পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8"לצ পারে নাই। পেট পুরাইবার আগ্রহে পিঠ শক্ত করিয় অবহেলার পদাঘাত সহ করিয়াছে, প্রতিবাদ করে নাই। ইহারই নাম আত্মচেতনার হ্রাস। ইহারই নাম আত্মার श्रृष्ट्र । সেই মৃত্যু যাহার মধ্যে ঘটিল, তাহার দৈহিক স্বাস্থ্য ও আয়ু টিকিল বা ন-টিকিল, কি যায় আসে তাহাতে ? হরিচরণ-আত্মসন্ত্রমহীন ভগ্নস্বাস্থ্য নির্বান্ধব ভিক্ষুক হরিচরণ মরিলে কাহারও কোন ক্ষতি নাই ; বরং লাভ আছে, যদি তাঁহাতে পৃথিবীর এক কুচি জঞ্জাল সাফ হইয়া পৃথিবীর সৌন্দৰ্য্য একটু বাড়ে। এ রকম করিয়া বাচিয়া কি করিবে হরিচরণ ? কিন্তু এই সহজ কথাটাই সে বুঝিতে চাহিত না । উচিত ছিল তাহার আত্মহত্যা করা, সে করিতে লাগিল বাচিবার জন্য সংগ্রাম। যত তাহার স্বাস্থ্য খারাপ হয়, ততই তাহার বাচিবার জন্য ব্যাকুলত বাড়ে। জীবনের উপরে কি অন্ধ আকর্ষণই যে থাকে মানুষের । অথচ, কেন ধে তাহার এমন উগ্ৰ বাচিবার তৃষা ছিল তাহাও তো কোন দিন বুঝিলাম না। জীবনে যাহার কোন উদ্দেশু থাকে, কিছু করিবার সংকল্প থাকে সাফল্যের সম্ভাবনা থাকে, সে বাচুক—তাহার বাচিয়া থাকিবার অধিকার আছে, প্রয়োজনও আছে । কিন্তু যাঙ্গর সম্মুখে ইহার কিছুই নাই, ভবিষ্যৎ যাহার চক্ষে নিছিদ্র অন্ধকার মাত্র, সে কেন বঁাচিতে চায় ? তাহাকে কেন পৃথিবী অন্ন দিয়া আশ্রয় দিয়া বঁাচাইয়া রাখে ? যে অকৰ্ম্মণ্য জীব বাচিয়া থাকিয়া পৃথিবীকে কিছুই দিতে পারিবে না, তাহার নিজের অন্ধের মূল্যটাও পরিশোধ করিয়া যাইবে না, শুধু তাহার রোগক্লিন্ন দেহের পূতিগন্ধে আর দুঃখদুর্ভাগ্যের করুণ বিলাপে বাতাস ভারাক্রান্ত করিয়া চারি পাশের সুস্থ মানুষদের স্বাচ্ছন্দ্যকেই ক্ষুঃ, স্নান করিয়া তুলিবে, কি প্রয়োজন তাঁহাকে বাচাইয়া রাখিবার ? তাহার চেয়ে যদি সে মরিয়াই যায়, এবং তাহার জড়পিও দেহটাকে টিকাইয়া রাথিতে যে-অল্পবসনটার অপচয় হইত সেইটা পৃথিবীর সুস্থ সবল মানুষদের কৰ্ম্মক্ষমতাকে বাড়াইয়া তুলিবার কাজে নিযুক্ত হয়, তবে কি বিশ্বসংসারে খুব একটা অবিচার বা অনাচারের অনুষ্ঠান ঘটে? প্রৱালী ృe8ట్ర & কে বিশ্বসংসারের স্রষ্ট বা নিয়ন্তা, এবং হরিচরণদের স্বষ্টি করার খেলায় কি তাহার উদ্বেত, জানি না । কিন্তু মুখোমুখি তাহার দেখা পাইলে প্রশ্নটা একবার তাহাকে করিতাম। নিজে ইহার উত্তর খুজিয়া পাই নাই। আমার মনে ইহার যে-উত্তর এক-এক সময় আসে, তাহা উচ্চারণ করিয়া বলিলে পৃথিবীমৃদ্ধ মানুষ ছুটিয়া আসিবে আমার গলা টিপিয়া দিতে। বিধাতার সাক্ষাৎ এক বার পাইলে তাহাকেই জিজ্ঞাসা করিতাম, সত্য কোনটা—আমার উত্তরট, না গল-টিপুনিটা । হরিচরণকে দেখিয়া এই প্রশ্ন আমার মনে প্রথম জাগে নাই। তাহাকে দেখিয়া প্রশ্নটা মনে পড়িত। মাঝে মাঝে মনে হইত, ঐ তো উহার অবস্থা ; যদি কেহ উহাকে ডাকিয়, যা-কিছু সুখাদ্য ওর খাইবার ইচ্ছা আছে ভরপেট খাওয়াইয়া, শেষে ওর অজ্ঞাতেই এক ঢোক পটাসিয়ম্ সায়ানাইণ্ড ধাওয়াইয়া দেয়,—সে কি পাপ করিবে, না পুণ্য করিবে ? হরিচরণের আত্মা তাহাকে আশীৰ্ব্বাদ করিবে, না অভিসম্পাত ? ইহার পর কিছু দিন আমি নিয়মিত বরিশালে ছিলাম না। কলেজের কাজট ছিল কয়েক মাসের জন্য ঠিক, সেটার মেয়াদ শেষ হইয়া গেল ; আমি কিছু দিন এখানে, কিছু দিন ওখানে করিয়া বেড়াইতেছিলাম। মাঝে মাঝে বরিশালে আসিয়া দিন-কয়েকের জন্য ঢু মারিয়া যাইতাম । ইহারই মধ্যে লক্ষ্য করিলাম, হরিচরণ আর বড় আসে না। জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম, সে বরিশালেই আছে। কে এক জন নাকি তাহাকে ভরসা দিয়াছেন, আর কিছুদিন গেলে হাসপাতালের লোকেরা তাহার কথা হুলিয়া যাইবে, তথন তাহাকে তিনি আবার ভৰ্ত্তি করাইয়া দিবেন। সংবাদটা হরিচরণই মহা উৎসাহে আমাদের বাসায় আসিয়া বলিয়া গিয়াছে, এবং সেই ভরসায় অৰ্দ্ধাশনঅনশন সহিয়াও শহরের মাটি কামড়াইয়া পড়িয়া আছে । কিন্তু শহরে থাকিলেও এ বাসায় সে আসে না। এখানে যে তাহার যত্ন কমিয়া আসিয়াছে সেটা সে এত দিনে টের পাইয়াছিল।