পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ , অ্যাপ্রেটিসের দিন \eషి& কম পয়সায় এত বেশী খাওয়া~~বারে বেশী, পরিমাণে বেশী—ম্যাঞ্চেস্টারের বোধ হয় কোন ল্যাণ্ডলেডির বাড়ীতেই হয় না। তাহা ছাড়া সপ্তাহে এক দিন ভাত অথবা খিচুড়ি বুড়ী খাওয়াইবেই। নিজেরা রান্না করিলে তে কথাই নাই—যাহা খুনী করা সম্ভব। আজ বুড়া থাইতে দিয়াছিল মুম্বুরির ডালের স্বপ, আলু সিদ্ধ, কপি সিদ্ধ, গাজর সিদ্ধ এবং ল্যাম্ব রোস্ট, কলা আর আপেল । সব জিনিষই বেশ অনেকখানি করিয়া । কিন্তু ইহাতেও ছেলেরা সব সময় সন্তুষ্ট হয় না, বুড়ীকে এমন বকুনি দেয় যে দেখিয় নৃপেনের কষ্ট হয়। অবশ্য ইহাও ঠিক, যে বুড়ীর আপদে বিপদে ইঙ্গর যত সাহায্য করিবে তাহা বুড়ীর আত্মীয়-স্বজনেও করিবে না। বুড়ী সে-কথা ভাল করিয়া জানে বলিয়াই ভারতীয় ছাত্রদের উপর তাহার এত যত্ন, বাড়ীতে ভারতীয় ছাত্র ছাড়া আর কাহাকেও সে জায়গা দেয় না । পর্য্যন্ত পরের দিন বুধবার, মাত্র বেল বারট। কলেজ । ছেলেদের তাজ আর তেমন পড়ার তাড়া নাই । এক জনের কেবল জামান ক্লাস আছে—সে বসিবার ঘরেক্ট থাত পেন্সিল আর এক থানা মোট জামান ডিকুলারি লষ্টয়া বসিয়া গিয়াছে । নৃপেনের একখানি চিঠি লিপিবায় ছিল । গিয়া সেটি শেষ করিয়া আসিতে প্রায় সাড়ে ন-টা বাজিল । মধ্যে এক বার দরজায় ঘণ্টার শব্ব হইয়াছিল । বসিবার ঘরে ঢুকিয় দেখে একটি মেয়ে আসিয়াছে। ওখানকারই একটি ছেলের বন্ধু। পাতল, ছিপছিপে চেহার, এত উপরে পাতলা যে দেখিলে ভয় হয় বুঝিবা ভয়ানক কোন কিছু অস্থখই তার করিয়াছে। নৃপেন ঘরে ঢুকিতেই তাহার সহিত অন্য ছেলেরা মেয়েটির পরিচয় করাইয়া দিল। নৃপেন তখন শুধু ভাবিতেছে, “হায় রে, এত ভাল ভাল মেয়ে আছে এ-দেশে, আর ভারতীয়ের বরাতেই জোটে কিন| এই সব ছাইভস্মের দল।” বিলাতী মেয়ে যখন, হাসিতে ও গল্প করিতে সে ভাল করিয়াই জানে। নানা কথায় আসর জমিয়া উঠিল,—তাহার পর মেয়েটি বাহির করিল এক লুডো খেলার ছক এবং ঘুটি । খেলা স্বরু শুইল । দল ছাড়িয়া উঠিতে তখন তাহার ইচ্ছা করে না, কিন্তু ঘড়ির দিকে নজর পড়িতেই সে আর থাকিতে পারিল না। “এক্সকিউজ মি” বলিয়। সে উঠিয়া পড়িল । শয্যা তখন তাহাকে ডাক দিয়াছে। ক্লাস্তিতে শরীর ভাঙিয়া পড়িতে চাহিতেছে । এ্যালাম ঘড়িতে দম দিয়া সে যখন আলো নিবাইল, তখন ঠিক সাড়ে দশটা বাজিয়াছে। পাচ মিনিটের মধ্যেই শোনা যাইতে লাগিল, নৃপেন সমদারের নিশ্বাসের শবা দীর্ঘ হইতে দীর্ঘতর হইতেছে । কাটিয়া গেল তাহার ম্যাঞ্চেস্টারের একটি দিন। কাজ দিয়া ঠাসা, কিন্তু উদ্বেগহীন, দায়িত্বহীন দিন । মে-দিনের বংসর তিন-শ পয়ষটি দিনে হয় না, বৎসর হয় সাত-শ পয়যটি দিনে, হয়ত আরও বেশীতে। যাহার জুলু বংসরাস্তে ও মনে হইবে মাত্র কাল যেন এই দেশে আসিয়াছি ।