পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চলা "শুধু চলা। কেবল গতি । বিরামহীন গতি। একঘেয়ে। ক্লাস্তিকর। ভিতরে মোটামুটি একই নরনারীর মুখ। কেউ শুয়ে, কেউ বসে, কেউ বা আলোচনারত । বাইরে অবশু আছে বিচিত্র প্রকৃতি । কিন্তু ট্রেনযাত্রীর কাছে তার একই রূপ । সমগ্র প্রকৃতি পরাজয়ের গ্লানিতে স্নান, অপস্বয়মান, একখানি প্ৰণামে আত্মনিবেদিত । এই ক্লাস্তিকর অবসন্নতার স্বযোগেই বুঝি দার্শনিকতার ভূত চাপে মানুষের ঘাড়ে। মনে হ’ল, আধুনিক সভ্যতা মানুষকে দিয়েছে দেবতার আসন । প্রকৃতির পঞ্চশক্তিকে আয়ত্তে এনে প্রকৃতির বুকেই সে চালিয়েছে অবাধ শাসন । যন্ত্ৰ-দানবকে পাহার রেখে জলে স্থলে আন্তরীক্ষে চলেছে মামুষের প্রভুত্ব । মামুব হয়েছে অপরাজেয় । একটা কর্কশ কণ্ঠের চীংকারে চমক ভাঙল । ফিরে দেখি, একটা লোক বিচিত্র ভঙ্গীতে ব’কে চলেছে । গায়ের রং কালে । একটু বেটে। রোগাটে, কিন্তু দুৰ্ব্বল নয়। শক্ত আর্টসার্ট কাঠামোর উপর অল্প মাটি দিয়ে গড়া মূৰ্ত্তির মত। চোয়াল ও গালের হাড় উচু হয়ে উঠেছে। চোখ দুটো অস্বাভাবিক রকম তীক্ষ্ণ । সমস্ত মুখে একটা শক্তির আভাস । বঁ-হাতে টিনের একটা রংচটা স্কটকেস । ডান হাতে দুই আঙুলের ফাকে একটা প্যাকেট। সবুজ সিন্ধু-পেপারে মোড়া। লোকটি অবিরাম চীৎকার করছে ; ছুরিতে কাটা, দায়ে কাট, বটিতে কাট, কাচে কাট, শামুকে কাটা, হঠাৎ আঘাত লেগে কাট,—যে কোন রকম কাটা হয়,—ফিনকি দিয়ে রক্ত ছোটে,—অত্যন্ত জাল করে,–কিছুতেই রক্তপড়া বন্ধ হয় না,—তখন শুকনো দ্যাকড়াধু ক’রে ‘রক্তারি মলম’ লাগিয়ে দিন,— আশ্চৰ্য্য ফল পাবেন,~~চোখের পলকে রক্ত পড়া বন্ধ হবে,—জালাযন্ত্রণার উপশম হবে —মনে রাখবেন ‘রক্তারি মলম',—ডাক্তার ত্রিনয়ন ত্ৰিপাঠীর ‘রক্তারি মলম,”—রক্ত পড়ার সাক্ষাৎ যম,—বিশ্বাস না-হয় পরীক্ষা リー Yeşty ত যাত্রীর সব বিরক্ত fর উপক্রম করেছিল । তাকাল । লোকটা পকেট থেকে বের করল বেশ বড় একখানি ধারাল ছুরি । পালিশ-করা চকচকে ফলা। যাত্রীদের, চোখেও বিস্ময় উঠল ঝকমকিয়ে । ছুরির এক টানে লোকটা হাতের কঞ্জির নীচে খানিকট চামড়া কেটে ফেললে । দারুণ যন্ত্রণায় অস্ফুট আৰ্ত্তনাদ বেরিয়ে এল মুখ হতে। কপালের চামড়া গেল কুঁচকে । রক্তে হাতখানা লাল হয়ে গেল । –এই দেখুন। ব’লে লোকটা হাতখানা তুলে ধরল। রক্ত ঝরে পড়ছে। তাজ! লাল রক্ত । প্রতি বিন্দুতে অসংখ্য রক্তকণিকা। জীবনযুদ্ধের অক্ষৌহিণী সৈন্থ। । কামরার চার দিকে এক বার চোখ বুলিয়ে লোকটী বলতে লাগল বক্তৃতার স্বরে—এইবারে—এই দেখুন ‘রক্তারি মলম' । ডাক্তার ত্রিনয়ন ত্ৰিপাঠীর আশ্চৰ্য্য, আবিষ্কার । এমনি ক’রে ন্যাকড়ায় জড়িয়ে রক্তের মুখে । লাগিয়ে দেবেন। দেখতে দেখতে রক্তের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে | সাপের মত তীব্র দৃষ্টি মেলে লোকটি আবার চাইল । চার দিক । বাত্রীদের চোখে মুখে বিস্ময় ও সহানুভূতি । লোকটার ঠোটের কোণে বাক হাসি ফুটে উঠল। কিন্তু সে মুহূৰ্ত্ত মাত্র । ডান হাতের দুই আঙলের ফাকের সেই সবুজ সিদ্ধ-পেপারে মোড়া প্যাকেটটা নানা ভঙ্গীতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লোকট। আবার স্বরু করলে—ডাক্তার ত্রিনয়ন ত্ৰিপাঠীর ‘রক্তারি মলম’ । গৃহস্থের ঘরে ঘরে, প্রত্যেক লোকের পকেটে পকেটে রাখা উচিত। যদি - কারও প্রয়োজন থাকে = ওপাশ থেকে কে যেন শুধাল-এর দাম কত ? দু-পা এগিয়ে গিয়ে লোকটা জবাব দিলে—‘রক্তরি মলম’। প্রকৃত দাম এর অনেক । কিন্তু বহুল প্রচারের জন্য কোম্পানীর কন্সেস্ন-রেট—এই নমুনার প্যাকেট দু-আনা-মাত্র দু-আনা । যদি কারও দরকার হয় চেয়ে . নেবেন। ডাক্তার ত্রিনয়ন—