পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

չԳՆ প্রবাসী ჯ©8& শুনিতেছিলেন। আবৃত্তি শেষ করিয়া উমা বলিল—কেমন লাগল বলুন ! রামেশ্বর আবেশে তখনও যেন আচ্ছন্ন হইয়াছিলেন, তবু অস্ফুট কণ্ঠে বলিলেন—অপূৰ্ব্ব অপূৰ্ব্ব । বাঃ–‘তোমার খড়গ আঁধার-মহিষে দুখানা করিল কাটিয়া-তিনি একটা গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন । উমা বলিল—আমি তবু বেশী জানি নে, ঐ দু-চারটে শিখেছি কেবল। জানেন আমার দাদা—খুব জানেন । রবীন্দ্রনাথ একবারে কণ্ঠস্থ । আর ভারি মুন্দর আবৃত্তি করে । আপনি তাকে দেখেন নি, না ? —ন, সে তো আসে নি, কেমন ক’রে দেখব বল । —দাড়ান, আমুক ফিরে, পিসীমাকে নিয়ে । আমার পিসীম কে, জানেন তো ? —তোমার পিসীম ? তুমি তো ইন্দ্রের মেয়ে! তোমার পিসীমা ? —হঁ্যা। অহিদার মা-ই যে আমার পিসীমা | নল তো পিসীমা—আমরা বলি । —ও । ঠিক ঠিক, আমার মনে ছিল না । —আমার দাদাই তো তাকে নিয়ে সদরে গেছেন । আচ্ছা, পিসীমাকে কেন সাক্ষী মানলে বলুন তো ? কে কোথায় চরের উপর দাঙ্গ করলে, উনি তার কি করবেন ? ঐ যে কে মজুমদার আছে—সেই খুব শয়তান লোক—ঐ এ-সব করছে। এ কি, আপনি এমন করছেন কেন ? পিসেমশাই ! রামেশ্বরের দৃষ্টি তখন বিস্ফারিত, সমস্ত শরীর থর থর করিয়া কম্পমান, দুই হাতের মুঠি দিয়া খাটের মাথাটা চাপিয়া ধরিয়া বলিলেন—একটু জল দিতে পার মা— একটু জল ! পরক্ষণেই তিনি দারুণ ক্রোধে জ্ঞান হারাইয়া মেঝের উপর পড়িয়া গেলেন। উমা হ্রস্ত বিব্রত হইয়া বারান্দায় ছুটিয়া গিয়া ডাকিল—ম, ও মা ! পিসেমশাই যে পড়ে গেলেন মেঝের উপর । অহিদা ! জ্ঞান হইলে রামেশ্বর হেমাঙ্গিনীর মুখের দিকে তিরস্কারভর দৃষ্টিপাত করিয়া বলিলেন—আপনি আমায় মিথ্যে কথা বললেন, রায়-গিল্পী । মেদিনী কথাটা বুঝিতে পারিলেন না, রামেশ্বর নিজেই বলিলেন—মজুমদার স্থনীতিকে দায়রা-আদালতের কাঠগড়াতে দাড় করালে শেষ পৰ্য্যন্ত ! হেমাঙ্গিনী চমকিয়া উঠিলেন, তবু তিনি আত্মসম্বরণ করিয়া বলিলেন—ন না, কে বললে আপনাকে ? রামেশ্বর উমার দিকে চাহিলেন—উমার মুখ বিবর্ণ পাংশু ! তিনি চোখ দুটি বন্ধ করিয়া যেন ভাবিয়া লইয়াই বলিলেন—এই দিকে নীচে কাছারির বারান্দায় কে বলছিল, আমি শুনলাম । হেমাঙ্গিনী স্তন্ধ হইয়া রহিলেন, অহীন পাথা দিয়া বাপের মাথায় বাতাস দিতেছিল, রামেশ্বর অকস্মাৎ তাহার মুখের দিকে চাহিয়া বলিলেন-দেখ তো অহি, আমার বন্দুকটা ঠিক আছে কি না ! দেখ তো ! অষ্ট্ৰীন নীরবে বাতাস করিয়াই চলিল ; রামেশ্বর আবার বলিলেন—দেখ আহি, দেখ । অন্তি মৃদুস্বরে বলিল – বন্দুক তো নেই। —কি হ’ল ? অকস্মাৎ যেন তাহার মনে পড়িয়া গেল, তিনি বলিলেন—মঈী, মহী । হঁ্যা হা, ঠিক । জান তুমি অহি—মহী দ্বীপান্তর থেকে কবে ফিরবে ? জান ? হেমাঙ্গিনী তাঙ্গাকে জোর করিয়া শোয়া ষ্টয়া দিয়া বলিলেন—একটু ঘুমোন দেখি আপনি ! যা তো উমা বাক্স থেকে অডিকলোনের শিশিটা নিয়ে আর্য তো ! অনেক শুশ্ৰুষায় রামেশ্বর শাস্ত হইয়া ঘুমাইলেন । যখন উঠিলেন তখন মুনীতি ফিরিয়াছেন । সন্ধ্যা তখন উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে। রামেশ্বর তীয় দৃষ্টিতে সুনীতির দিকে চাহিয়া থাকিয়া বলিলেন—তুমি রাধারাণী, না মুনীতি ? ঝর ঝর ধারায় চোথের জলে স্বনীতির মুখ ভাসিয়া গেল। রামেশ্বর ঘাড় নাড়িয়া বলিলেন—তুমি স্বনীতি, তুমি স্বনীতি। সে এমন কাদত না । কাদতে সে জানত না ! অকস্মাৎ আবার বলিলেন—শোন, শোন। খুব চুপি চুপি। জজ-সায়েব কি আমার খোজ করছিল ? আমাকে কি ধ’রে নিয়ে যাবে ? সুনীতি কোন সাস্বনা দিলেন না, কথার কোন প্রতিবাদ করিলেন না, নীরবে তিনি জানালাটা খুলিয়া দিলেন । আবছা অন্ধকারের মধ্যেও চরটা দেখা যায় ! যাইবেই তো, চক্রাস্তের চক্রবেগে সেটা এই বাড়ীটিকে বেষ্টন করিয়া ঘুরিতেছে। ক্রমশঃ