পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রক্ত ক্রমণীন্দ্র দত্ত দিল বেঁধে চলেছি দিনাজপুর । উপলক্ষ বন্ধুর বিয়ে। বন্ধুবর ধরণীধর চলেছে পকেট-ছেড়া সিদ্ধের পাঞ্জাবী চড়িয়ে । ইচ্ছা, বিবাহ নামক গুরুতর ব্যাপারটির প্রতি স্বেচ্ছাকৃত উদাসীনতা প্রদর্শন। সঙ্গে রয়েছে ওয়াটার-প্রুফুধারী দীননাথ আর ছত্রধারী বনমালী । এ ছাড়া আরও আছে অনেকে । তাদের নামের তালিকা দিয়ে আর উপসর্গ বাড়াব না । অভ্যর্থনা-আপ্যায়নের পালা শেষ হ’তে হ’তেই ট্রেন ছেড়ে দিল। কিছুক্ষণ সবাই নীরব। বলবার কিই বা আছে । যার ్వు সঙ্গে তো একসঙ্গেই বেরিয়েছি। যারা অপরিচিত, Nতাদের সঙ্গে আলাপ করবার মত নৈকট্যও তখনও হয় নি। অগত্যা সবাই চুপ। ওয়াটার-প্রুফ ওরফে দীননাথ পকেট থেকে চলতি -সপ্তাহের সাময়িক পত্রিকা বের করে পাতা উল্টাল। বলতে ভুলে গেছি দীননাথ সাহিত্যিক, মানে মাসিক.সাপ্তাহিকের পাতায় তার গল্প-কবিতা নিয়মিত বেরোয় । .কথা বলবার একটা স্বযোগ পেয়ে বললাম--কি কাগজ ? দেথি । —সাপ্তাহিক ‘মহামানব" । ঠোটের কোণে স্মিত হাসি টেনে দীননাথ কাগজখানি বাড়িয়ে দিল । পাতা উলটে আমিও সপন্ধে হেসে উঠলাম-আরে, এতে যে তোমারই গল্প রয়েছে। —কি গল্প ? কি গল্প ? চার দিক থেকে প্রশ্নের ঢেউ -গর্জে উঠল। আমি বললাম—গল্পের নাম "রক্তের নিশান ; লেথক বাংলার বিখ্যাত কথাশিল্পী ঐদীননাথ মুখোপাধ্যায়। স্বরু হ’ল আলোচনার ঐকতান, নানা ধরণের মন্তব্য । রাইকিশোরীবাৰু বললেন—গল্পের নামটি কিন্তু হয়েছে و و س--839 খাস, রক্তের নিশান । ভিতরে ব্যাপারটা কি বলুন তো দীননাথবাবু। ওয়াটার-প্রুফ চোখে আনন্দ ও আত্মপ্রসাদের রামধন্থ একে জবাব দিল—আজে, এই শ্রমিকদের জীবনযাত্রার পরিণতির কথা আর কি। তারাও এক দিন জাগবে, জাগবে এই সব সবহারাদের দল, চাইবে তাদের পাওনা, বিশ্বের আকাশে সেদিন উড়বে রক্তের নিশান । ছত্ৰধারী ওরফে বনমালী দিল বাধা-থামে হে বাপু, থামো, এই ট্রেনের মধ্যে আর রক্তের নিশান উড়িও না । মাঝপথে ট্রেন থেমে যেতে পারে। সকলে হো-হে ক’রে হেসে উঠল । ওয়াটার-প্রফ অপ্রস্তুত । দীননাথ আর বনমালী বন্ধু । তাই রক্ষা । অন্ত কেউ হ’লে সাহিত্যের গতিপথে এই আকস্মিক উপলখণ্ডের আবির্ভাবে কি ভীষণ সংঘাতের স্বষ্টি হ’ত বলা যায় না। ’ যাই হোক, যে নৈঃশব্যের মহাসাগর বেয়ে এতক্ষণ চলছিল যাত্রা, এইবার তার বুকে জাগল কথার দ্বীপ। নানারূপ আলাপ-আলোচনায় ট্রেনের কামরা মুখর হয়ে উঠল । রাইকিশোরীবাবু টপ্পায় মুর দিলেন। কেউ কেউ দুই বেঞ্চির মাঝে রেনকোটটা বিছিয়ে ব্রীজ খেলতে মুরু করলে। ঠিক খেলা নয়, কলকাতা-দিনাজপুরের মধ্যবর্তী সময়-সাগরের বুকে সেতু গড়বার প্রয়াস । ট্রেন চলেছে। একঘেয়ে শব্ধ। দুই পাশে প্রকৃতির ছায়াছবি। আমাদের গৰ্ব্বিত অভিযানের সঙ্গে তাল রাখতে না পেরে সব যেন নতমুখে পিছিয়ে যাচ্ছে। পথচারী নরনারী, গাছপালা, খেত-খামার, খরস্রোত। নদী, দূরের দিক্‌চক্ররেখা, মেঘহীন আকাশ-সকলকে পরাজিত করে, পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেছি আমরা ।