পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্ৰছায়ণ नःिश्वांग्रञ। ২২১ সেদিন রবিবার। প্রতিবারের মত সেদিনও ঠিক সময়ে গিয়া আমার বাঞ্ছিত তীর্থে উত্তীর্ণ হইলাম । দেখিলাম স্বসজ্জিত সেলিনা কোমল নারাঙ্গী বর্ণের স্বচ্ছ ওড়নায় তাহার গোলাপী কপোলতল ও দেহাৰ্দ্ধ আচ্ছাদিত করিয়া হেমস্ত শিশিরক্ষাত স্নিস্কোজল প্রভাতকিরণে গাড়ীবারানার সম্মুখে হাস্যমুখে দাড়াইয়। রহিয়াছে। যদিচ সে বিশেষ করিয়া আমাকেই অভ্যর্থনা করিবার জন্তু আজিকার প্রাতে অপেক্ষা করিয়াছিল না ; তথাপি তাহাকে এইরূপ অভ্যর্থনার জন্য প্রস্তুত কল্পনা করিয়া আমার বুকের অস্তস্তল পৰ্য্যস্ত অব্যক্ত আনন্দে এবং দুরাশায় ফুরিত হইতে লাগিল। অগ্রসর হইয়া গিয়া আমার প্রাণের কথাগুলিতে পরিহাসের স্বর লাগাইয়া বলিলাম—আজ আপনার সৌন্দৰ্য্য আমার কল্পনাকেও হার মানাইয়াছে। কথাটা গায়ে না মাখিয়া সে হাসিয়া বলিল—জানেন আজ আমার জন্মদিন। আমাদের দেশে যদিও মেয়েদের জন্মদিনের কোন মূল্য নাই, তথাপি আমার ভাইয়ের খেয়াল—তিনি বরাবরই এই দিনটিতে আমাকে একটি করিয়া নূতন পরিচ্ছদ উপহার দেন। এই পরিচ্ছদটি কাল পাইয়াছি। কেমন মানাইয়াছে বলুন ত? —চমৎকার! ঠিক মনে হইতেছে ত্রিদিবের সমস্ত জ্যোতি হরণ করিয়া স্বৰ্গ হইতে নামিয়া আসিয়া এইমাত্র দাড়াইলেন এবং আপনার অভাবে স্বর্গে এত ক্ষণে অন্ধকার নামিয়াছে। কিন্তু এ কি অন্যায় ! আপনার যে আজ জন্মদিন তাহা আমাকে পুৰ্ব্বে জানান নাই কেন ? তাহা হইলে— - না, ন, ওটা আমার ভাইয়ের একটা খেয়াল মাত্র। আচ্ছা চলুন আপনাকে বাগানেই লইয়া যাই। আজ বাগানের সমস্ত ফোয়ারাগুলি খুলিয়া দিতে বলিয়াছি। সকাল বেলা সুৰ্য্যরশ্মিতে ফোয়ারাগুলিকে দেখিতে আমার ভারি ভাল লাগে । —চলুন, কিন্তু...। বলিয়া যেন নিতান্ত উন্মনস্ক ভাবেই সেলিনার পাশে পাশে চলিলাম । বিস্তৃত উষ্ঠান । তাহার একটা দিক্ গিয়া নদীর মধ্যে ঢলিয়া পড়িয়াছে। সেই নী, निकुम्नेॉग्न छ्-छप्न একটা পাথরের উপর গিয়া দাড়াইলাম। বিরাট ব্যাপ্ত বারিরাশির ওপারের বনরেখা ইহুদী স্বন্দরীর ভ্ৰলেখার মত সরু হইয়া বাকিয়া গিয়াছে। প্রভাতের বায়ুম্পর্শে বাচিমাল-পরিশোভিত নদীর চঞ্চল জলস্রোত স্বৰ্য্যকিরণে ঝলিভেছে। ফোয়ারার নিরবচ্ছিন্ন ঝন্ধর সঙ্গীত ও পত্রের মৰ্ম্মর ধ্বনিতে মিশিয়া আমার মস্তিষ্কের শিরা-উপশিরার মধ্যে রক্তস্রোতকে চঞ্চল করিয়া তুলিতেছে। স্নিগ্ধমন্দপবনচালিত সিক্ত মুক্তিকা এবং গোলাপের মিশ্রিত স্বগন্ধ আমার বস্তুচেতনার উপর এক প্রকার মাদকতার মোহ সঞ্চারিত করিয়া অস্তরে অস্তরে আমাকে বিহ্বল করিয়া তুলিতেছে। এই ষে রমণী তাহার অপরূপ রূপলাবণ্যের জ্যোতিতে আকাশ ও : পৃথিবীকে প্রাণে ও আনন্দে পূর্ণ করিয়া আজ এই বিশেষ একটি প্রভাতের পরম ক্ষণটিতে আমার পাশ্বে আসিয়া দাড়াইল আমার জীবনে ইহার কি কোন স্থদুর্লভ সার্থকতা নাই ? সুন্দর দুটি চক্ষু কি আমার গভীরতম চিত্তকে বিশেষ করিয়া আজ স্পর্শ করিতেছে না ? ছন্দোময় দেহমাধুর্য্যের লীলায়িত আহবান আজ এ কাহাকে স্বাক্ষা করিয়া ? বাহির হইবার পূর্বেই সেদিন বোধ হয় পান করিয়াছিলাম কিঞ্চিৎ অধিক মাত্রায় । বাস্তব জগতের সমস্ত চিন্তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হইয়া গিয়া এক অপরূপ রূপকথার মায়ালোকে যেন উত্তীর্ণ হইয়াছিলাম। সেখানে "অসম্ভব” বলিয়া কোন স্পৰ্দ্ধার কথা কেহ উচ্চারণ করে না ; কোন সাহসিকতাই সেখানে দুঃসাহস নয় ; কোন দুরাকাঙ্ক্ষার বস্তুই সেথানে অপ্রাপ্য নয়। বিশ্বপ্রকৃতির উদ্ভাসিত সৌন্দৰ্ঘ্য পরিবেষ্টনের অভ্যস্তরে সেলিনার অপার্থিব রূপের অনতিক্রমণীয় মোহ আমাকে ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিতেছিল। পরিপূর্ণ আবেগকে প্রাণপণে দমন করিয়া বলিলাম— আজ আপনার জন্মদিনে আপনার উপযুক্ত উপহার দিবার শক্তি বোধ হয় বিধাতারও নাই। আজ আমাকে অনুমতি করুন ; আপনারই রচিত উষ্ঠানের একটি গোলাপ আপনাকে উপহার দিয়া ধন্য হইব। শত চেষ্টা সত্বেও কণ্ঠস্বরকে স্বাভাৰিক ৰাখিতে