পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৮ প্রবাসী SNEBW লক্ষণ আছে। চ-চরিতে পুরাতন ও নূতনের মিশ্রিত ভাষা থাকিবার কথা। তাহাই আছে। পুর্থীর নিকটবতী দেশের ও কালের দুই চারিখানা পুর্থীর ভাষা তুলনা করিলে প্রায় ঐক্য দেখা যাইবে। বাকুড়ায় জগৎরাম-রায়ের “রামায়ণ” প্রসিদ্ধ। পশ্চিম-উত্তর ভাগে ইহঁfর নিবাস ছিল। এই রামায়ণ ১৬৯২ শকে= ইং ১৭৭৯ সালে রচিত। বাঁকুড়ার কবিশঙ্করের “গোবিন্দমঙ্গল” বৃহৎ গ্রন্থ, কিন্তু মূদ্রিত হয় নাই। মাণিকরামের নিবাস বত মান বাকুড়া জেলার দক্ষিণসীমার সন্নিকটে ছিল । তিনি ১৭০৩ শকে = ইং ১৭৮১ সালে "ধৰ্ম্মমঙ্গল” লিথিয়াছিলেন। ঘনরামের নিবাস ছাতনা হইতে আরও দূরে ছিল । তিনি মাণিকরাম অপেক্ষা পুরাতন (ইং ১৭১১ সাল ) । কিন্তু ভাষা একই । বস্তুতঃ পদ্যের ভাষা বহুকাল যাবৎ একপ্রকার থাকে । ভারতচন্দ্র ১৬৭৪ শকে=cইং ১৭৫২ সালে “অপ্নদামঙ্গল" লিখিয়াছিলেন। তাহার পদ্য পড়িলে মনে হইবে, সেদিনকার রচনা। যথা, অন্নপূর্ণ। উত্তরিল৷ গাঙ্গিনীব তারে । পার কর বলিয়া ৬tfকল পাটনারে । সেই ঘাটে খেয় দেয় ঈশ্বর পটিন । ত্বরায় আনিল নৌকা বামা স্বৰ শুনি । “বিদ্যাসুন্দরে” আটপণে আধসের আনিয়াছি চিনি । অঙ্ক লোকে ভুরা দেয় ভাগ্যে আমি চিনি । খুন হয়েছিয় বাছ চুন টেয়ে চেয়ে । শেষে না কুলায় কড়ি আনিলাম চেয়ে । বর্তমানে ছাতনার উচ্চবর্ণের লোক ‘চেয়ে বলে, অন্য লোক ‘চেঞে, চেঞা' বলে। এই চেঞা পুরাতন রূপ। 'চাঞী' আরও পুরাতন । ‘চাংশ ধ্বনিতে চা-য় , ‘চেয়ে' ধ্বনিতে চে-য়ে। অর্থাৎ ইয়া প্রত্যয় অমুনাসিক । পুর্থীতে কোথাও অমুনাসিক, কোথাও নয় । সপাদশতবর্ষপূর্বে কৃষ্ণ-সেন কি বানান করিয়াছিলেন, কে জানে। আমরা সত্তর আশি বৎসর পূর্বের লিপিকরের বানান পাইতেছি । দেশ কাল পাত্র অনুসারে কথাবাতার ভাষা ভিন্ন ভিন্ন হয় । রাজা রামমোহন রায়ের দেশের ভাষা অল্পে অল্পে পরিবতিত হইয়া বতমান সাধু গদ্যে দাড়াইয়াছে। কিন্তু সে দেশ হইতে ছাতনা বহু দূরে ও উত্তরে। চ-চরিতে এখানে ওখানে দুই চারি পংক্তি গদ্য আছে। যথা, ૭૨ • “এই স্থানে দুই শ্লোক পকা কাটা হওঅ পড়া জাআ নাই । জাহা পড়া জাত "ঠাহাতে অর্থবোধ না হইবাআ ত্যাগ করিলাম।" এখানে ‘হও অ’ হইবা অ’ দুই রূপ আছে। প্রথমে ‘হই বাঅ’ এইরূপ ছিল, পরে হত্ত্বাআ’ হইয়াছে। অর্থাৎ গদ্যটি পুরাতন ও নূতনের সন্ধাকালে রচিত। সেকাল শতবর্ষ পূর্বের বলা যাইতে পারে। গদ্যের নাই' শব্দটি মনে হইবে ভূতকালের, কিন্তু তাহা নহে । এটি পূর্বকালের নাঞি। শ্ৰীযুত ব্রজেন্দ্রনাথ-বন্দোপাধ্যায়সঙ্কলিত ‘সংবাদপত্রে সেকালের কথা” গ্রন্থে হুগলী জেলার শতবৰ্ষ পূর্বের গদ্যের উদাহরণ পাওয়া যায়। কিন্তু সে ভাষা কিছু মার্জিত। দূরবর্তী গ্রামবাসী যে সকল পত্র লিখিয়াছিলেন সে সকল পত্রের ভাষা লক্ষ্য করিলে বিশেষ দেখা যাহবে । দেশভেদ স্মরণ করিলে চ-চরিতের গদ্য শতব্য পূবের বিবেচিত হইবে । কৃত্তিবাসী রামায়ণে “অঙ্গদের রায়বার” আছে । ইহা নিশ্চয় শতাধিক বংসপ্ন পূর্বে রচিত । কিন্তু ইঠ।র সহিত প্রচলিত কথ্য ভাষার প্রভেদ পাওয়া যায় না । আর, ১২০ বৎসর প্রাচীনও নয়। কবি সংস্কৃত, বাঙ্গালা ও হিন্দী ব্যতীত ফাসী শব্দ জানিতেন । সিকন্দর-শাহের দরবারে উজীর, পীর, কাজী, ওমরাহ ইত্যাদি অনেকে বসিয়াছেন । তাহঁাদের সঙ্গে সাজাদ-নদীন বসিয়াছেন ( ৯৯ পু)। পুর্থীতে শব্দটি এত বিকৃত হইয়াছে যে উদ্ধার করিতে কষ্ট পাইতে হইয়াছিল । চ-চরিতে ইসলাম’ শব্দ আছে, ‘ইসলামী ইহার বিশেষণও রচিত হইয়াছে। আমরা ‘মুসলমান’ বলি, ইসলামী বলি না। মুসলমানের চণ্ডীদাসকে ‘বাহগীর’ বলিতেন। শকটি ফাসী অভিধানে পাই নাই। দুই মৌলবীও অর্থ বলিতে পারেন নাই। কবি কোথায় শিখিয়াছিলেন, কে জানে। কোন আধুনিক হিন্দু লেখক এমন অজ্ঞাত শব্দ লিখিতেন না। “শ্ৰীকৃষ্ণকীৰ্ত্তনে” ‘মজুরিআ শঝ আছে। শব্দটি বর্তমানে অপ্রচলিত।