পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহায়ণ কিন্তু, চাহিলেই তো হইবে না। আমার এখানে রক্ত-সম্পর্কের দাবি আছে । সেই সম্পর্ক, সেই দাবি তাহার ছিল না। হইতে পারে, তাহার প্রত্যাশার মূলে ছিল তাহার মানসিক আত্মীয়তা-স্বীকার । নিজের জন তাহার ছিল না, মিষ্ট কথায় সহানুভূতি জানাইবার লোকও ছিল না। তাই যেখানে দুটা সহানুভূতির কথা সে পাইয়াছে সেইখানেই তাহার শিশু-মন বলিয়াছে, এই তো আমার আপনার জন ; সেইখানেই অবোধ আগ্রহে সে বাহু মেলিয়া সেই কল্পিত আপনার জনকে আঁকড়াইয়া ধরিতে গিয়াছে। না করিয়াছে দ্বিধ!-সঙ্কোচ, না তাঙ্গার জাগিয়াছে প্রত্যাখ্যানের শঙ্কা । কিন্তু তাহার মনের স্নেহতৃষ্ণা যতই থাক, পুথিবী কেন তাহার সেই দুরাকাঙ্ক্ষাকে মানিয়া লইবে ? আমি কেন মানিয়া লইব ? হইতে পারে, এক দিন তাহাকে আমি ক্ষুধায় অন্ন দিয়াছিলাম। কিন্তু তাই বলিয়া চিরকাল দিতে হইবে, এমন কোন কথা আছে ? আমি যদি তাহাকে এক দিন ডাকিয়াই খাওয়াইয়া থাকি, সে আমার দয়া । আমার খেয়াল । তাহাতে তাহার নিত্য খাইবার দাবি জন্মায় না । সে দাবি পুথিবী স্বীকার করিবে না। আর, দয়াই করি যাহাই করি, সেটা একান্তই আমার নিজের খুশী, আমার অবসর-বিলাস । আমার যখন ইচ্ছ। এবং যতটুকু ইচ্ছ। দয়া আমি দেখাইব । ইচ্ছা যখন থাকিবে না, দেখাইব না । তাহার উপর থাটাইবার অধিকার তো কাহার ও নাই । জ্যের প্রথম দিন হরিচরণকে আমি নিজেই ডাকিয়া খাওয়াইয়াছিলাম। দয়া করিয়া নয় । খেয়ালে। অমন কত লোকই তো পথের পাশে অনাহারে পড়িয়া থাকে । ক-জনকে আমি বাসায় ডাকিয় আনিয়া খাওয়াই ? দিনও যে তাঙ্গকে ডাকিয়া আনিয়াছিলাম সেটা দয়া করিয়া নয় । সে অনাহারে আছে শুনিয়া আমার হৃদয় বিগলিত হয় নাই। তাহার কথার স্বরটা শুধু আমার ভাল লাগিয়াছিল । কথার অর্থ আমি দেখি নাই, সে না খাইয়! সেইখানে মরিয়া থাকিলে আমার কিছুমাত্র বহিয়া যাইত না। আমি দেখিয়াছিলাম তাহার কথার সহজ ভঙ্গীটা। সেই ভঙ্গী আমার সাহিত্যিক মনকে (*ー ोबब (eسطو স্পর্শ করিয়াছিল। আমি তাহাকে সঙ্গে করিয়া আনিয়াছিলাম, তাহার সেই রকম কথা আরও দু-চারটা শুনিব বলিয়া। আর একটু কারণ অবশু ছিল । পথের ধার হইতে একটা লোককে অযাচিত ডাকিয়া আনিয়া খাওয়াইয় দেওয়ার মধ্যে যে আত্মপ্রসাদটুকু থাকে সেইটুকু পাইতে চাহিয়াছিলাম। আমার ইহাতে খরচ নাই, চোঁদ-পনর জন লোকের সংসারে একটা শিশুর এক বেলার ভাত অক্লেশে চলিয়া যায় । অথচ আমি সেই এক রতি দয়া দেখাইয়া একটা লোকের কৃতজ্ঞতা কিনিয়া লইলাম—বিন খরচে এই লাভের বা বস না করে কে ? তাহার উপর তখন কলেজে সদ্য চাকরি লষ্টয়াছি । সঙ্গে ছিল আমার দুটি ছাত্র । তাহাদের সম্মুখে সেই দয়াটুকু দেখামোর মধ্যে নিশ্চয়ষ্ট ব্যবসাবুদ্ধিও আমার ছিল। তাহারা জানিবে নূতন প্রফেসর এমন দয়ালু লোক, রাস্তার পাশ হইতে অনাথ আতুরকে কুড়াইয়া লইয়া যান নিজের বাড়ীতে খাওয়াইবার জন্ত, ইহার মূল্য অনেক । তাহারা দেখিয়া গেল, তাহারা, তাহাদের বন্ধু ও সহপাঠীদের কাছে গল্প করিবে, এবং ফলে ছাত্রদের মনে আমার প্রতি শ্রদ্ধা জাগিবে, এটা তো কম লাভ নয় । আমি জানি, সেদিন ঐ ছেলে দুটি সঙ্গে ন! থাকিলে আমি হরিচরণকে সঙ্গে করিয়া বাসায় আনিতাম না । হয়ত দাড়াইয়া জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া চলিয়া যাইতাম, যেমন অনেকে যায় ; হয়ত তাহার কান্ন কানে ন-গুনিয়াই চলিয়া যাইতাম, যেমন আরও অনেকে যায় । হরিচরণ তাহা বোঝে নাই । আমার ব্যবসাদারিকে সে করুণার স্নিগ্ধতা বলিয়া ভুল করিয়াছিল। ভুল করিয়াছিল বলিয়াই সেই "করুণা’র ধারা যখন শুকাইয় উঠিয়াছে, সে টের পায় নাই, বা টের পাইলেও স্বীকার করে নাই। প্রথম দিন ও পরবত্তী দিনের ভাতের থালা হয়ত সমানই ভরা ছিল, কিন্তু তাহার সঙ্গে যে অভ্যর্থনাবাক্য উচ্চারিত হইয়াছে তাহার মাধুৰ্য্য পরিমাণে এক থাকে নাই । হরিচরণ তাহা টের পায় নাই এমন মনে করা কঠিন । শিশুরা ইত টের পায় বয়স্কদের আগে। কিন্তু টের পাইয়াও সেই ভাতের লোভ সে ছাড়িতে