পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জগ্রহণয়ঃ গামেলান যন্ত্র, সে মাঝখানে । হাতে আছে বৰ্ম্মী নাচিয়েদের মত হাতপাখা, এদেশী ধরণে কাপড়ে তৈরি। যুবকটি ষে বসে ব’সেই নাচবে আমি তা মোটেই ভাবি নি । গামেলান সঙ্গীত বাজছিল । আমি শুনলাম সেট। বাজনায় উদ্বোধন সঙ্গীত । বাজনা শেষ হ’ল । অল্প পরেই সশঝে যেই গামেলান যন্ত্র, ঢোল ও বড় বড় কাসার করতালে বাজনা মুরু হ’ল, দেখি শাস্তশিষ্ট যুবকটি ডান হাতে পাখাটিকে খুলে ধরেছে একটি বিশেষ ভঙ্গীতে, বঁ হাত বা দিকে সোজা টান হয়ে আছে, আঙলের একটি স্বন্দর মুদ্র । পিঠ সোজা ও বুক টান করে বা দিকে কাত হয়ে ব’সে বড় বড় চোখে সামনে তাকিয়ে কি যেন দেখছে আশ্চৰ্য্য হয়ে, দে’ন হাতের পাখাটি থরথর করে কঁপিছে । হঠাৎ বাজনার সঙ্গে এই ভঙ্গী দেখে আমার মনে হ’ল, যুবকটির দেহের ভিতর দিয়ে বুঝি বিদ্যুং খেলে গেল । ধ" করে এত দ্রুত এ ভাবে ভঙ্গী ক’রে নীচ সুরু হবে, আমার কল্পনার বাইরে ছিল । বাজনার সঙ্গে এত দ্রুত ভঙ্গীর পরিবর্তন এ-নাচের একটা বিশেষ গুণ । গামেলান সঙ্গীতের ভিতর কতকগুলি ছোট বা বড় অংশ আছে, যার তুলনা করা যেতে পারে আমাদের দেশের পাখোয়াজের বা খোলের তালের তোড়া বা পড়মের সঙ্গে । মাঝে মাঝে এই ধরণের বাজনার সঙ্গে মাচিয়ের অতি দ্রুত ভঙ্গী দেখবার মত ; এক্ট পদ্ধতিই দর্শকদের মন বিশেষ ক’রে আকর্ষণ করে । বাঙ্গনার নানা বৈচিত্র্যের সঙ্গে নানা ভাবে নাচের ভঙ্গী বদল হ’তে লাগল । মাঝে মাঝে বা হাতে কাপড়ের আঁচলটি বেশ কায়দা করে আঙলের ডগায় তুলে ধরে, আধবস অবস্থায় তালের সঙ্গে লাফাতে লাফাতে কয়েক ফুট এগিয়ে এসে বসে পড়ল। কখনও আবার এই ভাবেই একই জায়গায় একটি পাক খেয়ে নিল । এদিকে একই সঙ্গে মুখের ভাবের বিচিত্র পরিবর্তন দেখবার মত। কখনও মনে হচ্ছে যেন কিছু দূরে কি একটা দেখতে পাচ্ছে, যেন স্পষ্ট নয়, ভাল ক’রে দেখবার চেষ্টা করছে। কখনও মনে হ’ল, কি দেখে নাচিয়ে যেন অন্তান্ত ভীত, পরক্ষণেই হাসিমুখ, ধেন

  • ー>ミ

૨8છે ভয়ের কিছুই নেই, মিছে ভয় । কখনও মনে হ’ল যেন চোখের ইঙ্গিতে কাকে সে কি ইশারা করল, যেন কাউকে ডাকছে। আবার কখনও চোখে মুখে একটা ভাবোন্মত্ততা ফুটে উঠল । এ ধরণের নানা প্রকার অভিনয়ের সঙ্গে হাতে দেহে মাথায় যত প্রকার ভঙ্গী করা সম্ভব তাই সে ক’রে যাচ্ছে । কখনও ডান হাতে পাখাটিকে এমন ভাবে ঘোরাচ্ছে যেন মনে হবে নাচতে নাচতে সে ক্লান্ত, তাই একটু হাওয়া খেয়ে নিল । আর সব সময় দেহে একটা দোলা ও ঘাড়ের কাজ, অর্থাৎ মাথাটিকে বাজনার লয়ে ক্রমাগত এ-পাশে ও-পাশে নাচাবে—আমাদের প্রাচীন নৃত্যশাস্ত্রে যার ব্যবহার কেবল আদিরসাত্মক অভিনয়ের জন্যেই লেখা হয়েছে— বৰ্ত্তমানে যার পরিচয় আমরা কথাকলি, কখক ও বাইজীদের নাচে পাই ; ভারতের বেশীর ভাগ আধুনিক নৰ্ত্তকনর্তকীরাও এর চর্চা করেন । গামেলান সঙ্গীত যে ভাবে যত রকমে বাজল, নাচিয়ে ঠিক তাকে লক্ষ্য ক’রে মুন্দর ভাবে মিলিয়ে নেচে গেল । একটি বাজনার দলে প্রায় পনরটির উপর যন্ত্র থাকে, বাজিয়ের অভ্যাসে এত পাকা যে কখনও কোন বাজনায় কাউকে একটুও গোলমাল করতে দেখি নি। এই নাচটি শেষ পৰ্যন্ত দেখে আমার মনে হ’ল ইউরোপের আধুনিক ভাব-নুভোর দলে একে অনায়াসে স্থান দেওয়া যেতে পারে । মারিয়ে নাচের সময় কখনও কখনও এমন সব নূতন ভঙ্গীর স্থষ্টি করে যা সে আগে কখনও ভাবে নি। নাচের শেষে সে নিজেও সে-ভঙ্গীর বিষয় মনে আনতে পারে না । তাকে প্রশ্ন করলে সে বলে, নাচের সময় গামেলান সঙ্গীতই যেন তাকে নাচায়, সে যে নিজে নাচছে গামেলান সঙ্গীত লক্ষ্য ক’রে, এ তার মনেও থাকে না । কয়েক বৎসর হ’ল মারিয়ো কবিয়ার নাচে একটি নুতন পদ্ধতির আমদানি করেছে—এখনো তা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে নি। গামেলান বাজনার যন্ত্রগুলির ভিতর “রেয়ুং” নামে একটি যন্ত্র আছে। কাসার তৈরি তেরটি ছোট ঘণ্ট, স্বরের উচুনীচুর উপর নির্ভর করে পর পর সাজানো—দুই হাতে দুটি মোটা কাঠি নিয়ে চার জনে এক