পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌৰ te হিন্দুসমাজে লারীর স্থাল ক্রমশঃ অধ্যাত্মজীবনের বিকাশ করিতে পারে, সে-জন্য বিবাহের পূৰ্ব্বে পুরুষ ও স্ত্রী উভয়কেই সমানভাবে যথোচিত শিক্ষা গ্রহণ করিতে হইত। বৈদিক যুগে স্ত্রীপুরুষনিৰ্ব্বিশেষে সকলেরই দীক্ষা হইত, সকলেই ব্রহ্মচৰ্য্য পালন করিয়া গার্হস্থ্য জীবনের জন্য প্রস্তুত হইত, সকলেই বেদ পাঠ এবং অধ্যাত্ম সাধনা করিতে পারিত। অনেক স্ত্রীলোক চিরজীবন অবিবাহিত থাকিয় অধ্যাত্ম-আলোচনা অধ্যাত্মসাধন করিত, তাহাদিগকে ব্রহ্মবাদিনী বল হইত। স্ত্রীলোকেরাও যে ঋষি হইত, গাগী-মৈত্রেয়ীস্বলভ তাহার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত । কালক্রমে সমাজে স্ত্রীলোকের স্থান অনেক নিম্নগামী হইয়া পড়ে, ঘে-স্ত্রী ছিল স্বামীর সখী, সহধৰ্ম্মিণী, সে-ই কাৰ্য্যতঃ স্বামীর দাসীতে পরিণত হয়। হিন্দু দর্শনশাস্ত্রে পুরুষ ও প্রকৃতির সম্বন্ধ যখন দাড়াইল শুধু পুরুষের ভোগের জন্যই প্রকৃতির লীলা, পুরুষ অনুমতি দেয় ভোগ করে তবে প্রকৃতির সংসার লীলা চলে, পুরুষ সমর্থন না করিলে প্রকৃতি দাড়াইতে পারে না, তখন সমাজেও নিয়ম হইল, ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমৰ্হতি । স্ত্রী সম্পূর্ণভাবেই পুরুষের অধীন হইয়া পড়িল । ক্রমশ: স্ত্রীলোকের স্বতন্ত্র শিক্ষাদীক্ষা বন্ধ হইল, স্বামীর সেবায়ু জীবন উৎসর্গ করা, স্বামীর সংসারে মিশিয়া যাওয়া, স্বামীকেই ইষ্টদেবতা বলিয়া পুজা করাইহাই হইল নারীর জীবনের আদর্শ। এই আদর্শ অনুসরণ করিতে হইলে অল্প বয়সেই স্ত্রীলোকের বিবাহ দিতে হয় যেন সে অল্প বয়স হইতে স্বামীর অধীনে থাকিয়া স্বামীর নিকট শিক্ষা পাইয়া সম্পূর্ণভাবে স্বামীর বশবৰ্ত্তী হইয়৷ পড়িতে পারে। তাই নূতন শাস্ত্রবিধান রচিত হইল, বৈবাহিকে বিধিঃ স্ত্রীণাং সংস্কারে বৈদিক স্মৃত: পতিসেবা গুরেীবাস; গৃহার্থোইগ্নি পরিক্রিয়া । মন্থস্থতি ২,৬৬,৬৮ “স্ত্রীলোকের পক্ষে বিবাহই বৈদিক সংস্কার ; তাহার পক্ষে স্বামীসেবাই গুরুগৃহে বাস এবং গৃহকৰ্ম্ম করাই তাহার যজ্ঞ ।” এইটি নূতন বিধান, কারণ বৈদিক যুগে পুরুষদের ন্যায় স্ত্রীলোকদেরও উপনয়ন হইত, তাহারাও গুরুগৃহে বাস করিয়া শিক্ষাদীক্ষা লাভ করিত এবং তাহারাও অগ্নিপালন করিয়া যজ্ঞ করিত। স্মৃতিতেই ইহ স্পষ্ট স্বীকৃত হইয়াছে। পুরাকল্পে কুমারীণাং মৌজীবন্ধনমিষ্যতে। অধ্যাপনং চ বেদানাং সাবিত্রী বচনং তথা ॥ যমসংহিতা যখন এই নূতন বিধান প্রবর্তিত হইল, তখন কেহ কেহ চেষ্টা করিলেন সেই পুরাতন প্রথা যেন সম্পূর্ণভাবে লোপ না পায়। তাই হারীতসংহিতাতে দেখিতে পাওয়া যায়, ন শূদ্ৰসমা: ত্ৰিয়: ন হি শূদ্ৰযোনে ব্রাহ্মণ ক্ষত্ৰিয় বৈশ্বাজায়স্তে । তন্মাচ্ছন্দস থ্রিয়: সংস্কার্য্যাঃ । তাসাং দ্বিবিধে বিকল্প, ব্ৰহ্মবাদিল্প: সদ্যোৰাহোশ্চেতি । ব্ৰহ্মবাদিনীনামুপযনমগ্নিসংস্কার: স্বগৃহেইধ্যয়নম ভৈক্ষচর্য্যা চ । প্রাপ্তেী রজস: সমাবর্তনম্। “স্ত্রীলোক শূদ্রের সমান নহে। শূদ্ৰযোনি হইতে ব্ৰাহ্মণ ক্ষত্ৰিয় বৈশ্বের জন্ম হইতে পারে না। অতএব স্ত্রীলোকের সকল সংস্কার বৈদিক বিধি অনুযায়ী হওয়া চাই। স্ত্রীলোকদের মধ্যে দুই ভাগ আছে, যাহার ব্রহ্মবাদিনী হইবে এবং যাহার এখনই পক্ষে বিবাহ করিবে । যাহার। ব্ৰহ্মবাদিনী হুইবে তাহাদের উপনয়ন, অগ্নিসংস্কার, স্বগৃহে অধ্যয়ন এবং ভৈক্ষ্যচর্য্যা বিধেয়। যখন তাহার। যৌবনপ্রাপ্ত হইবে তখন এই সব নিয়মপালন হইতে তাহার। মুক্ত হইবে।” কিন্তু হারীতাদির এই চেষ্টা সফল হয় নাই, কালক্রমে সকল স্ত্রীলোকেরই উপনয়ন, দীক্ষা, বেদ পাঠ বন্ধ হয়, সকল বর্ণের স্ত্রীলোকেই শূদ্রের সহিত সমান হইয়া যায়। ফলে সমাজের ব্রহ্মতেজ নষ্ট হইয়া যায়, আর ঋষিদের জন্ম হয় না, এ কথা আপস্তম্ব কর্তৃক স্পষ্ট স্বীকৃর্ত হইয়াছে ; ঋষয়োহবরেষু ন জায়স্তে । স্ত্রী প্রথমে হইবে স্বামীর অনুগত শিষ্যা, স্বামীর নিকটেই সমস্ত শিক্ষাদীক্ষা লাভ করিবে, ইহাই হইল নূতন ব্যবস্থা, তাই মনুস্মৃতিতে দেখা যায়, স্বামীর বয়স স্ত্রীর অপেক্ষ তিনগুণ বেশী, এই স্মৃতি অনুসারে আট বৎসরের কন্যার সহিত চব্বিশ বৎসরের পুরুষের বিবাহই প্রশস্ত। ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশী বয়সে বিবাহের বিধান মনুস্মৃতিতে আছে। কিন্তু পরাশরসংহিতা আরও বেশী অগ্রসর হইয়াছে, বলিয়াছে যে, কন্যা দ্বাদশ বর্ষ প্রাপ্ত হইলে যদি তাহার বিবাহ দেওয়া না হয় তাহা হইলে পূৰ্ব্বপুরুষগণকে প্রতিমাসে ঐ কন্যার রজঃ পান করিতে হয় । মাতা পিতা ও জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা যদি কন্যাকে