পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ , বোতলের ঠুং ঠুং আওয়াজ পাওয়া গেল। দুধ আসিয়াছে। দরজা তখনও বন্ধ। বাহিরে ছিল আগের দিনের খালি বোতলগুলি, ছেলেটি ভৰ্ত্তি বোতলগুলি সেখানে রাখিয়৷ খালি বোতলগুলি লইয়া চলিয়া গেল ! আবার চলিতে আরম্ভ করিল গাড়ী—কু-ল-প, কু-ল-প, রূপ, রূপ। ধীরে ধীরে আওয়াজ মিলাইয়া গেল । এইবার বুড়ী ল্যাণ্ডলেউীর পায়ের শক পাওয়া যাইতেছে । তিন তলার ‘অ্যাটিকে সে থাকে, সিড়ি দিয়া নামিতেছে। তাহার দ্বিতীয় স্বামীর জীবদ্দশায় কিছু দিনের জন্য সে একটু আয়াসপ্রিয় হইয়া পড়িয়াছিল, সেই সময় তাহার দেহের এখানে-ওখানে যে মেদ ও মাংস আসিয়া বাস বঁাধিয়াছিল সেগুলিকে কিছুতেই সে আর তাড়াইতে পারে নাই । তাহার পায়ের তলায় পুরনো বাড়ীর ছেড়া লিনোলিয়াম-ঢাকা কাঠের সিড়িগুলি তাই মচ মচ করিয়া আৰ্ত্তনাদ করিতেছে। বুড়ী বুঝিয়াছে যে নৃপেন উঠিয়াছে তাঙ্গ না হইলে সে দরজায় নক্‌ করিত, ডাকিত, “মিঃ স্তানাডাবু” ! ঘরে ফিরিয়া নৃপেন দেখিল ঘড়িতে ভগন ছ-ট কুড়ি । রাতের পোষাক ছাড়িয়া এবার সে পরিল অন্য পোষাক । টাই পরিতে তাহাকে এক সময় কি ধস্তাধস্তিই না করিতে হঠত, আজকাল বেশ অভ্যাস হইয়া গিয়াছে। কোট পরিয়| পকেটগুলি একবার সে ভাল করিয়া দেখিয়া লইল, পয়সাকড়ি এবং ‘ল্যাচ-কী’ লইতে ভুল হইয়াছে কিনা। আলো নিবাইয়া যখন সে নীচেয় নামিল তখন ঠিক সাড়ে ছ-ট। খাবার টেবিলে বুড়ী তখন ব্রেকফাস্ট সাজাইতেছে । ‘গুড-মর্নিং’ এবং ‘থ্যাঙ্ক ইউ-এর পালা শেষ করিয়া সে তাড়াতাড়ি থাইতে বসিল । অত সকালে খাওয়া তখনও তাহার অভ্যাস হয় নাই, এই তো মাত্র দেড় মাস হইল সে বিলাতে আসিয়াছে । মোটেই তখন তাহার খাইতে ইচ্ছা হয় না, আর খাইতে হইবে সেই তো এক—ফ্লেক্স, দুধ, টোস্ট, ডিম, মার্শালেণ্ড, চা— নিত্য ত্রিশ দিন একই জিনিষ ! কি একঘেয়েই যে লাগে। কিন্তু উপায় কোথায় ? বৈচিত্র্য জিনিষটিকে নিঃশেষে জীবন হইতে উড়াইয়া দিয়া সেখানে একঘেয়েমিকে প্রতিষ্ঠা করিতেই তো এ-দেশে আস, অ্যাপ্রেন্টিসের দিন ף לסי 冢 聳 সেই জন্যই তো যন্ত্ররাজের লীলাভূমিতে আজ এই অ্যাপ্রিণ্টিসি ; এ-দেশের লোকেদের মতই এক দিন যাহাতে জীবনটা হইয়া উঠিতে পারে—খাওয়া, পোষাকপরিচ্ছদ, দিনের কাজ, এমন কি আমোদ-প্রমোদ পৰ্য্যস্ত সৰ্ব্ববিষয়ে ছাচে ঢাল, বাধাধরা—যাহাকে বলে ‘ষ্ট্যাণ্ডাবুডাইজড । খাওয়া শেষ করিতে তাহার দশ মিনিটও লাগে না । ইতিমধ্যে বুড়ী লাঞ্চের একটি প্যাকেট এবং একটি আপেল দিয়া গিয়াছে । আর এক বার 'থ্যাঙ্ক ইউ এবং ‘গুড মনিং-এর পাল শেষ করিয়া সে রেনকোটটি গায়ে চাপাইয়া যখন দরজা খুলিয়া বাহিরে আসিল তখন দেখে—সমানে ফিস্ ফিস্ করিয়া বৃষ্টি পড়িতেছে, সঙ্গে ঠাগু কনকনে হাওয়া । মন তাহার আবার এক বার কারখানার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিতে চায় । ঘড়িতে তপন পৌনে সাতট, রাস্তায় তখনও আলো জলিতেছে । সে তাড়াতাড়ি হাটিয়া চলে। দশ মিনিটের মধ্যে তাহাকে আপার ব্রুক ষ্ট্রীটের মোড়ে পৌছাইতে হইবে । ছটা-পঞ্চান্ন মিনিটে সেখানে আসিবে তাহার ট্রাম । মধ্যে মধ্যে এক-আধটি লোক মাত্র তখন পথে দেখা মাইতেছে । তাহারই মত কোন কারখানার যাত্রী। রাস্তার দু-ধারে সারি সারি বাড়ী। সকলেরই প্রায় এক চেহারা । সেই সম্মুখে একটু রেলিং, কালে হইয়। গিয়াছে দেওয়াল, ঢালু প্লেটের ছাদ, উপরে চিমনি । তাহাদের একটির সম্মুখে দেখিল একটি আধাবয়সী মেয়ে এপ্রন পরিয়া সেই সকালে সিড়িতে পাথর ঘষিতেছে । মেয়েটির জন্য ৰূপেনের মনে একটু দুঃখই হয়—তাহাদের মনে মনে বাহাদুরি দিতেই ইচ্ছা হয়, কিন্তু সে ভুলিয়া যায় ধে তাহার কত মা দিদি বাংলা দেশের কত গ্রামে গ্রামে এমন ভোরেই ঠাণ্ডা জলে ঘর নিকাইতেছে। লম্বা লম্বা ব্রাশ লইয়া চার জন ঝাড়ুদার রাস্তার একটি মোড়ে দাড়াইয়া গল্প করিতেছিল। . সিগারেট খাইতে খাইতে এইবার তাহারা তাহীদের কাজ আরম্ভ করিল। নৃপেন যখন পাশ দিয়া যায় উহাদের মধ্যে এক জন বলিয়া উঠিল, ‘গুডমৰ্নিং’ । তাহার সঙ্গে আলাপ আছে 零狂気