পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন সম্বুদ্ধ হরিচরণ মরিয়াছে । বাচিয়াছি। আর সে আমাকে উত্যক্ত করিবে না। আমি আবার নিঃসঙ্কোচে বরিশালের রাস্তায় বেড়াইতে “পারিব । তাহাকে আমি প্রথম দিন আবিষ্কার করি কালেক্টরি রোডে । বরিশালে আমার বাড়ী, কিন্তু নিজে আমি বহুকাল বরিশাল-ছাড়া । ইহারই মধ্যে হঠাৎ বরিশাল কলেজে চাকরি পাইয়া সেখানে গিয়াছিলাম । কাজে যোগ দিবার দিন-কয়েক পরে। সন্ধ্যার দিকে যথারীতি নিরুদ্দেশ-ভ্রমণে বাহির হইয়াছি । সদর রোডে ফাস্ট ইয়ারের দুটি ছেলে আমার সঙ্গে জুটিয় গেল । তাহাদের সঙ্গে গল্প করিত্রে করিতে কালেক্টারি রোড ধরিলাম, নদীর পাড়ে যাইব । যাওয়া কিন্তু হইল না। অন্ধকার পথ। চলিতে চলিতে হঠাৎ এক সময় একটা কান্নার শব্দ কানে আসিল । অস্পষ্ট একটান। ইউউউ করিয়া স্বর টানিয়া কেহ কাদিতেছে। দাড়াইলাম। প্রথমটা কিছু দেখিতে পাই না । শেষে অন্ধকার ফুড়িয়া নজর হইল, রাস্তার ধারে কাপড় মুড়ি দিয়া এক প্রাণী শুইয়া আছে । কৌতুহল হইল, কাছে গিয়া ডাকিলাম—এই ৷ বার-দুই ডাকার পর তাহার কান্না থামিল, উত্তর করিল—উ কহিলাম—হইছে কি তোমার ? কান্দো ক্যান ? সে কহিল—খিদা লাগজে । সংক্ষিপ্ত উত্তর। পথে ঘাটে বুভূক্ষু ভিখারীর অভাব শস্তহামলা বাংলা দেশে নাই, বরিশালেও তাহারা থাকে এবং ক্ষুধাও তাহাদের পায়। উত্তরটায় কাজেই নূতনত্ব ছিল না। কিন্তু তবু একটু নূতনত্ব লাগিল তাহার স্বরে। সে খাদ্য চায় নাই, প্রশ্নের উত্তর মাত্ৰ দিয়াছে। পেশাদার جامس-3\R ভিখারীর পক্ষে এটা স্বাভাবিক নয়। মনে হইল, লোকটা হয়ত ভিক্ষুক নয়। অন্তত হইলেও নূতন, অনভ্যস্ত। আপনারা আমাকে যা খুশী ভাবিতে পারেন ; কিন্তু তখন তাহার উত্তরের মধ্যে, তাহার বুভূক্ষর করুণত অপেক্ষা তাহার সরল ভাষার অনাড়ম্বর মাধুৰ্য্য আমাকে আকৃষ্ট করিয়াছিল বেশী, এ-কথাটা স্বীকার না করিলে মিথ্যা বলা হইবে। কি জানি কেন, লোকটিকে দেখিতে ইচ্ছা হইল। কহিলাম—ক্ষিদা লাগজে । ক্যান, খাও নায় ? সে ঠিক তেমনই সহজ ভাষায় উত্তর দিল—খাইছি কাইল সকালে । শুনিয়া তাহার অবস্থাটা কিছু বুঝিলাম। কহলাম— হেয়ার পর আর খাও নায় ? -न] । —আইজও না ? -R | ভাল। পকেট হাতড়াইয়া দেখিলাম। পয়সা নাই। থাকলে একটা-দুট পয়সা দিয়া পলানো যাইত। এখন ইহাকে খাওয়াইতে হইলে বাসায় লইয়া যাইতে হয়। কহিলাম—খাবা ? ভাত ? সে কহিল—খামু। কহিলাম—ওডো ! সে উঠিয়া বসিল । অন্ধকারে চক্ষে পড়িল, শীর্ণ ক্ষুদ্র তাহার আকৃতি। কহিলাম-কানতে লাগজিল, খিদায় ? সে কহিল-খালি যেন খিদায় হেয়াও না, প্যাডে ব্যদিনা ধবৃছে বুলিয়া । এই তাহার প্রথম দীর্ঘ কথা। স্বরটা কচি অথচ কথার ঢংটা বুড়ামামুষের মত। শুনিয়া মনে হইল গ্রাম্য দরিদ্র পরিবারের ছেলে, যাহারা অভাব ও অবৈচিত্র্যের পীড়নে অকালে বৃদ্ধ হইয়া যায়। কহিলাম—কিসের ব্যথা ?