পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३४२ বর্তমান যুগে মানবের এই নৈতিক ঐকাস্তিকতার সম্মুখে একটি বড় সমস্যা উপস্থিত । তাহা এই পবিত্র শ্রদ্ধাশক্তির অপব্যবহার, অপচার, অপচয় । মহজের প্রতি সম্মানই মানবসমাজের প্রবলতম শক্তি। এত দিন বুদ্ধ যীশু মহম্মদ চৈতঙ্ক প্রমুখ ধৰ্ম্মনেতা, সাধুভক্ত, এবং লোকহিতৈষী ত্যাগী পুরুষ ও চরিত্রবান মন্থষ্যগণই মানবসমাজের পূজা পেয়ে আসছিলেন । নিউটন, সেক্সপীর প্রভৃতি যে সকল মানুষ মানবমনকে জ্ঞানালোকে আলোকিত করেছেন অথবা শ্রেষ্ঠ ভাবসম্পদের দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন, তারাও এত দিন মামুষের শ্রদ্ধা লাভ ক’রে আসছিলেন । কোনও জাতির বা মানবমণ্ডলীর শ্রদ্ধা লাভ করবার জঙ্গ, তাদের স্মরণীয় মানুষের দলভুক্ত হবার জন্ত, চরিত্র জীবন অথবা অঙ্কুষ্ঠিত কল্যাণকৰ্ম্ম এর চেয়ে কম দরের হ'লে চলত না,—ইহাই ছিল এত দিন সাধারণের সম্মান লাভের শাশ্বত নিয়ম । কিন্তু বর্তমান যুগে পৃথিবীময় এ নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে । সে ব্যতিক্রমের বিষয়ে দীর্ঘ বর্ণনা করবার প্রয়োজন নাই । ইহা বলা যথেষ্ট যে, চলচ্চিত্রের যে সকল অভিনেতাঅভিনেত্রীর জীবন হ'তে চরিত্রের পঙ্কলেপ সারাজীবনে কখনও ধৌত হ’ল না তাদের ছবি ভদ্র পুরুষ ও নারীগণ অবিচারে নিজেদের ঘরে নিয়ে আসছেন ; ক্রমে এখন শিশু-সাহিত্যকে পৰ্য্যস্ত তাদের ছবি ও জীবন-চরিত আক্রমণ করছে । এ দেশেও দেখতে পাই, চরিত্রের দিকে দৃষ্টি না রেখে, যারা শুধু সাহিত্যিক কবি অভিনেতা বা জননায়ক, এমন মামুযদিগকে চিস্তাবিহীন জনসাধারণ অবিচারে সম্মান ও সম্বৰ্দ্ধন দান করতে আরম্ভ করেছে । জনসমাজের যে-পূজা পূৰ্ব্বে কেবল ধৰ্ম্মের চরিত্রের ও লোকচিতের প্রাপ্য ছিল, তাহ যখন এষ্টরূপে লিপি-কৌশলের কলা-কৌশলের কিংবা ব্যবসায়ে সফলতার পায়ে ঢেলে দেওয়া হয়, তখন মুস্থ মানবমন তার বিরুদ্ধে বিদ্রোঙ্গী না হয়ে থাকুতেই পারে না । জনসমাজের সম্মানধারাকে এইরূপে নিম্নতর থাতে, কখনও কখনও বা অপবিত্র থাতে প্রবাহিত ক’রে দেওয়া, চরিত্র ও আচরণের স্বার যিনি হয়তো সমাজের অশেষ অকল্যাণ সাধন করেছেন এমন মাকুযকে পূজার আসনে বসানো ভবিষ্যদবংশীয়দের দৃষ্টির সম্মুখে ইতাদিগকেই আদর্শ পুরুষ ও আদর্শ রমণীরূপে তুলে ধুয়,—ই হার সমান সৰ্ব্বনাশকর কার্য্য অতি আল্লহ আছে । শ্ৰদ্ধ। যেমন মানবসমাজে প্রবলতম শক্তি, শ্রদ্ধার অপচার তেমনি মানবসমাজে প্রবলতম অকল্যাণ । শ্রদ্ধার সুপ্রয়োগে জনসমাজ ত্ববায়ু উন্নত হয় ; শ্রদ্ধার অপপ্রয়োগে জনসমাজ তেমনি