পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

veృe প্রবাসী 9\8כאל —তুমিই আদর দিয়ে দিয়ে মেয়েটার সৰ্ব্বনাশ করবে দেখছি! এক খিলি পান ও কিছু দোক্তা মুখে ফেলিয়া দিয়া সকোপ কটাক্ষে মথুরা-গৃহিণী মথুরাবাবুর পানে চাহিয়া হাসিয়া ফেলিলেন। তাহার পর বলিলেন-কালই দাড়াও বেয়াইকে খবর দিচ্ছি, নিয়ে যান তোমাকে ! –ইস্, আমি যাচ্ছি কি না এখন । ঘাড় নাড়িয়া হাসিতে হাসিতে শেফালি বৌদিদির ঘরে গিয়া ঢুকিল। মথুরবাবুও উঠিয়া ধীরে ধীরে বাথরুমে গিয়া খিল দিলেন। মথুরবাবুর বাথরুম একটি দেখিবার মত জিনিষ, বলিয়া না দিলে বাথরুম বলিয়া বোঝা শক্ত। দুই-তিন রকমের গদি-অঁাটা চেয়ার, একটি সোফা, দেয়ালে নানা রকমের ছবি, এক কোণে একটি আলমারিতে নানা রকম বই, একটি ছোট টেবিলের উপর সব রকমের খবরের কাগজ, নিকটে একটি ছোট মিটসেফের ভিতর চকোলেট, লজেন্য প্রভৃতি মুখরোচক টুকিটাকি খাবার, দেয়ালের গায়ে কাঠের একটি স্বধৃত শেলফ তাহাতে র্তাহার প্রিয় কয়েক রকম পেটেণ্ট ঔষধ, আর একটি দেয়ালে চমৎকার একটি ঘড়ি । ঘরের ভিতর হইতেই অনেক দূর পর্য্যস্ত দেখা যায় জানালাটি খুলিয়া দিলেই হইল। মথুরাবাবুর বাথরুম তাহার বৈঠকখানা অপেক্ষ বেশী আরামজনক । এই ঘরখানির ঠিক পাশেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছোট একটি স্বানের ঘরও অবশু আছে। মথুরবাবু নির্জনতা ভালবাসেন এবং স্নান করিবার অছিলায় বাথরুমে ঢুকিয়া জনতার হাত হইতে আত্মরক্ষা করেন। এক বার বাথরুমে ঢুকিলে দুই-তিন ঘণ্টা তিনি বাহির হন না এবং দুই বেলা তাহার বাথরুমে ঢোকা চাই-ই। মথুরাবাবু বাথরুমে ঢুকিয়া খিল দিলেন। মথুরাবাবুর গৃহিণী মন্দাকিনী বাথরুমের রুদ্ধ স্বারের পানে একটা ক্রুদ্ধ কটাক্ষপাত করিয়া আর এক থিলি পান ও আর একটু দোক্তা আলগোছে মুখের মধ্যে ফেলিয়া দিয়া ঘরের মধ্যে চলিয়া গেলেন । চশমার খাপ ও মহাভারতখানি বাহির করিয়া আনিয়া খানিক ক্ষণ কি ভাবিলেন, তাহার পর আপন মনেই বলিলেন–নিজে আর পড়তে পারি না বাপু, বেীমা, ও বৌম, কোথা তুমি— বিনোদিনী পাশের ঘরেই ছিল, বাহির হইয়া আসিল । —কি মা ? —কি করছ তুমি ? -किङ्कझे नीं । —আচ্ছা, তাহলে মহাভারতের এইটুকু আমাকে পড়ে শোনাও তো মা ! ঐটুকু হলেই কর্ণপৰ্ব্বটা শেষ হয়ে যায়। আমি আর পারছি না পড়তে— বিনোদিনী বসিল ও মহাভারত লইয়া পড়িতে স্বরু করিল— হে মহারাজ ! এদিকে মহাত্মা বাসুদেব ধনঞ্জয়কে আলিঙ্গন করিয়া কহিলেন, অৰ্জ্জুন ! দেবরাজ যেমন বন্ধ দ্বারা বুত্রাসুরকে নিহত করিয়াছেন তদ্রুপ তুমি শর-নিকরে কর্ণকে নিপাতিত করিলে । অতঃপর মানবগণ কর্ণ ও বৃত্ৰাসুর এই উভয়েরই বধোপাখ্যান কীৰ্ত্তন করিবে। এক্ষণে যশস্কর কর্ণবধ-বৃত্তাস্ত ধৰ্ম্মরাজকে নিবেদন করা আমাদের অবখ্যকৰ্ত্তব্য । তুমি বহুদিবসাবধি কৰ্ণবধে সচেষ্ট্র ছিলে, এক্ষণে এই ব্যাপার ধৰ্ম্মরাজকে বিজ্ঞাপিত করিয়া তাহার ঋণ পরিশোধ কর। পূৰ্ব্বে পুরুষ প্রধান যুধিষ্ঠির— অত্যন্ত অপ্রাসঙ্গিক ভাবে সহসা মন্দাকিনী বলিলেন – আচ্ছা বেীমা, তোমার চুলের এ কি ছিরি । চুলে তেলটেল দাও না, আজকাল তোমাদের কি যে ফেসিয়ান হয়েছে মা, চুল ভেজাবে না কিছুতে ! চুল-বাধুনী এসেছিল তো আজ, চুলটা ভাল ক'রে বেঁধে নিলেই পারতে ! বিনোদিনী কিছু বলিল না, লজ্জায় মস্তক অবনত করিল। স্বামীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হষ্টয়া সেও যে ব্রহ্মচর্য্যের চর্চা করিতেছে এ কথা তো শাশুড়ীকে বলা যায় না । শাশুড়ী বলিলেন–চল আমিই তোমার চুলটা বেঁধে দি, মহাভারত কাল শুনিয়ো ! চল, ওঠ । বিনোদিনীকে লইয়া মন্দাকিনী উঠিয়া গেলেন। বেশী দিনের কথা নয়, মাত্র তিন মাস পূৰ্ব্বে যখন মন্দাকিনী প্রথম শুনিলেন যে র্তাহার একমাত্র পুত্র গোপনে একটি কলেজে-পড়া মেয়েকে বিবাহ করিয়া ফেলিয়াছে, তখন র্তাহার মাথায় যেন আকাশ ভাঙিয়া পড়িয়াছিল। কলেজে-পড়া মেয়ে, না জানি সে কি জাতীয় জীবই হইবে।