পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আচাৰ্য্য জগদীশচন্দ্র বসু ঐউমেশচন্দ্র সেন, এম. এসসি, আচার্য্য জগদীশচন্দ্রের কথা বলিতে গেলেই তাহার বিরাট প্রতিভার কথা মনে পড়ে । সেই প্রতিভার পরিচয় প্রদান এই প্রবন্ধের উদ্বেগু নহে ; তাহার চরিত্রের শিক্ষাপ্রদ ও আনন্দদায়ক কয়েকটি বৈশিষ্ট্য মাত্র ইহাতে আলোচিত হইবে । আচাৰ্য্যদেব এক দিন বস্থবিজ্ঞান-মন্দিরের কয়েক জন কৰ্ম্মীকে বলিয়াছিলেন, “তোমাদের এত অসুখ হয় কেন ? আমার ত তোমাদের মত এত অস্থখ হয় না । যার লাইফ মিশ্যন আছে, সেই মিশুন শেষ না হ’তে তার কোন অসুখ হ’তে পারে ? আমি জানি আমার যেদিন কাজ শেষ হবে সেদিন আমি আর এই পৃথিবীতে থাকব না ।” দেশবাসীর অজ্ঞাত নাই যে এতদ্দেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা জ্ঞানের পরিধি বিস্তার এবং ভবিষ্যদ্বংশীয়দের বিজ্ঞানসাধনার পথ সুগম করাই তাহার জীবনের ব্রত ছিল, এই রতসাধনেই তিনি দেহ-মন-প্রাণ নিয়োগ করিয়াছিলেন এবং ঐকাস্তিক সাধনার ফলে তাহাতে আশ্চর্য্যরূপ সিদ্ধিলাভও করিয়াছিলেন। আচাৰ্য্যদেবের বহুমূত্র রোগ ছিল, এতদ্ভিন্ন কিন্তু অন্য কোন অমুখ-বিমুখ তাঃার বড় একটা দেখা যাইত না ; তবে অতিরিক্ত পরিশ্রমের দরুণ কখনও কখনও তাহার অবসাদ দেখা দিত। তখন ডাঃ সরু নীলরতন সরকার আসিয়া কয়েক দিনের জন্য তাহাকে পূর্ণ বিশ্রামের ব্যবস্থা দিতেন। কিন্তু এমনই তাহার কৰ্ম্মপ্রবণতা ছিল যে দুই-এক দিনের বেশী বিশ্রাম লওয় তাহার পক্ষে সম্ভব হুইত না । ল্যাবরেটরিতে যাইতে পারিতেন না বলিয়। পরীক্ষার ফলাফল জানিবার জন্য উদ্‌গ্ৰীব হইয়া থাকিতেন এবং নিজ শয়নকক্ষে কৰ্ম্মীদিগকে ডাকিয়া পাঠাইতেন । তথায় তাহার পূর্ণ বিশ্রামের রকম দেখিয়া কৰ্ম্মীরা অবাক হইয়া যাইত । দেখিত দেশী-বিদেশী অনেক সাময়িক পত্র, নাটক-নভেল তাহার বিছানায় ছড়ান, সেইগুলি পড়িয়া তিনি চিকিৎসক নিদিষ্ট পূর্ণ বিশ্রাম গ্রহণ করিতেছেন । কৰ্ম্মাদিগকে দেখামাত্রই বলিয়া উঠিতেন, “কি-কি-কি হ’ল ?” অর্থাৎ, পরীক্ষার কি ফল হইল । নিজের জীবনব্রত সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন বলিয়া আচাৰ্য্যদেব স্বাস্থ্যরক্ষণ বিষয়ে খুব যত্নবান ছিলেন । আহার-বিগরে তিনি অতিশয় মিতাচারী ছিলেন । তিনি সন্ধার সময় মাঠে গিয়া অনেকক্ষণ মুক্ত বায়ুতে পদচারণ করিতেন, সপ্তাহাস্তে দুই-এক দিনের জন্য কলিকাতার বাহিরে চলিয়া যাইতেন, এবং পূজা কিংবা গ্রীষ্মের দীর্ঘ অবকাশগুলি দার্জিলিং কিম্বা অন্য কোনও স্বাস্থ্যকর স্থানে কাটাইতেন । তিনি সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করিতেন, কিন্তু রাত্রিতে বিশেষ কোন কাজ করিতেন না । মধ্যাহ্নে আহারের পর তাহার একটু নিদ্রার অভ্যাস ছিল। র্তাহার বন্ধু রবীন্দ্রনাথের দিবানিদ্রার অভ্যাস নাই । শুনা যায়, এক সময়ে দুই বন্ধু যখন একত্রে শিলাইদহে কিছুদিন নৌকাবিহার করিয়াছিলেন, তখন মধ্যাহ্নের আহারের পর নিত্রী যাইবার পূৰ্ব্বে বৈজ্ঞানিক, কবিকে ঐ সময়ের মধ্যে একটি ছোট গল্প লিখিয়া রাখিতে বলিতেন ; এবং তিনি নিদ্রা হইতে উঠিলে কবিবর র্তাহার লিখিত গল্পটি পাঠ করিয়া শুনাইতেন । এইরূপেই নাকি গল্পগুচ্ছের অনেক গল্পের স্বচনা হয় । আচার্য্য জগদীশচন্দ্র সাধকোচিত নিষ্ঠ লইয়া তাহার সাধনায় অবতীর্ণ হইয়াছিলেন । তিনি র্তাহার দীর্ঘজীবনে এই দেশের মধ্যে কত নূতন নূতন আন্দোলনের উদ্ভব ও লয় দেখিয়াছেন, কিন্তু বিজ্ঞানসাধন ছাড়িয়া বা কিছু কালের জন্য বন্ধ রাখিয়া তিনি কোন দিন কোন আন্দোলনে যোগদান করেন নাই । বিজ্ঞানেতর বিষয়ে তাহার যে আকর্ষণ ছিল তাহাও তিনি সবল হস্তে ছিন্ন করিয়া ফেলিয়াছিলেন। বস্থবিজ্ঞান-মন্দিরের এক জন কৰ্ম্মীর কংগ্রেসের প্রতি অনুরাগ ছিল । তিনি অবসরকালে