পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌৰ , কি জাতীয় জীব যে হইবে, সে সম্বন্ধে তাহার ধারণাও খুব অস্পষ্ট ছিল না। হাই-হীল জুতা-পরা, ভ্যানিটি ব্যাগ হাতে অবগুণ্ঠনহীনা শিক্ষিতা মহিলা মন্দাকিনী ইতিপূৰ্ব্বে দেখিয়াছিলেন এবং দুর্ভাবনাটা সেই জন্যই বেশী হইয়াছিল। কিন্তু বিনোদিনী তাহার সে দুর্ভাবনা ঘুচাইয়াছে। অল্প দিনেই মন্দাকিনী বুঝিলেন যে এমন সতীলক্ষ্মী মেয়ে দুর্লভ। ব্রত-আচার, পূজা-পাৰ্ব্বণ সব বিষয়ে নিখুঁত। যেমন লজ্জা, তেমনি ধীরস্থির। মুখে লক্ষ্মীশ্ৰী আছে ৭ কিছুমাত্র বিলাসিত নাই, বরং তাহার প্রসাধন সম্বন্ধে উদাসীনতাই ইদানীং মন্দাকিনীকে পীড়িত করিতেছে! গঙ্গার ধারেই বিমলের বাসা। ঘাট হইতে বাসা বেশী দূরে নয়। গভীর রাত্রি, চতুৰ্দ্দিকে জ্যোৎস্নায় ফিনিক ফুটিতেছে। একটি ছোট পানসি আসিয়া ধীরে ধীরে ঘাটে ভিড়িল এবং পানসি ভিড়িতে অমর ও বিনোদিনী নামিয়া পড়িল । অমর বলিল-চল বিমলকে জাগানো যাক । —না, না, কি দরকার, চল, মা যদি জানতে পারেন, ভয়ানক কাগু করবেন। –কিছু করবেন না, চল না ! অনেক দিন পরে বিমল তোমাকে দেখে ভারি খুশী হবে। বলছিল আজ তোমার কথা । —কি বলছিল ? —বলছিল বিস্তুকে নিয়ে এস এক দিন আমার বাড়ীতে । মেডিকেল কলেজের ছাত্র বিমলবাবুকে বিনোদিনীর মনে পড়িল । অমরের সহিত বিমল কয়েক বা র বিনোদিনীদের বাড়ীতে গিয়াছিল । বিনোদিনী মনে মনে ভাবিল বিমলবাবু কি এখনও তেমনি লাজুকপ্রকৃতির আছেন নাকি? তখন তো কাহারও মুখের দিকে চাহিতে পৰ্য্যস্ত পারিতেন না । বিমল স্বপ্ন দেখিতেছিল, মণিকে । পরীক্ষা দিয়া মণি যেন বড় রোগা হইয়া গিয়াছে। বিমল এক বোতল बिळकfांक "BA) কড়লিভার অয়েল লইয়া তাহাকে সাধাসাধি করিতেছে, সে কিছুতেই খাইবে না। বড় দুর্গন্ধ । দুধও খাইবে না, খাইতে ভাল লাগে না । —ডাক্তারবাবু, ও ডাক্তারবাবু— বিমল বিছানায় উঠিয়া বসিল, তবুও স্বপ্নের ঘোর যেন কাটিতে চায় না । ভাল করিয়া চোখ খুলিয়া দেখিল জানাল দিয়া এক ফালি জ্যোংস্কা আসিয়া নীরব মাধুৰ্য্যে সমস্ত ঘরখানি ভরিয়া দিয়াছে ! —ডাক্তারবারকপাট খুলিয়া বিমল দেখিল অমর ও বিনোদিনী দাড়াইয়া আছে। এও স্বপ্ন নাকি ! bア যদিও হাসপাতালে ঔষধ নাই তথাপি বিমলের সদয় ব্যবহারের গুণে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। বিমল লক্ষ্য করিল এখানে গরিৰ লোকদের ভিতর কালাজ্জর খুব বেশী, অথচ হাসপাতালে তাহদের চিকিৎসা করিবার মত ইনজেকশনের ঔষধ প্রচুর নাই। অদূর ভবিষ্যতে যে হইবে, তাহারও সম্ভাবনা কম। অবশেষে নিরুপায় হইয়া সে নিজের প্রথম মাসের বেতনটা ব্যয় করিয়া কালাজরের ইনজেকশন আনাইয়া ফেলিল। লেখালেখি করাতে দরও কিছু সস্তা হইল । কালাজ্বর-রোগীর রক্ত পরীক্ষা করিয়া এবং চিকিৎসা করিয়া বিমলের সময় ভালই কাটিতে লাগিল । বিমল ভাবিয়া দেখিল যে চাকরি না পাইলে কোথাও না কোথাও তাহাকে ডিসপেনসারি খুলিয়া তে বসিতে হইড এবং অনিবাৰ্য্যভাবে কিছু অর্থব্যয় হইতই। প্র্যাকটিস জমাই বার জন্য প্রথম প্রথম কিছু খরচ করিতেই হয়, সুতরাং এই খরচটা করা এমন কিছু অবিবেচনার কার্য্য হয় নাই। হাসপাতালের এই দরিদ্র রোগীরা মুক্তকণ্ঠে তাহার নাম চতুৰ্দ্দিকে বিজ্ঞাপিত করিবে। প্রত্যেক ব্যবসায়ে বিজ্ঞাপনের জন্যও তো একটা প্রয়োজনীয় খরচ আছে । ব্যবসায়ের দিক্ হইতে বিচার করিলে ইহাতে নিঃস্বার্থপরতা অপেক্ষ স্বার্থপরতার আমেজই বেশী ছিল,