পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- ۰بالا কিন্তু ইহারই মধ্যে মাঝে মাঝে যে দৃশ্ব চোখে পড়িত তাহাতে বুঝিতাম হরিচরণ আমার মাতৃদেবীর অন্নে বেশ নিয়মিত ভাবেই ভাগ বসাইতেছে। আমি দু-এক দিন রাগ করিলাম। বলিলাম--হয় ওকে দিও না, আর না হয় ওর জন্য হিসাব করিয়াই মাছতরকারি রাখিও । ম। উত্তর দিতেন, ও কবে আসিবে তাহা তো আগে জান থাকে না। এক দিন বলিলেন, ও যেদিন থাইবে যদি আগে অন্তত আমাকে বলিয়াও যায় আমাকে এমন অসুবিধায় পড়িতে হয় না। হরিচরণকে আমি সেকথা বলিলাম। উত্তরে সে শুধু খানিকট নাকে কাদিল। স্পষ্ট জবাবও কিছু দিল না, তাহার বিনা-নোটিশে আসার অভ্যাসও বদলাইল না। বদলাইল কেবল তাহার আসিবার তারিখ । আগে সে মাঝে মাঝে এক দিন আসিত, এখন প্রায় রোজই আসিতে লাগিল । এবং নিয়মিত ভাবেই ঐ অসময়ে। পৃথিবীতে মানুষের চরিত্রের এই একটা মজা দেখিয়াছি, মানুষ অলস থাকিতে পাইলে আর নড়িতে চায় না । উচ্চাকাঙ্ক্ষা আত্মসম্মান সমস্ত ভূয়া কথা—ও বোধ হয় লক্ষে এক জনের মধ্যেও পাওয়া যায় না । চিরদিন পুথিতেই ofpējfr Man is a rational animal, Ff(H তাহার প্রমাণ কচিংই দেখিয়াছি । চার পাশে যা চোখে পড়ে তাহাতে মানুষকে idle animal ছাড়া আর তো কিছুই বলিতে পারি না। নেহাৎ দেহটাকে টিকাইয়া রাখিতে কিঞ্চিৎ আকারের প্রয়োজন, তাই যেখানে দু-মুষ্টি অন্ন জুটিল, নির্বিচারে নিরহস্কারে সেইখানকার মাটি কামড়াইয়া পড়িয়া থাকিতে তাহার দ্বিধা সঙ্কোচ অপমানবোধ কিছুই নাই । খাওয়া মিলিতেছে এইটাই তাহার কাছে পরম পুরুষাৰ্থ ; তাহার বিনিময়ে পিঠের উপর দিয়া অবহেলা অবজ্ঞা লাঞ্ছনার পদাঘাতে বন্য বহিয়া গেলেও তাহার ক্ৰক্ষেপ হয় না, যেন ওটা সেই ভিক্ষায়ের উচিত মূল্য মাত্র। এবং ভিক্ষা করিবার এই সহজাত প্রবৃত্তি কোন-না-কোনরূপে বোধ হয় প্রত্যেক মাতুষের মধ্যে বাচিয় থাকে। যদি কেহ ইহাকে অস্বীকার করিতে

  • পারেন, ভিক্ষণয়ের চেয়ে আত্মসম্মানকে বড় করিয়া

প্রবাসী SN28W: দেখিয়া, যেখানে ভিক্ষায় সহজে মিলিত সেইখানে ক্লেশ স্বীকার করিয়া অন্ন উপার্জন করিতে ব্যাকুল হন, আমি বলিব তিনিই যথার্থ মানুষ যলিয়া নমস্ত । হরিচরণ অতিমানব নয়। রোগে ও দৈন্তে যে নিঃসহায় শিশু তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে চলিয়াছে, আসন্ন মৃত্যুর আভাস তাহার উপরে আসিয়া পড়িয়াছে তৰু তাহার পলাইয়া যাইবার উপায় নাই,—তাহার মধ্যে অনন্যসাধারণ সম্ৰম-চেতনা ও পৌরুষবীৰ্য্যের একটা আকস্মিক বিস্ফোরণ দেখিতে আশা করিয়াছিলাম, একথা সত্য নয়। কিন্তু তবু তাহার ভিক্ষণ করার মধ্যেও অলসনির্ভরের ভাব দেখিয়া এক-এক সময় বিরক্তি ধরিতে লাগিল । এক দিন তাহাকে বলিলাম—তুই আর কোনোহানে। খাণ্ডন পাও না ? সে রোগস্ফীত বৃহৎ দুইটা চক্ষু মেলিয়া কহিল—কথায় পামু। আমারে কেও ভাত দে না। তাহার কথা কহিবার একটা নিজস্ব র্কাছুনি মুর ছিল শুনিলেই মনে হইত যেন কি উৎকট একটা স্বাতনা তাহার দেহের অভ্যস্তরে চলিতেছে । কিন্তু শুনিয়া শুনিয়া অভ্যস্ত হইবার পর বুঝিয়াছিলাম, ওটা যন্ত্রণার অভিব্যক্তি নয়, ঐটাই তাহার সাধারণ কণ্ঠস্বর। স্বাভাবিক স্বরই তাহার ঐ রকম ছিল, না দয়া উদ্ভুিক্ত করিবার জন্য ইচ্ছা করিয়াই সে অমন করুণ স্বরে কথা বলিত, জানি না। কিন্তু প্রথম পরিচয়ের দিন তাঙ্গার সেই করুণ কণ্ঠ আমাকে আকৃষ্ট করিয়াছিল বলিয়াই বোধ হয়, এখন তাহার র্কাছনি আমার ভাল লাগিত না। কানে গেলেই গা জালা করিত, মনে হইত সমস্তই উহার দ্যাকামি, না হইলে সাধারণ একটা কথাও কি ও সহজ গলায় বলিতে পারে না ? মানুষের মনের উপর মানুষের গলার এই বিচিত্র প্রতিক্রিয়া আরও দেখিয়াছি। যে দিনটির কথা বলিতেছি তাহার কয়েক দিন আগেই একটা অনুরূপ ব্যাপার ঘটিয়া গিয়াছিল । কলেজে একটি ছেলে হঠাৎ আমাকে জানাইল, আর একটি ছেলে কোন ব্যাপারে মহা বিপদে পড়িয়াছে, তাহাকে উদ্ধার করিতেই হইবে। কাজটা খুব ভয়ানক,