পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌৰ ছিল, তাই বৈদিক সমাজে স্ত্রীলোকের স্থান ছিল প্রায় পুরুষের সমান, স্ত্রী শুধু পুরুষের অহচরী ছিল না, সখী ছিল, বন্ধু ছিল । যেমন পুরুষ ও প্রকৃতির পরস্পরের সহযোগে বিশ্বলীলা চলিতেছে তেমনিই স্ত্রী-পুরুষের সহযোগেই সংসারলীলা চলিবে, তাই বিবাহকে বলা হইয়াছে—সহধৰ্ম্মচারিণী সংযোগ: | এই সহধৰ্ম্মচারিণীসংযোগ: কথাটিতে বৈদিক যুগে বিবাহের আদর্শটি যেমন প্রকাশিত হয়, বিবাহ, উদ্বাহ, পরিণয়, পাণিগ্রহণ প্রভৃতি কথায় তেমনটি হয় নাই । বিবাহ ও উদ্বাহ শব্দে কন্যাকে পিতৃগৃহ হইতে স্বামিপৃহে লইয়া যাওয়া বুঝায়। তেমনই বিবাহের সময়ে প্রজ্জ্বলিত অগ্নির চতুর্দিকে কন্যাকে লইয়া পরিভ্রমণই পরিণয়। বর যখন কন্যার কর গ্রহণ করে তাহাই পাণিগ্রহণ । এ-সবই বিবাহ-অকুষ্ঠানের বিশেষ বিশেষ অংশ। কিন্তু সহধৰ্ম্মচারিণীসংযোগ: বলিতে স্ত্রী-পুরুষের সম্মিলিত জীবনের সমগ্র আদর্শটিকে বুঝায়। প্রথমতঃ, ইহাতে ধৰ্ম্মকেই স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েরই জীবনের আদর্শ বলিয়া ইঙ্গিত করা হইয়াছে। স্ত্রী হউক, পুরুষ হউক, সকলেই ভগবানের অংশ, সকলের মধ্যেই ভাগবত সত্তা নিহিত রহিয়াছে। দেহ প্রাণ মনই মামুষের সব নহে ; দেহ প্রাণ মনের আধারে ভাগবত সভার বিকাশ করা, মানবশরীরে দিব্য অধ্যাত্ম জীবনের বিকাশ করা—ইহাই মাতৃযের চরম লক্ষ্য এবং যেরূপ আচরণের দ্বারা মামুষ এই চরম লক্ষ্যে পৌছিতে পারে, তাহারই সাধারণ নাম ধৰ্ম্ম । কিন্তু, স্ত্রী ও পুরুষ কেহই এক এক সেই পূর্ণ আদর্শে পৌছিতে পারে না, পরস্পরের সহযোগে জীবনের বিকাশ করিয়া তবে সেই পূর্ণতম অধ্যাত্মজীবন লাভ করা যায়। এই উদ্দেশ্বে সঙ্গযোগ করিবার জন্য স্ত্রী ও পুরুষের যে মিলন, তাহাই সহধৰ্ম্মচারিণীসংযোগ: জগতের কোন দেশ, কোন সভ্যতা মানব-বিবাহের এত উচ্চ আদর্শ ধারণা করিতে পারিয়াছে ? এই আদর্শ হইতে আরও বুঝা যায় যে, স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই আপন আপন অধ্যাত্মজীবনের বিকাশের জন্ত পরস্পরের সহিত স্বেচ্ছায় মিলিত হয়, এই মিলন স্ত্রী ও te হিন্দুসমাজে সারীর স্বাম VEBNE পুরুষকে নিজে নিজেই করিতে হইবে। পিতামাতার বিবাহের ব্যবস্থা করিয়া দিলে কখনও এই উদ্দেশ্ব সিদ্ধ হইতে পারে না। জীবনের সকল স্তরে কাহার সহিত কাহার মিলনের সম্ভাবনা, তাহার। নিজেরা না ৰুঝিলে সে মিলন কখনও সার্থক হইতে পারে না। এই জন্ত প্রয়োজন স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই বয়ঃপ্রাপ্ত হইবে, সুশিক্ষিত হইবে, নিজেদের জীবনের উচ্চ অধ্যাত্ম আদর্শ সজ্ঞানে উপলব্ধি করিবে, সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নিজের যোগ্য সঙ্গী বাছিয়া লইবে, তবেই হইবে প্রকৃত সহধৰ্ম্মচারিণীসংযোগ: । আমরা দেখিতে পাই, বৈদিক যুগে বিবাহের এইরূপ ব্যবস্থাই ছিল । স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই সমান ভাবে শিক্ষা ও দীক্ষা পাইত, উভয়েই স্বতন্ত্র ভাবে যজ্ঞাদি করিতে পারিত, ইচ্ছা করিলে অথবা মনোমত সঙ্গী না পাইলে উভয়েই আমরণকাল অবিবাহিত থাকিতে পারিত, এবং বিবাহের সময় উভয়ে উভয়কে সজ্ঞানে সথারূপে গ্রহণ করিত । বেদে বিবাহের যে-সব মন্ত্র আছে তাহ অনুধাবন করিলেই আমরা এই সব নিঃসন্দেহে বুঝিতে পারি। এখানে কয়েকটি মন্ত্র উদ্ধৃত করিয়া দেখাইতেছি । বর কন্যার সহিত সপ্ত পদ গমন করিয়া বলিতেছে, সখা সপ্তপদাভব, সখায়ে সপ্তপদ বভূব, সথাংতে গমেত্বং, সখ্যাক্তে মা ঘোষং, সখ্যান্মে মা যোষ্টা: । সময়াব সঙ্কল্পাবহৈ সং প্রিয়ো রোচিষ্ণু স্বমনস্তমানে ইষমূর্যমভি সং বসানে সং নেী মনাংসি সংখ্রতা সমুচিত্তান্তাকরম ৷ “সপ্ত পদ আমার সঠিত গিয়। তুমি আমার সখ হইবে । এই যে একসঙ্গে সপ্ত পদ আসিয়াfছ, এখন তুমি আর আমি সখা । তোমার সখ্য ষেন আমি চিরকাল রক্ষা করিতে পারি, ষেন তোমার সখ্য হইতে কখনও বিচ্ছিন্ন না হই । এস, ভু-জনে মিলিত হই । এস দু-জনে একসঙ্গে সঙ্কল্প করি । হু-জনে দু-জনকে ভালবাসিয়া, দু-জনার সহবাসে পরম আনন্দ লাভ করিয়া, পরস্পরের কল্যাণ কামনা করিয়ু, সকল ভোগমুখ উভয়ে মিলিত ভাবে ভোগ করিয়া, এস আমরা আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষী, আমাদের ত্রত-সঙ্কল্প, আমাদের চিস্তা-ভাবনা মিলিত করি ।” এই মন্ত্রটিতে বৈদিক বিবাহের আদশ সুন্দরভাবে পরিস্ফুট হইয়াছে। এই মন্ত্র হইতেই বুঝা যায় যে, বিবাহের সময় বর ও কন্যা উভয়েরই বয়স এমন যখন