পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\లి$$ এৰাগী 388& কিন্তু চতুদিকে ধন্য ধন্য পড়িয়া গেল। ইনজেকশন দিয়া অনেক রোগী ভালও হইতে লাগিল। এক দিন হাসপাতালের কাজ সারিয়া বিমল বাহির হইতেছে এমন সময় এক বুড়ী আসিয়া তাহার পায়ের উপর উপুড় হইয়া পড়িল। বুড়ী বিমলের অচেনা নয়, এখানে আসিয়া অবধি বুড়ীকে সে প্রত্যহই দেখিতেছে, রোজ তাহার হাসপাতালে আসা চাই। সে আসিবার আগেও নাকি বুড়ী রোজ আসিত। তাহার অস্বখ মাথাধরা, কিছুতেই সারিতেছে না। —কি চাই তোমার, ওঠ, ওঠ । —আমাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে দিন ডাক্তারবাৰু। –কিসের ইনজেকশন দেব তোমাকে ? —মাথাধরার। কত লোক ইনজেকশন নিয়ে নিয়ে সেরে গেল আমার চোখের সামনে, আমারই কিছু হচ্ছে না— —ওষুধ খাও, সারবে। —লাল, নীল, সাদা কত রকম ওষুধই তো খেলাম ! ওষুধ খেয়ে কিছুlহবে না বাবু-আমাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে দিন, দোহাই আপনার ডাক্তারবাবু— —কি মুস্কিল, তোমার তো আর কালাজ্বর হয় নি, কি ইনজেকশন দেব তোমাকে । —সব অসুখেরই ইনজেকশন আছে, সেদিন ঐ রক্ত-আমাশয় রুগীটা এল, একটা ইনজেকশন দিতেই সেরে গেল ! বুড়ী রোজ হাসপাতালে আসে এবং কোথায় কি হয় লক্ষ্য করে, তাহাকে ফাকি দেওয়া সহজ নহে । সিড়ি দিয়া নামিতে নামিতে বিমল তথাপি বলিল— মাথাধরার ইনজেকশন নেই কোন। বুড়ী কিন্তু মানিল না, বিমলের পিছু লইল। বহুকাল পুৰ্ব্বে মুত তাহার স্বামীর উল্লেখ করিয়া কাদিতে কাদিতে বলিল—সে ম'রে ইস্তক আমার এত হেনস্তা ডাক্তারবাবু! নিজের পেটের ছেলে, এত ক’রে থাইয়ে-পরিয়ে মানুষ করলাম সেই এখন দেখে না, বউ নিয়ে উন্মত্ত। বউও স্কুটেছে একটা ডাইনী, নিজের পেটের ছেলেগুলোকেই oপটপ ক’রে খেয়ে ফেললে, ঘরদেীর শ্মশান হয়ে গেল আমার! এত লোকের মরণ হয় আমারই কেবল হয় না! যমেরও অরুচি আমি— বিলাপ করিতে করিতে বুড়ী বিমলের বাসা পর্য্যস্ত আসিয়া হাজির হইল। বিমল তাহাকে আরও দুই-এক বার বলিল যে, তাহাকে দিবার মত ইনজেকশন তাহার নাই। বুড়ী কিন্তু কিছুতেই শোনে না। সে কাদিয়া কাদিয়া বলিতে লাগিল—নিজের পেটের ছেলেই যাকে দেখে না তাকে অপরে দেখবে কেন, কিন্তু আপনি শুনেছিলাম ভাল লোক, দয়াধৰ্ম্ম আছে, তাই সাহস ক’রে বুড়ী ভয়ানক কাদিতে লাগিল। নিরুপায় বিমল শেবটা ঠিক করিল খানিকট জল ফুটাইয়া ঠাণ্ডা করিয়া তাহারই দুই-চারি ফোটা বুড়ীকে ইনজেকশন করিয়া দেওয়া যাক। নাছোড়বান্দা বুড়ী কিছুতেই ছাড়িবে না। বলিল-আচ্ছা ব’স, দিচ্ছি ইনজেকশন ! টেস্ট-টিউবে জল গরম করিতে করিতে বিমলের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলিয়া গেল। মাইক্রসকোপের কাজের জন্য তাহার কাছে “মেথিলিন ব্লু’র কতকগুলি বড়ি ছিল । ময়দার গুলির ভিতর “মেথিলিন ব্লু’র কয়েকটি গুলি লুকাইয়া বিমল সেগুলি বুড়ীকে দিল এবং জলের ইনজেকশন দিয়া অবশেষে বলিল— এই বড়িগুলোও খেও । বড় কড়া ইনজেকশন ! শরীরের সমস্ত বিষ বেরিয়ে যাবে। বুড়ী খুশী হইয়া অনেক আশীৰ্ব্বাদ করিতে করিতে চলিয়া গেল। বুড়ীর সহিত এই প্রবঞ্চনাটুকু করিয়া বিমলের ভারি আনন্দ হইল। ডাক্তারি করিতে করিতে কত প্রবঞ্চনাই যে করিতে হয় ! দুঃস্থ লোককে সাত্ত্বনী দেওয়াই যথন পেশা তখন প্রবঞ্চনা করিতে হইবে বইকি ! কয়টা লোককে সত্য কথা বলিয়া আশ্বস্ত করা যায় ! আহারাদি শেষ করিয়া বিমল আবার হাসপাতালের দিকে রওনা হইল। সাধারণত: এ সময়ট সে একটু বিশ্রাম করে, কিন্তু আজ ফিমেল ওয়ার্ডে একটি নিউমোনিয়া রোগিণীকে সে ভৰ্ত্তি করিয়াছে, তাহার রক্তটা এক বার পরীক্ষা করিয়া দেখা উচিত । হাসপাতালের গেটে ঢুকিতে যাইবে এমন সময় তাহার