছে থাকিল। পরদিন হেমাঙ্গিনী সমস্ত ব্যবস্থা করিলেন, দ্বিপ্রহরে থাবারের থালাখানি আনিয়া আসনের সম্মুখে নামাইয়া দিভেট রামেশ্বর স্মিতমুখে বলিলেন --স্বনীতির ব্রত সার্থক হোক রায়-গিয়ী ; তার গঙ্গাস্বানের পুণ্যেই বোধ করি আপনার হাতের অমৃত আজ আমার ভাগ্যে জুটল। হেমাঙ্গিনী সকরুণ হাসি হাসিলেন ; সত্যই সেকালে রামেশ্বর হেমাঙ্গিনীর হাতের রান্নার বড় তারিফ করিতেন। আজ রাধারাণী গিয়াছে বাইশ-তেইশ বৎসর—