পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'రిపిe হয়ত বা কোন কিছুর করিতে হইবে অমন হয়ত হাজার কি দু-হাজার। হিসাব আছে ঘণ্টায় কতগুলি করিতে হইবে। বেশী করিতে পারিলে বেশী পয়সা, কমিলে কৰ্ত্তন। অত্যন্ত নীরস, বিরক্তিকর সে-কাজ । পরিশ্রম খুব বেশী যে কাজে তাহ নয়। হয়ত খানিকট উখো ঘষা, হয়ত কতকগুলি বণ্ট, এবং নাট লাগানে, হয়ত বা একটু হাতুড়ির ঘা দেওয়া। কিন্তু এত বেশীক্ষণ ধরিয়া একই কাজ করিতে হয় যে প্রথম প্রথম হাত আড়ষ্ট হইয়া উঠে, ফোস্কাও পড়ে, পিঠের দিকটি বেশ টন টন করিতে থাকে এবং বেকায়দা হইলে হাতুড়ির এক-আধটি ঘাও হাতে লাগে । হাত তখন তাহানের সমানে চলিতেছে । সমানে দাড়াইয়া কাজ করিতে করিতে নুপেনের তখন পা ধরিয়া আসিতেছে, দেহের ভার রাখিতে হইতেছে এক বার এ-পায়ে আর বার ৪-পায়ে । মাত্র এক মাস হইল সে কারখানায় ভর্তি হইয়াছে । আট ঘণ্টা দাড়াইয়। দাড়াইয়া এমন কাজ কর। তখনও তাহর অভ্যাস হয় নাই । জিনিষগুলি তৈয়ারী করিয়া তাহার একটি টিনের বাক্সে রাখিতেছিল । দেখিতে দেখিতে সেটি ভৰ্ত্তি হইয়া উঠিল। লোহা, ভাম এবং পিতলের জিনিষ। ওজন বড় কম হয় নাই । সেইটিকে বহিয়া লইয়া লাইতে হইল নীচে স্টোরে। মৃতন আর একটি খালি বাক্স লইয়া আসিতে হইল ভৰ্ত্তি করিবার জন্য । ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাইতেছে। মনে হইতেছে, সম্মুখের বড় ঘড়িটা যেন বড় আস্তেই চলিতেছে। বারটা বাজিবার তখনও অনেক দেরি । কাজ করিতে করিতে হঠাৎ নৃপেন শুনিল, খুব মিহি গলায় কে যেন বলিতেছে 'থ্যাঙ্ক ইউ” । দেখিল ফোরম্যানের আপিসের মেয়েটি তাকে একখানি চিঠি দিতে আসিয়াছে। মুখে এবং দেহে সে এমনই একটি ভঙ্গী ফুটাইয়া তুলিয়াছে—যাহা দেখিয়া মনে হয় চিঠিখানি লইয় তাহাকে যেন ধন্য করা হইবে, "থ্যাঙ্ক ইউ টি সে আগামই দিয়া রাখিতেছে চিঠি হাত বাড়াইয়া নিতে যে কষ্টটুকু হইবে তাহার জন্য। এ সব প্রবাসী * లిgy বিলাতী ভদ্রতার মুখোসগুলির সঙ্গে নৃপেনের তখনও ভাল করিয়া পরিচয় হয় নাই। সে বেশ একটু অভিভূত হইয়। পড়ে। "থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ’ বলিয়৷ সে চিঠিখানি নিতেই মেয়েটি ঘুরপাক খাইয়া চটপট চলিয়া যায় নিজের জায়গায়। ক্ষয়-ধরা, শুষ্ক চেহারা মেয়েটির । বয়সের আন্দাজ মোটেই পাওয়া যায় না। তাহার উপরে চুলগুলি তাহার ছেলেদের মত করিয়া কাটা। না হাসিলে তাহার মূথের দিকে চাওয়াই যায় মা ! নৃপেন কিন্তু ভাবে, চমৎকার স্মাট মেয়েটি । চিঠিখানি এক সময় সে খুলিয়া পড়িল। এডুকেশন ডিপার্টমেণ্টের চিঠি, আগামী শুক্রবার সে যেন গিয়া ‘সেফটি ফাস্ট"-এর লেকচার শুনিয়া আসে । নৃপেন পাশের ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করে, লেকচারটি কি রকম । শুনিতে পায় সেখানে কি কি জিনিষ দেখা যাইবে । বিপদজনক হাতুড়ি, গ্রাঠ গুস্টোন, ইলেকটিকের তার ইত্যাদি অনেক কিছু জিনিষ --যাহার এত দিন বিপদ ঘটাইয়াছে বা ঘটাইতে পারে তাঙ্গাদের একটি চমৎকার একজিবিশন । শোনা যাইবে কারখানায় কাজ করিবার সময় কি কি করিতে মান । তাহার দুর্ঘটনার জন্য কোম্পানী দায়ী, সে জন্য তাহার চায় বিপদ যাহাতে ন ঘটে সেই চেষ্ট সে যাহাতে প্রথম হইতেই করে । সেফটি ইনস্পেক্টরের চেহারাটি নাকি পিকুইকিয়ান । কথা বলিতে বলিতে উহার দু-জনে হাসিতেছিল, এমন সময় ও-পশি হইতে এক জন বলিয়া উঠিল, "এই রবিনসন তোমাদের দেখছে কিন্তু ’ রবিনসন আণ্ডার-ফোরম্যান। শেনদৃষ্টি তাহার সৰ্ব্বত্র ঘুরিতেছে, বিশেষ লক্ষ্য তাহার অ্যাপ্রেণ্টিন্সদের উপর । উহার একটু তফাৎ হইয় দাড়ায়, হাত চালায় একটু জোরে । বারটা বাঞ্জিবার যে আর বেশী দেরি নাই তাহ শীঘ্রই বুঝিতে পারা গেল । ওয়ার্কম্যানদের চায়ের ‘ক্যান’ তখন দলে দলে বাহিরে চলিয়াছে। এক-এক জন ছোকরা অমন পনর-কুড়িটি ক্যান ট্রেতে করিয়া লইয়া চলিয়াছে। ক্যানে আছে চা-চিনি হয়ত চা ও কণ্ডেন্সড মিল্ক । বাহিরে আছে গরম জলের ট্যাপ—এইগুলি ভরিবার জন্য তখন সেখানে লম্বা কিউ দাড়াইয়া গিয়াছে।