পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

والنوايانية রায় বলিলেন—তোমার বাবাকে এবার কেমন দেখলে বল তো ? মান কণ্ঠে অহীন্দ্র বলিল—আমি তো দেখছি বেড়েছে মাথার গোলমাল । রায় কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলেন—যাও বাড়ীর ভিতরে যাও, তোমার—মানে অমলের মা এরই মধ্যে চারপাচ দিন তোমার নাম করেছেন। অহীন্দ্রকে বাড়ীর মধ্যে দেখিয়া হেমাঙ্গিনী আনন্দে যেন অধীর হইয়া উঠিলেন। অহীন্দ্র প্রণাম করিতেই উজ্জ্বল মুখে প্রশ্ন করিলেন—পরীক্ষা কেমন দিলে বাবা ? —ভালই দিয়েছি মামীম আপনার আশীৰ্ব্বাদে । —অমল কি লিখেছে জান ? সে লিখেছে অহীনের এবার ফাস্ট হওয়া উচিত । অঙ্গীন্দ্র হাসিয়া বলিল-সে আমাকেও লিখেছে। সে তো এবার ছুটিতে আসছে না লিখেছে । —না । সে এক ধন্তি ছেলে হয়েছে বাবা । তাদের কলেজের ছেলেরা দল বেঁধে কোথায় বেড়াতে যাবে, তিনি সেই হজুকে মেতেছেন। তার জন্যে উমারও এবার আসা হ’ল না । কিন্তু অকস্মাৎ এক দিন অমল আসিয়া হাজির হইল । আষাঢ়ের প্রথমেই ঘনঘটাচ্ছন্ন মেঘ করিয়া বর্ষা নামিয়াছিল, সেই বর্ষা মাথায় করিয়া গভীর রাত্রে স্টেশন হইতে গরুর গাড়ী করিয়া একেবারে অহীন্দ্রদের দরজায় আসিয়া সে ডাক দিল—অহীন, অহীন ! ঝড় ও বর্ষণের সেদিন সে এক অদ্ভুত গোঙানী। সন্ধ্যার পর হইতেই এই গোঙানীটা শোনা যাইতেছে। অহীন্দ্র ঘুম ভাঙিয়া কান পাতিয়া শুনিল সত্যই কে তাহাকে ডাকিতেছে । সে জানাল খুলিয়া প্রশ্ন করিল—কে । —আমি অমল। ভিজে মরে গেলাম, আর তুমি বেশ আরামে ঘুমোচ্ছ, বা বেশ । তাড়াতাড়ি দরজা খুলিয়া সে সবিস্ময়ে প্রশ্ন করিল— তুমি এমন ভাবে ? প্রবাসী 89פ8יצ অমল অইন্দ্রের হাতে বাকুনি দিয়া বলিল—কৃনগ্র্যাচুলেশন্‌স্‌। তুমি ফোর্থ হয়েছ। অহীন্দ্ৰ সৰ্ব্বাঙ্গসিক্ত অমলকে আনন্দে কৃতজ্ঞতায় বুকে জড়াইয়া ধরিল। শব্দ শুনিয়া স্বনীতি উঠিয়া বাহিরে আসিলেন, সমস্ত শুনিয়া নির্বাক হইয়া তিনি দাড়াইয়া রহিলেন । চোখ তাহার জলে ভরিয়া উঠিয়াছে। চোখ দুটি যেন তাহার সমুদ্ৰ—আনন্দের পূর্ণিমায় বেদনার অমাবস্যায় সমানই উথলিয়া উঠে। অহীন্দ্র বলিল—আমলকে খেতে দাও মা । সুনীতি ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন । কিন্তু অমল বলিল— না পিসিমা, স্টেশনে এক পেট খেয়েছি, এখন যদি আবার খাওয়ান, তবে সেটা সাজা দেওয়া হবে । বরং চা এক পেয়াল ক’রে দিন। আর অমল আলোটা আন তো— ব্যাগ থেকে কাপড় জমা বের ক’রে পাণ্টে ফেলি । বাড়ী আর যাব না রাত্রে, কাল সকালে যাব ৷ চা করিয়া খাওয়াইয়। অহীন্দ্র ও অমলকে শোয়াইয়া আনন্দ-অধীর-চিত্তে সুনীতি স্বামীর ঘরে প্রবেশ করিলেন । রামেশ্বর খোলা জানালায় দাড়াইয়া বাহিরের দুর্য্যোগের দিকে চাহিয়াছিলেন—ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ চমকিয়া উঠিতেছে, কিন্তু সে তীব্র আলোকের মধ্যে ও নিম্পলক দৃষ্টিতে চাহিয়া আছেন। বিদ্যুৎ-চমকের আলোকে স্বনীতি দেখিলেন গ্রামের প্রাস্তে প্রান্তে বিপুল-বিস্তার একখানা সাদা চাদর দিয়া কে যেন কালীর বুক ঢাকিয়া দিয়াছে—ঝড় ও বর্ষণের মধ্যে যে অদ্ভুত গোঙানী শোনা যাইতেছে, সেট ঝড়ের নয়, বর্ষণের নয়, কালীর ক্রুদ্ধ গর্জন ! বন্যা আসিয়াছে ! >b* আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহেই এবার কালিন্দীর বুকে বান আসিয়া পড়িল । এক দিকে রায়হাট অন্য দিকে সাঁওতালদের ‘রাঙাঠাকুরের চর’, এই উভয়ের মাঝে রাঙা জলের ফেনিল আবৰ্ত্ত ফুলিয়া ফুলিয়া খরস্রোতে ছুটিয়া চলিয়াছে। আবর্তের মধ্যে কুটিল কল কল শব্দ শুনিয়া মনে হয় সত্য