পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ তিনি হাসিমুখে অগ্রসর হইয়া পথের উপরেই দাড়াইলেন। শোভাযাত্রাটির গতি স্তব্ধ হইয়া গেল । রায় বলিলেন–জনাৰ্দ্দন যে আজকাল তোমাদের পক্ষে, এ আমি জানতাম মজুমদার। তার পর নব নেটাকে দিলে লটুকে ? মজুমদার বিনীত হাসি হাসিয়া বলিল—আঞ্জে না, ছ-বছর হ’ল দ্বীপান্তর—আর দু-জনের দু-বছর ক’রে জেল । 窮 রায় হাসিয়া বলিলেন—তবে আর করলে কি হে ? এস এস এক বার ভেতরেই এস শুনি বিবরণ । কই শ্ৰীবাস কই ? এস পাল এস । সবিস্ময়ে মজুমদার বলিল-আজ্ঞে আজ মাপ করুন, পূজো দিতে যাচ্ছি। --ঢাক বাজিয়ে পূজো দিতে যাচ্ছ, কিন্তু বলি কই হে ? চরে বলি হয়ে গেল, আর মা সৰ্ব্বরক্ষার ওখানে বলি দেবে না ? মায়ের জিব যে লক্ লক করছে, আমি যে দিব্যচক্ষে দেখছি । মজুমদার ও শ্ৰীবাসের মুখ মুহূৰ্ত্তে বিবর্ণ হইয়া গেল । সমস্ত বাজনদার ও অতুচরের দল সভয়ে শ্বাসরোধ করিয়া দাড়াইয়া রহিল । রায় আর দাড়াইলেন না, তিনি আবার একবার হাসিয়া ছোট একটি “আচ্ছা” বলিয় আপনার কাছারির ফটকের মধ্যে প্রবেশ করিলেন । কিছুক্ষণ পরে স্তব্ধ শ্ৰীবাস ও যোগেশ মজুমদার অনুভব করিল—আলো যেন কমিয়া আসিতেছে, পিছন ফিরিয়া মজুমদার দেখিল প্রবাসের হাতের আলোটি ছাড়া আর একটিও আলো নাই, বাজলদার অনুচর সকলেই নিঃশবে: চলিয়া গিয়াছে। ওদিকে চক্ৰবৰ্ত্তী-বাড়ীতে সুনীতি স্তব্ধ হইয়া দাওয়ার উপর বসিয়া ছিলেন–চোখ দিয়া জল ঝরিতেছিল অন্ধকার আবরণের মধ্যে। তাহার সম্মুখে নাতিকে কোলে করিয়া দাড়াইয়াছিল নবীনের স্ত্রী। সেও নিঃশবে কাদিতেছিল। বহুক্ষণ পরে সে বলিল—সদরে সব বললে হাইকোটে দরখাস্ত দিতে । कॉलिव्हौ gఆat স্বনীতি কোন মতে আত্মসম্বরণ করিয়া বলিলেন— দরখাস্ত নয় আপীল । —তাই যদি হয় রাণীমা—তবে আপনকার ছাড়া আমরা তো কাউকে জানি না । —কিন্তু খরচ যে অনেক মা, সে কি তোরা জোগাড় করতে পারবি ? নবীনের স্ত্রী চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল। স্থনীতি অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলেন—তাও পরামর্শ ক’রে দেখব বাগীবউ ; আহিন আমুক, আর পাচ-সাত দিনেই তার পরীক্ষা শেষ হবে, হলেই সে আসবে। মতি বাগিনী ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিয়া বলিল, আপনকারা তাকে কাজে জবাব দিয়েছিলেন, কিন্তুক আমাকে যে আপুনি না রাখলে কেউ রাখবার নাই রাণীমা ! 發 嶺峰 擎 অহীন্দ্র বাড়ী আসিতেই সুনীতি তাহাকে ইন্দ্র রায়ের নিকট পাঠাইলেন। অসম্ভব জানিয়াও তিনি পাঠাইলেন, মনে গোপন সংকল্প ছিল চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকায় হইলে আপনার অবশিষ্ট অলঙ্কার হইতেও কিছু বিক্রয় করিয়া খরচ সংস্থান করিয়া দিবেন । কিন্তু রায় নিষেধ করিলেন, বলিলেন—খরচ অনেক, শতকের মধ্যে কুলোবে না বাবা । তা ছাড়া—অকস্মাৎ তিনি হাসিয়া বলিলেন---তোমরা আজকালকার কি বলে, ইয়ং মেন, তোমরা ভাববে আমরা প্রাচীন কালের দানব সব, কিন্তু আমরা বলি কি জান ছবছর জেল খাটতে নবীনের মত লাঠিয়ালের কোন কষ্ট হবে না। বংশানুক্রমে ওদের এ-সব অভ্যেস আছে । অহীন্দ্র চুপ করিয়া রহিল। রায় হাসিয়া বলিলেনতুমি তো চুপ ক’রে রইলে, কিন্তু অমল হ’লে একচোট বক্তৃতাই দিয়ে দিত আমাকে ! এখন একজামিন কেমন দিলে বল । - এবার স্মিতমুখে অহীন্দ্র আপনার আশীৰ্ব্বাদে । একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া রায় বলিলেন—আশীৰ্ব্বাদ তোমাকে বার বার করি অহীন্দ্র । মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয়— অহীন্দ্র কথাটা সমাপ্তির জন্য প্রতীক্ষা করিয়া রহিল । বলিল-ভালই দিয়েছি