পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহায়ণ আচার্য্য জগদীশচন্দ্র বস্তু ২৫৭ এক খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক আচার্য্যদেবকে বলিয়াছিলেন, “ডক্টর বোস, আপনার অন্ততঃ দু-একটি পরীক্ষা fail করা উচিত, নইলে লোকের বিশ্বাস হবে কেন ?” নিজের উদ্ভাবিত যন্ত্রগুলি সম্বন্ধেও তিনি এই নীতিই অবলম্বন করিতেন । কোন একটি যন্ত্রকে পুনঃ পুনঃ ভাঙিয়া গড়িয়া কার্য্য কারিত fর দিক হইতে উহাকে যত দূর সম্ভব উৎকৃষ্ট করিতেন । তারপর সৌন্দয্যের দিক হইতে আবার উহার সংস্কার আরম্ভ হইত। আর কিছু করিবার না থাকিলে Èzttt arge ‘handy’ ‘more compact’, w grz: oito; বহু সময় ও শক্তিব্যয়ে নিৰ্ম্মিত জিনিষটাকে ভাঙিয়া ফেলিতে তাহার একটুও মায়া হইত না । বাস্তবিক পক্ষে ক্রমাগত ভাঙা এবং গড় ষ্টকাই ছিল বস্তুবিজ্ঞান-মন্দিরের নিয়ম | পরীক্ষালব্ধ ফলগুলি লিপিবদ্ধ করিয়া তিনি গ্রন্থ প্রণয়ন করিতেন । লিখি বার জন্য র্তাহার একটি নির্দিষ্ট কক্ষ ছিল , তথায় গিয়া লিখিতে বসিলেক্ট নাকি তাহার লিথিতে ইচ্ছা হষ্টত । এই গ্রন্থ-প্রণয়ন ব্যাপারেও র্তাহার অধাবসায়ের অবধি ছিল না । পাণ্ডুলিপি যেমন যেমন ‘portable' oat:cza লেখা হঠত অমনি সঙ্গে সঙ্গে তাঁহা টাইপ করাইয়া চিত্রের সমাবেশ থাকে—যস্থ, বিষয়ভেদে যন্ত্রসমাবেশ, পরীক্ষালব্ধ রেকর্ড, গ্রাফ ইত্যাদির চিত্র । বিশেষ সতর্কতার সহিত তিনি চিত্র প্রণয়ন করাইতেন ও নিৰ্ব্বাচন করিনে । লিপিয়া যাইবার পরে পরীক্ষায় কোন মতন ফল পাইলে লিখিত অংশগুলি আবার নূতন করিয়া লিখিতেন ও টাইপ করাইতেন । আবার মনে ভাবাস্তর উপস্থিত হইলেও নূতন করিয়া লেথ ও টাইপ করার প্রয়োজন হষ্টত । এইরূপ পরিবর্তনের ফলে পুস্তকের পত্রসংখ্যার পরিবর্তন হইল, তথন আবার নূতন করিয়া পত্রাঙ্ক দিলেন, চিত্রসংখ্যার পরিবর্তনে নূতন করিয়া চিত্রাঙ্ক দিলেন। কিন্তু পুনঃ পুনঃ পরিবর্তনের বহু অসুবিধা সত্ত্বেও তিনি ইহাতে কিছুমাত্র আলস্তবোধ করিতেন না। এইরূপে বহু পরিবর্তন ও পরিবর্দ্ধনের পর মনঃপূত হইলে তবে পাণ্ডুলিপি প্রেসে পাঠাইতেন । নিজের আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক সভ্যগুলি প্রচারের vరిvరి-)\రి লঠতেন । বৈজ্ঞানিক গ্রস্থে অনেক প্রকার 零牙寺 জন্য তিনি অনেক বার ইউরোপে গিয়াছিলেন । সত্যের আবিষ্কার অপেক্ষাও প্রচারে বোধ হয় র্তাহাকে বেশী বেগ পাইতে হইয়াছিল । তাই তিনি এক দিন বলিয়াছিলেন—“সত্য গ্রহণের জন্য দুনিয়াতে কেউ ষ্টা ক’রে বসে নেই।” কাজেই ইউরোপ-যাত্রার পূৰ্ব্বে তথায় অনেক বিরোধিতার সম্মুখীন হইতে হইবে জানিয়া তিনি বিশেষভাবে প্রস্তুত হইয়াই যাইতেন । A৪cent of sap কিংবা Photosynthesis বিষয়ে গবেষণার পর, ইউরোপে গিয়া যে বক্তৃতাগুলি দিবেন তাহারই একটি বক্তৃতা প্রস্তুত করিয়া যাত্রার প্রাক্কালে কলিকাতাতেই এক দিন তাহা প্রদান করেন । বস্থবিজ্ঞান-মন্দিরের সভাগৃহে যন্ত্র ও পরীক্ষাদি সহায়ে যথারীতি বক্তৃতা-সমাপন করিয়া তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “কত সময় লাগল ?” শ্রোতৃমণ্ডলীর ( কেবল বিজ্ঞান-মন্দিরের কৰ্ম্মীবৃন্দ ) এক জন বলিলেন, “দেড় ঘণ্টা।” আচার্য্য বলিলেন, “তবে ত হ’ল না। বিলাতের লোকের অত সময় নেই ; এক ঘণ্টায় বক্তৃতা শেষ করতে হবে।” দুই-এক দিন পরে আবার ঐভাবে বক্তৃতা দিয়া যখন দেখিলেন এক ঘণ্টায় বক্তৃত। শেষ হইয়াছে তখন সস্তুষ্ট হইলেন । দৈবের উপর তিনি বিন্দুমাত্রও নির্ভর করিতে চাঠিতেন না। সময় পাইলে তিনি পুৰ্ব্ব হইতেই বক্তৃত৷ প্রস্তুত করিয়া লইতেন ; অবশ্রা প্রস্তুত না হইয়াও সুন্দর বক্তৃতা করিতে পারিতেন । র্তাহার বক্তৃত৷ শুনিবার জন্য লোকের আগ্রহের অবধি থাকিত না। তাহার প্রতিভামণ্ডিত মুখমণ্ডল, মধুর কণ্ঠস্বর, দুরূহ বৈজ্ঞানিক বিষয় প্রাঞ্জলভাষায় বুঝাইবার ক্ষমতা, তাহার প্রদর্শিত বিচিত্র পরীক্ষাসকল শ্রোতুমণ্ডলীকে মুগ্ধ করিয়া ফেলিত । বক্তৃতার সময় শ্রোতুমণ্ডলীর কাহারও উঠিয়া যাওয়া তিনি অপছন্দ করিতেন । তিনি নিজে কাহারও বক্তৃতা শুনিতে গেলে উহা শেষ না হওয়া পৰ্য্যস্ত কখনও উঠিতেন না এবং অপরকেও ঐরূপ করিতে উপদেশ দিতেন । “গুণী গুণং বেত্তি ন বেত্তি নিগুণঃ”—এই বাক্যের সার্থকতা আচাৰ্য্যদেবের চরিত্রে খুবই দেখা গিয়াছে।"