পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

繼 নিৰ্ম্মোক t কয়েক দিন হইল বিমল নিজের বাসায় আসিয়াছে নিজের আলাদা একটি চাকরও রাখিয়াছে, কম্বাইও হাও, রান্নাবান্না হইতে স্বরু করিয়া সব কাজকৰ্ম্মই সে নিপুণভাবে করে। পরেশ-দাই চাকরটি জোগাড় করিয়া দিয়াছেন, র্তাহার পিওন হরেনের ভাই যোগেন। সনাতন রীতি, হাসপাতালের চাকরই ডাক্তারবাৰুর বাসায় কাজ করিয়া থাকে। এই সনাতন রীতির ব্যতিক্রম হওয়াতে হাসপাতালের চাকর ভৈরব মনে মনে যৎপরোনাস্তি চটিয়াছিল। এত দিন ডাক্তার বাৰুর বাড়ীতে কাজ করার ওজুহাতে সে হাসপাতালের কাজে ফাকি দিত, ডাক্তারবাবুর বাজার-হাট করিয়া দিয়া দুই পয়সা উপরি রোজগার করিত, ডাক্তারবাবুর নিকট কিছু বেতনও পাইত। এই অদ্ভুত ধরণের নূতন ছোকরা ডাক্তারবাবুটি আসাতে সমস্তই ওলটপালট হইয়া গেল। সে বিমলের নামে স্বযোগ পাইলেই গোপনে একটু-আধটু নিন্দা করিতে লাগিল। কম্পাউণ্ডার গুপিবাবুও চটিয়াছিলেন। বিমলের কড়া হুকুম অম্বুসারে তাহাকে ঠিক ঠিক সময়ে হাসপাতালে হাজির হইতে হইতেছিল। এ তো বিপদ কম নয়। হাসপাতালে রোগী ঔষধ কিছু নাই, শুধু সেখানে গিয়া সময় নষ্ট করা । সকালবেলায় গঙ্গাস্নান করিয়া পূজা-আহ্নিকটা কোনক্রমে নমোনমো করিয়া সারিয়া ফেলিতে হয়, বৈকালে ছাতা ঘাড়ে করিয়া বাগদী-পাড়ায়, কুলি-পাড়ায়, মুসলমান-পাড়ায় ঘুরিয়া চার আনা আট আনা দক্ষিণ লইয়া একটু-আধটু প্র্যাকটিস তিনি করিতেন— র্তাহাকে দুই-চাবি আনা পয়সা দিলে হাসপাতাল হইতে দামী ঔষধ ভাল করিয়া মন দিয়া তিনি প্রস্তুত করিয়া দিবেন এই ভরসায় অনেক গরিব লোকই তাহাকে ডাকিত-“সেদিনকার ছোড়া’ এই ডাক্তারটা আসিয়া সমস্তই পণ্ড করিয়া ফেলিবার উপক্রম করিয়াছে। চৌধুরী মহাশয়কে বলিয়া ইহার একটা বিহিত করার প্রয়োজন গুপিবাৰু অমুভব করিতে লাগিলেন। চৌধুরী মহাশয় হাসপাতাল-কমিটির এক জন মেম্বার তো বটেনই, অন্যান্য মেম্বারদের উপরও র্তাহার আধিপত্য আছে। ধনী মহাজন তিনি অনেকেরই হাড়ির খবর রাখেন। বদিবাবুর মতন ছিদে লোকও চৌধুরীকে চটাইতে সাহস করেন না। নানা কারণে চৌধুরী মহাশয় গুপিবাবুর উপর প্রসন্ন। গুপিবাৰু তাহার বাড়ীর পুরোহিত, অমুখ-বিমুখ করিলে নাস, প্রতি সন্ধ্যায় পাশাখেলার সহচর এবং সৰ্ব্বোপরি স্বদক্ষ মোসাহেব । স্বতরাং কম্পাউণ্ডার হইলেও গুপিবাবু নিতান্ত অক্ষম লোক নহেন, ইচ্ছা করিলে অনেক কিছুই তিনি করিতে পারেন। অনেক ডাক্তার তিনি চরাইয়াছেন । বিমল যদিও মনে মনে গুপিবাবুর বিরুদ্ধভাবট। অনুভব করিতেছিল, কিন্তু সেজন্য তাহার বিশেষ চিন্তা হয় নাই । সে সেদিন সন্ধ্যায় শুইয়া শুইয়া চিন্তা করিতেছিল কি করিয়া হাসপাতালে কিছু ঔষধ জোগাড় করা যায়। ঔষধ না থাকিলে সে চিকিৎসা করিবে কি দিয়া । নন্দী মহাশয়ের বাড়ীতে সেদিন সে যে প্রেসক্লপ শন লিখিয়া দিয়া আসিয়াছিল তাহাতেই কাজ হইয়াছে, ফরসেপস্ লাগাইতে হয় নাই। জগদীশবাবুর চণ্ডীতলার মাটি এবং ভূখরবাবুর হোমিওপ্যাথির ফোটা যে তাহার কৃতিত্বকে খানিকটা হীনপ্রভ করিয়া দিয়াছে তাহা সে বুঝিতে পারে নাই। চণ্ডীতলার মাটির কথা সে শোনেই নাই । তাহার মনে হইল নুন্দী মহাশয়ের নিকট গিয়া হাসপাতালের দুরবস্থার কথা খুলিয়া বলিলে হয়তে তিনি কোন ব্যবস্থা করিয়া দিতে পারিবেন। সে উঠিয়া পড়িল । পরেশ-জাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া এখনই একবার গেলে হয় । কাল সমস্ত দিন হাসপাতালের কাজেকৰ্ম্মে অবসর পাওয়া যাইবে না। পোস্টাফিসে গিয়া দেখিল পরেশ-দা নাই, তিনি সারস্বত মন্দিরের মাসিক অধিবেশনে