পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহায়ণ শাখারীদের ঘাটি, কাসারীদের কারখানা, কৰ্ম্মকারের ভাতি, কুম্ভকারের চাক এবং তত্ত্ববায়ের তাত সম্বন্ধে অনেক জ্ঞাতব্য কথা আমাদের সাহিত্য হইতে বাদ পড়িয়া গিয়াছে । ইহাদের পারিভাষিক শব্দগুলি প্রাকৃতেরই প্রকৃত বংশধর । কত রকম ব্যবসায়ের পথ ধরিয়া এ-দেশের কত দরিদ্র লোক জীবিকা নিৰ্ব্বাত করিয়া থাকে। ছুতারমিস্থির হাতিয়ারগুলিতে, পটুয়ার রঙের তুলিতে, জেলেদের জাল-বুননিতে এবং তেলীদের তেলের ঘানিতে অনেক রকম দেশজ শব্দের সান মিলে। কুলীমজুরের কুঁড়ে ঘরে, বরোজের পানের বরে, কি বেপারীদের কেনাবেচায়ও ঐরূপ শব্দের যথেষ্ট আনাগোনা দেখা যায়। আবার কতকগুলি দেশজ শব্দ মাঝির খেয়াঘাটে, ধোপার পাটে এবং নাপিতের নরুন-কাচিতেও বাচিয়া রহিয়াছে । গ্রামের “খেজুরিয়া’র খেজুর গাছ কাটিয়া রস বাহির করে, “গর্জনিয়া’রা গর্জন গাছের তেল নিংড়ায়, গাড়োয়ান গাড়ী চালায়, বেহারী পান্ধী বয়, ‘মাটিয়ালেরা মাটি কাটে এবং ‘পাটিয়ালে’র পাটি তৈয়ার করে । ইহাদের কাজকৰ্ম্মের ভাষায়ও অধিকাংশ দেশজ শব্দের পরিচয় আছে। পাড়াগায়ের বাশের ঘরে চালাভিটি এবং বেড়ার কত প্রকারভেদ দৃষ্টিগোচর হয়। এরূপ ঘরের এক-একটি প্রকোষ্ঠ এক-এক নামে অভিহিত হইয়া থাকে । গৃহস্থের বাড়ীর উঠান এবং আস্তাকুড়ের বিভিন্ন দিকের বিভিন্ন নাম আছে । বাড়ীর চারি দিক্ রক্ষার জন্য নানা রকমের ঘেরা ও টেংরা দেওয়া হয় । গ্রামের ডোবা এবং পুকুরের জলাংশ কখনও এক নামে পরিচিত হয় না। পল্লীবাসীর গৃহস্থালীতে কত আসবাবপত্র, রান্নাঘরে কত অবয়বের চুল্লী, হাড়ি-সরায় কত রকমারি এব" টে কিশালায় কত সরঞ্জামাদি রহিয়াছে। এ সকল স্থান হইতে প্রাকৃত শব্দ খুজিয়া বাহির করিতে হইবে। কবিরাজী শাস্ত্রে যে-সব লতাপাতার টোটক৷ ঔবধ এবং অনুপানের ব্যবস্থা রহিয়াছে, স্থানীয় নাম না জানাতে আমরা অনেক সময় সেগুলি চিনিয়া লইতে পারি না । কোন কোন শাকসঞ্জীর, গাছগাছড়ার মাছ-তরকারির পশুপাখীর এবং ফলফুলের নামের মধ্যেও স্থলভেদে কিছু বাংলা সাহিত্যে জাহরণ ২২৯ কিছু তারতম্য দেখা যায়। একই দ্রব্য বাংলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে অভিহিত হইয়া থাকে। কলিকাতায় যাহাকে লেঠা মাছ বলা হয়, স্থলভেদে উহা টাহি’, ‘টাকি এবং ‘গড়ই' ইত্যাদি কত নাম পরিগ্রহ করিয়াছে ! কাঠবিড়ালীকে কোন জায়গার লোকে ‘চোলা’ এবং অন্য কোন জায়গার লোকে ‘চোরগোটা’ও বলিয়া থাকে । বাতাবী লেবুর নাম কোথাও 'কল্লাল, কোথাও তরুঞ্জা । শুধু ‘ওল বলিলে চট্টগ্রামবাসীর কচুজাতীয় ওলকে না বুঝিয়। বেণ্ডের ছাতাকেই বুঝিয় লয় । ‘মরিচ শব্দটা এ অঞ্চলে লঙ্কারই অর্থ সুচনা করে। আমাদের ভাবী অভিধান সঙ্কলনের সময় এই জাতীয় শব্দগুলির স্থলভেদে বিভিন্ন নামেরও উল্লেথ করিতে হইবে । বাংলার পল্লীভাষা প্রবাদ-প্রবচনে ভরপুর। এগুলির একটা নৈতিক দিক আছে । কোন কোন প্রবচন সমাজ শাসনের অমোঘ আইনরূপে গণ্য হয় । যাহারা ছন্দ সম্বন্ধে তত্ত্বাতুশীলন করিবেন, ছড়াজাতীয় প্রবচনগুলির দিকে দৃষ্টিপাত করা উহাদের সর্বাগ্রে প্রয়োজন। খুব সহজ ও সরলভাবে উপাস্ত স্বরের মিল দেওয়াই এ প্রবচনগুলির বিশেষত্ব । যেমন— سسجدج إ}نة ج ) نة تنتج পেদির ৩ তলা8 । অর্থ—যাহার হাটের নেন খায় তাহার ছে’ড়া কাপড় পরিয়াই থাকিবে, কোন দিনই অবস্থাপন্ন হইতে পারিবে না। এখানে নেন’ শব্দটির সহিত "লাভ' শব্দের বহু তফাৎ । اسس-Fig لا يخ ؟ ছেপরে ২ উত্তর । অর্থ—পরের ঘরে খুধু ফেলারও ভয় বেশী । আবার কোন কোন প্রবচনে উপাস্তস্বরের মিলগুলি ছত্রের প্রথম দিকে আসিয়া অপূৰ্ব্ব ছন্দের অবতারণা করে। যথা, ১ হাডর = হাটের । ২ নেন। - মিথ্যা বলিয়া কেনা দাম হইতে বেশী লওয়া । ৩ পোদর = অপাঙ্গের । ৪ তেনা= ছেড়া কাপড় । ১ পর= পরের। ২ ছেপের=খুধুকে