পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহায়ণ আধুনিক কালে ভারতবর্ষে বিশেষতঃ বাংলাদেশে শিল্পবিস্তার పాలి এই খন্দর-আন্দোলন যে অনেকটা সহায়তা করিয়াছে সে-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই। তবে এই খন্দরআন্দোলনের একটা বিপরীত ফলও যে দেখা না যাইতেছে তাহা নহে। ভারতবর্ষে এক শ্রেণীর লোক আছেন র্যাহারা বলেন যে হস্তশিল্পই আমাদের একমাত্র কাম, মিল-কারখানা দেশের পক্ষে অশুভ। ইঙ্গদের সংখ্যা অল্প, এই রক্ষা। প্রায় সকলেই বুঝিতেছেন যে হস্তশিল্পের উন্নতি বাঞ্ছনীয় হইলেও মিল-কারখানা না হইলে দেশের মঙ্গল নাই। জগতের অন্মুক্ত দেশের সহিত প্রতিযোগিতা করিয়৷ চলিতে হইলে আধুনিক বিজ্ঞানকে বরণ করিয়া মইতেই হইবে, কলকারখানায় যাহাতে দেশ ছাইয়া যায় তাহার চেষ্টা করিতেই হইবে । এখন গরুর গাড়ীতে কলিকাতা হক্টতে দিল্লী লাহোর যাইবার পরিকল্পন একেবারেই অচল, রেল মোটর চাইই ; দিনকতক পরে এরোপ্লেনও চলিবে । আমাদিগকেও ক্রমে সেইগুলি তৈয়ার করিতে হইবে । নহিলে ভারতবর্ষ চিরদরিদ্র থাকিয়া ষাইবে । ভারতবর্ষের নানা স্থানে নানা প্রকার আধুনিক শিল্পের প্রচলন হইলেও বাংলাদেশে শিল্পোন্নতি খুব বেশী হইয়াছে তাত নহে। তবে বাঙালী এখন আর নিশ্চেষ্ট ভাবে বসিয়া নাই। এত দিন বোম্বাইয়ের মিলগুলি বাংলাদেশকে কাপড় যোগাইতেছিল, এখন বাংলায় কাপড়ের কল বসিতেছে এবং বিশ-বাইশটির উপর কল হইতে স্বতা ও কাপড় প্রস্তুত হইতেছে। তঁাতশিল্পেরও যথেষ্ট উন্নতি দেখা যাইতেছে । বাংলা সরকারের শিল্পবিভাগ ইতিমধ্যে সাত-আট হাজার উন্নত তাত বাংলার নানাস্থানে বসাইয়াছেন এবং তাত-শিল্প শিক্ষা দিবার জন্ত অনেকগুলি শিক্ষকের দল গ্রামে গ্রামে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে । দেশী চিনি এত দিন আসিতেছিল বিহার ও যুক্তপ্রদেশ হইতে ; এখন বঙ্গদেশেই সাত-আটটা চিনির কল বসিয়াছে। লবণ আসিত মাদ্রাজ ও এডেন হইতে ; এখন বঙ্গদেশেই লবণ প্রস্তুত করিবার জন্য চেষ্টা ૨C:-(t হইতেছে। কাচ, এনামেল ও পোস লেনের জিনিষ বাংলা দেশেই তৈয়ারি হইতেছে। ভ্যাকসিন, সিরাম, সাবান, এসিড, এলকোহল, ইলেক্‌টিক বলব, ব্যাটারী ও পাখা প্রভৃতি বাংলা দেশে এখন প্রস্তুত হইতেছে। বাঙালী বুদ্ধিমান, কিন্তু মুস্কিলের কথা এই যে সে দুৰ্ব্বল, শ্রমবিমুখ ও বাড়ী ছাড়িতে নিতান্তই অনিচ্ছুক, সেই জন্য বাংলায় যত সাহেব মাড়োয়ারী বা বাঙালীর শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়িয়া উঠিতেছে তাহার মজুর প্রভৃতি সবই প্রায় পশ্চিমা বা দক্ষিণের লোক । এমন কি বাংলা দেশে, বিশেষত: কলিকাতায়, অ-বাঙালীরাই ছুতার, মুদি, রাজমিস্ত্রী, মজুর, রিক্সওয়ালা এমন কি নাপিত, গোয়ালা, ফলওয়াল, মাছ-বিক্রেতা, পানওয়াল, ফেরিওয়ালার কাজ করিয়া অনেক পয়সা রোজগার করিয়া বঙ্গদেশ হইতে তাহাদের স্বদেশে প্রেরণ করিতেছে। বঙ্গদেশে শিল্পবিস্তারের পক্ষে বাঙালীর এই শ্রমবিমুখতা ও শারীরিক দৌৰ্ব্বল্য একটা প্রধান অস্তরায় । এই অন্তরায়ের প্রতিকার আলোচনা করিবার স্থান এখানে নাই, তবে বাঙালীর বুদ্ধিমত্তা ক্রমে ইহার প্রতিকার আবিষ্কার করিবে সন্দেহ নাই । সম্প্রতি আরও একটা নূতন কথা উঠিয়াছে। শিল্পজাত দ্রব্য ব্যবহারকালে ভারতের অন্তান্ত প্রদেশজাত শিল্পকে বাঙালী বাংলার শিল্পের সহিত সমান চক্ষে দেখিবে, না বাঙালী বাংলাজাত শিল্পকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করিবে ? কথাটা একটু জটিল বটে। বাঙালী এত দিন ভারতবর্ষকে অখও বলিয়াই জানিয়া আসিয়াছে, সে কখনও প্রাদেশিকতাকে প্রশ্রয় দেয় নাই। কিন্তু বস্ত্র, শর্করা, লবণ প্রভৃতি বাংলার উদীয়মান শিল্পকে রক্ষা করিতে হইলে বাঙালীকে বাংলাজাত দ্ৰব্যকে প্রথম স্থান না দিলে বুৰি এখন আর চলিতেছে না। মনে হয় ইহা আত্মরক্ষার অস্ত্র মাত্র, ইহাতে প্রাদেশিকতার গন্ধ নাই। আশা করা যায় ভারতের জঙ্কান্ত প্রদেশ বাঙালীৰে এবিষয়ে ভুল বুৰিবেন না ।