পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

攀48 ঘরের দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “বাবা, আমায় ডাকছেন ?” * পুত্র শিবেন্দ্র সে-বার বি. এসসি. পাস করেছে। ডাক্তারি পড়বে এই তার ইচ্ছ। শরৎবাবুর যত কিছু দুর্ভাবনা এই শিবেন্দ্রকে নিয়ে । “তোমার ভৰ্ত্তি হওয়ার কি হ’ল ?” "এখনও তার ঢের দেরি-প্রায় ফু-মাস ।”

  • স্থ । তোমার মা কি করছেন ?”

মায়ের ছায়া-দর্শনও ইদানীং শিবেক্সের পক্ষে কষ্টসাধ্য ছিল । সৰ্ব্বাঙ্গে দস্তুরমত গোবরের প্রলেপ ও গঙ্গাজলের ছিটে দিয়ে তবে তার সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব ছিল । শিবেন্দ্র আমতা আমতা করল, কিছু সঠিক উত্তর দিতে পারল না ।

  • আচ্ছা, বামুনঠাকরুণের নাকি অস্থখ করেছে ?”

“আজ্ঞা হুঁ৷ ” “ক-দিন ?” “দিন-তিনেক হবে। আজকে জরটা একটু বেশী । প্রায় এক-শ তিন উঠেছে।”

  • কে দেখছে ?”

‘শচীন ডাক্তার ” “কি খেতে দিচ্ছে ?” “বালি, ফলটল কিছু।” “তোমার মার খাওয়া হয়েছে ?” শিবেন্দ্র হা-না কিছুই উত্তর দিতে পারল না। শরৎবাবু বললেন, “হু । দেখ, কথাটি হয়ত আমার মনে নাও থাকতে পারে । তুমি বেশ মনে রাখবে— বামুন-ঠাকরুণের অস্থখ সারলেই তার মাইনেপত্র চুকিয়ে দিয়ে ওদের যেন ব'লে দেওয়া হয় এখানে আর ওদের আমি রাখতে পারব না । আমার এ-কথার কিছুমাত্র নড়চড় হবে না এও ওদের বলে দিও। আর কাল থেকেই এক জন ঠাকুর দেখবে,—যাও ।” শিবেন্দ্রের মাথায় বজাঘাত হ’ল । নীচে আসতেই মায়া সিড়ির কাছে এসে তার পথ রোধ করে আস্তে আস্তে বলল, “ইস, মুখখান যে বেজায় ভারি । বকুনি থেয়েছ বুঝি ?” তার পর অনেক রাত পৰ্য্যস্ত তাদের কি সব কথাবার্তা হ’ল । সেদিন, তার পরদিন এবং তার পরদিনও । দু-জনে পরামর্শ করল, তারা মরবে। একসঙ্গে দু-জনে মরবে । গভীর রাত্রে তারা ঘরে খিল এটে বসল। এক শিশি আসেনিক—অথবা মার্কিউরিক সলিউশ্বন, কি ঐ রকম Gष्ट्रेबोर्जेो 3989 據 একটা কিছু সম্মুখে রয়েছে। তাতে দু-জনের মরবার মত ওষুধ । মায়া বলল, “আমায় আগে দাও। কি জানি শেষে যদি না পারি।” শিবেন গ্লাসে ওষুধ ঢেলে তার হাতে দিল । উঃ! কি জালা-মায়া যন্ত্রণায় ছট্‌ফট্‌ করতে লাগল। উঃ! শিব-দ, তুমি ও কক্ষনো খেয়ো না—বড় জালা! ধাক্কা লেগে অবশিষ্ট ওষুধটা মাটিতে পড়ে গেল। শিবেনের মর্য হ’ল না । তার পর শিবেন চীংকার ক’রে বাড়ীম্বদ্ধ লোককে জাগিয়ে দিল। ডাক্তার এল, চিকিৎসা হ’ল, অর্থব্যয়ও হ’ল খুব, কিন্তু মায়াকে কেউই বাচাতে পারল না । শিবেন ডাক্তারি পাস করেছে । পশ্চিম-ভারতের কোথায় প্র্যাকটিস করছে। বিবাহও নাকি করেছে। মায়ার কথা তার হয়ত আর মনেই নেই। কিন্তু মায়ার আত্মা আজও তার প্রিয়জনের অপেক্ষায় এ-বাড়ীতে নিত্য ঘুরে বেড়ায় ।” সনং-দা চ’লে গেলে একটু পরেই যোগেশ এল । রাত্রির ঘটনা তাকে বললাম । আবগারী ইনস্পেক্টরের ছাদ থেকে প্রায়ই আমাদের একটা কলমের গাছ থেকে আম চুরি যেত। যোগেশ এক দিন দেখে ফেললে, ওদেরই একটি মেয়ে ছাতা দিয়ে আম পেড়ে নিচ্ছে । আকস্মিক ভাবে ধরা পড়ায় মেয়েটি পালিয়ে গেল ; কিন্তু ছাতা বেধে থাকল সেই আমের ডালে । যোগেশ নিয়ে এল ছাতাটি পেড়ে এবং সেই অবধি সেটা নিৰ্ব্বিবাদে রয়েই গেছে তার 夺T破目 আমার কথা সমস্ত শুনে যোগেশ বলল, “ও কিছু না, স্রেফ ছাতা। ছাতিটি রাত্রিবেলা ওরা চুরি করে ফেরত নিতে চায় ।” মাষ্টারমশায়ের একাস্ত অতুরক্ত ভবানীপ্রসাদ সমস্ত শুনে বললেন, “ও আর কেউ নয়, সাক্ষাৎ গায়ত্রী । প্রত্যহ গভীর রাত্রে মাষ্টারমশাই যে দ্যাস-প্রাণায়াম, আর গায়ত্রী স্তব পাঠ করেন, সেটা কি কিছুই নয় মনে কর ? শুনে বেশ একটু আত্মপ্রসাদ লাভ করি। স্বয়ং গায়ত্রী তাহলে আমাকে দেখা দিয়ে গিয়েছেন । কিন্তু আজও সাধনামার্গের গায়ত্রীর চেয়ে সংসারের অতিবড় কঠোর সত্য মায়ার পরিণাম আমাকে বেশী ক’রে অভিভূত করে। ’