পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԳ8 হইয়াছে—তাহাজের প্রতিনিধিসমষ্টিকে সংখ্যালঘু করা হইয়াছে। ইহা অত্যন্ত অন্যায়। অতএব, ইংরেজপ্রভূত্বের অস্তিত্ব অন্যায় ব্যবস্থা নিবারণের নিমিত্ত, ইহা সত্য নহে । ইংরেজ কি উদ্দেশ্যে প্রভু হইয়া আছেন, তাহা সুবিদিত ; তাহার পুনরুল্লেখ অনাবশ্বক। সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে, শ্রেণীতে শ্রেণীতে, ভিন্ন ভিন্ন প্রকার জনসমষ্টিতে জনসমষ্টিতে অমিল ঈর্ষ্য দ্বেষ বিরোধ যখন থাকিবে না, যখন সব ভেদ দূর হইয়া সমুদয় ভারতীয় মাছুষ একটি মহাজাতির অংশস্বরূপ কেবল ভারতীয় বলিয়া পরিচিত হইবে, তখন ইংরেজরা ভারতবর্ষের প্রভূত্ব ছাড়িয়া চলিয়া যাইবেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের এই ধরণের কথাও বিচাৰ্য্য। র্যাহারা এই প্রকার কথা বলেন, তাহাদের কথা হইতে এই সিদ্ধান্তই করা উচিত যে, ভারতবাসীদের সমুদয় সাম্প্রদায়িক ও শ্রেণীগত ভেদ ও বিরোধ কমান ও লোপ করা ব্রিটিশ রাজত্বের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য এবং এই উদ্দেশু ক্রমশ: সিদ্ধ হইতেছে--ব্রিটিশ রাজত্ব যত দীর্ঘকাল স্থায়ী হইতেছে ভেদ ততই কমাইয়া দিতেছে। কিন্তু বাস্তবিক কী দেখা যাইতেছে ? সাম্প্রদায়িক ও শ্রেণীগত হিংসা দ্বষ কমিতেছে, না বাড়িতেছে ? নিরপেক্ষ ও সত্যবাদী পৰ্য্যবেক্ষককে বলিতে হইবে, বাড়িতেছে ; এবং বাড়িতেছে রাষ্ট্রবিধির দরুন । ১৯৩৫ সালের ভারতশাসন আইন অনুসারে ব্যবস্থাপক সভাসমূহে প্রেরিতব্য প্রতিনিধি নির্বাচনের নিমিত্ত যত ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচকসমষ্টির নাম করিয়া ব্যবস্থা করা হইয়াছে, ১৯১৯ সালের আইনে তত ভেদ ছিল না, তাহ অপেক্ষা অনেক কম ছিল । বৰ্ত্তমান নির্বাচকসমষ্টিসমূহের নাম যতগুলা মনে পড়িতেছে লিখিতেছি – মুসলমান, “সাধারণ” (অর্থাৎ হিন্দু—যদিও তাহারা সম্পর্কে ভাস্থর বলিয়া তাহাদের নাম করা হয় নাই ), তপসিলভুক্ত জাতিসমূহ, ভারতীয় খ্ৰীষ্টিয়ান, এংলোইণ্ডিয়ান খ্ৰীষ্টিয়ান, ইউরোপীয় খ্ৰীষ্টিয়ান, শিখ, আদিবাসী, ইউরোপীয় বণিকসমিতি, দেশী বণিকসমিতি (তাহার মধ্যে হিন্দুমুসলমান ভেদ আছে এবং হিন্দুদের মধ্যেও আবার প্রবাসী ১৩৪৬ মাড়েfআরীদিগকে স্থলবিশেষে আলাদা ধরা আছে ), কারখানা-মালিক, কারখানা-শ্রমিক, জমিদার অর্থাং ভূস্বামী, বিশ্ববিদ্যালয়। অতএব প্রভূ ব্রিটিশ জাতি রাষ্ট্রব্যবস্থায় ভারতবর্ষের লোকদের মধ্যে ভেদ ক্রমশঃ অধিকতর পরিমাণে অস্বীকার করিবার পরিবর্তে অধিকতর পরিমাণে স্বীকার করিয়া তাহার স্থায়িত্ব বাড়াইতেছেন। ভেদ আইন দ্বারা স্বীকৃত হওয়ায় নূতন ভেদ যে দেখা যাইতেছে, যাহার চোখ আছে দেখিবার অনিচ্ছা না থাকিলেই সে তাহ দেখিতে পাইতেছে। সবাই জানে, হিন্দুদের চেয়ে মুসলমানদের মধ্যে সংহতি বেশী । কিন্তু তাহাদের মধ্যেও শিয়ারা ও মোমিনরা ব্যবস্থাপক সভায় আলাদা আলাদা প্রতিনিধি নির্বাচন করিতে চাহিতেছে । ইহা অকুমান করা অযৌক্তিক হইবে না যে, ১৯৩৫ সালের ভারত-শাসন আইন জারি হইবার পর হইতে দশ বৎসর শেষ হওয়া পৰ্য্যস্ত যদি ভারতবর্ষে ব্রিটিশ প্রভূত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে, তাহা হইলে এখন যেমন হিন্দুদের মধ্যে “উচ্চজাতি’র হিন্দু ও তপসিলভুক্ত জাতিসমূহের হিন্দুদিগকে ভিন্ন বলিয়া ধরা হইয়াছে, তখন মুসলমানদিগকেও স্বল্পী, শিয়া, মোমিন, আহমদিয়া প্রভৃতি উপসম্প্রদায়ে বিভক্ত বলিয়া ধরা হইবে এবং তাহাদের আলাদা আলাদা নিবাচকমণ্ডল গঠিত হইবে। তখনকার কতৃপক্ষ ভারতসচিব ও বড়লাট ভারতীয় নেতৃবর্গকে হয়ত বলিতে পারিবেন, এই সকল ভেদ থাকিতে আমরা ভারতবর্ষের কর্তৃত্ব ছাড়ি কেমন করিয়া ? কুড়ি বৎসরেরও আগে আমরা মডার্ণ রিভিয়ুতে ও “স্বরাজের উদ্দেশে” নামক পুস্তকে এবং বোধ হয় প্রবাসীতেও এই ঐতিহাসিক তথ্যটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছিলাম যে, কানাডা স্বরাজ ( ডোমীনিয়ন স্টেটস ) পাইবার পূৰ্ব্বে তথাকার (ইংরেজ ) প্রটেষ্ট্যান্ট ধম সম্প্রদায়ের এবং (ফ্রেঞ্চ ) রোমান কাথলিক ধম সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে বিরোধ লাগিয়াইছিল এবং প্রতিবেশীসুলভ বাক্যালাপ ও মিলামিশা পৰ্য্যস্ত হইত না বলিলেই হয়। কিন্তু যখনই তাহারা স্বরাজ পাইল, অমনি সব বিরোধ খামিয়া গেল। কারণ তাহারা বুঝিল, এখন দেশের হিতাহিতের জন্য চুরান্ত দায়িত্ব তাহদেরই—ঝগড়া ।