ত্বরায় অবনত হয় --- তত্ত্ব-কৌমুদী ] প্রবাসী ১৩৪৬ বন্দী-শিবিরে রবীন্দ্রনাথ ঐঅমলেন্দু দাশগুপ্ত বন্দী-শিবিরে রবীন্দ্রনাথ—শুনির চমক লাগিতে পারে ... কথাটার সোজা অর্থ এই যে, আমরা শুধু স্থানেই বাস করি না, কালেও বাস করি অর্থাৎ অপরের মনে । যার জ্ঞানী, গুণী ব৷ কৰ্ম্মী-স্তারা তাই তাতাদের দেশের সর্বত্রই বাস করেন, যদিও শরীরটা লইয়া বিশেষ স্থানে থাকেন । রবীন্দ্রনাথ তাড় আমাদেরও সঙ্গী ছিলেন বন্দীশালাতে । পাশের বন্ধুর কাজকৰ্ম্ম যেমন আমাদের উপরও ভালোমন্দ ফলাফল আনিত, রবীন্দ্রনাথের কাজ ও কাব্যও তেমনি আমাদের বন্দীশালাতে আন্দোলন তুলিত।-- সেদিনের কথা বেশ মনে আছে । এক ইংরেজী পত্রিকায় খবর বাহির হইল যে, রবীন্দ্রনাথ বিপ্লবীদের লইয়া একখানি বই লিথিয়াছেন, বইয়ের নাম “চার অধ্যার" ।-- বই পড়িয়া কেছ ভাল বলিল, কেহ মন্দ বলিল—.-“এই বই রবীন্দ্রনাথের লেখা উচিত হয় নাই, যাদের বিষয় জানেন না তাদের সম্বন্ধে কেন লিখিতে গেলেন ? তিনি আমাদের উপর অবিচার করিয়াছেন ". এক ভদ্রলোকের কথা সেদিনের টীৎকার ও হট্টগোলের মধ্যে ভালো লাগিয়াছিল । তার মুর ও যেমন শাস্ত, বক্তব্যে? ভঙ্গীও তেমন সংযত ছিল ; হিনি বলিয়াছিলেন—এ ভাবে বিচার চলে না। প্রশ্নের যেমন ধৰ্ম্ম ,ছে, বিটারেরও তেমনি নীতি আছে । সাহিত্যের দিক দিয়া এর বিচার হইতেছে মা, হইতেছে রাজনীতির দিক দিয়া । বিপ্লবীদের এ বইতে উপকাল বা অপকার কবিয়াছে-- এই রাজনৈতিক প্রয়োজনের দিক দিয় বুঝিতেও যে দূরদৃষ্টির দরকার--বত্তমান ক্ষেত্রে সে দৃষ্টি একেবার্ধে আচ্ছন্ন। প্রয়োজনের পরমায়ু বেশী নয়, আজ যা প্রয়োজন কাল তা-ই ভাঙা মৃৎপাত্রের মত পরিত্যক্ত হয় -বুদ্ধি শাস্ত হঠতে সময় লাগে, সে পৰ্য্যস্ত অপেক্ষা মা করিলে বিচার অসম্ভব । এ ভাবে আলোচনায় লেখকের উপর যেমন অবিচার হয়, নিজে4 উপরও তেমনি অবিচাব করা হয় ।...আর কিছু না হউক অস্তুত এটুকু ভাবা উচিত যে, এর মত মনাথ আঘাত করিয়া বিপ্লবীদেব ভীবন ও টিস্তাকে সরল করার সুযোগ দিয়াছেন । ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার তেমন আলাপ ছিল না । দেউলী কাম্পে তিনি আসার পর তাকে চিনি। চার অধ্যায়ের আলোচন আমার মনে রেখাপাত করিয়াছিল । সবাই অল্পবিস্তর উত্তেজিত হইয়াছে, কমবেশী temper সবাই হারাষ্টয়াছে, কিন্তু সে-দলের মধে। এক| এই লোকটিই মাথ৷ ঠাণ্ড রাখিয়াছে । অনায়াসে তিনি আমার মনোযোগ আকর্ষণ করিয়া লইতে পারিয়াছিলেন । ঠিক করিলাম, অবসরমত এর সঙ্গে ভালো করিয়া আলাপ করিব । কথায় কথায় এক সময়ে রবীন্দ্রনাথের কথা উঠিয়া পড়িল ।