পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

८औष • मूलुक ఉty్స কর্কশ ভাঙা গলায় লোকটা অশ্রাস্ত চেচাতে লাগল । কেউ হাতে নিয়ে ফিরিয়ে দিল, কেউ দরদপ্তর করল, কেউ বা এক প্যাকেট কিনল। কামরার এপাশ-ওপাশ পায়চারি করে লোকটা বক্তৃতা দিয়ে চলল। একটা সামান্য ফেরিওয়ালা । ট্রেনযাত্রীর নিডাসহচর। এমন অনেক দেখেছি, অনেক শুনেছি। তবু লোকটার ভাবভঙ্গীতে কেমন একটু মুগ্ধ হয়েছিলাম। তার মলমবিক্রির কায়দা-কৌশলের মধ্যে অনেকখানি নাটকীয়তা আছে তা জানি । জীবিকা অর্জনের দুরূহ প্রচেষ্টার বেদীতলে অনেকেই অজ্ঞাতে জীবনকে তিলে তিলে বলি দেয়, তাও জানি । কিন্তু প্রত্যহ এমন অনেক অনেক বার নিজ হাভে নিজের রক্তপাত করবার এই ছিন্নমস্ত-নীতি, -এ যেন একটু অস্বাভাবিক, অদৃষ্ঠপূৰ্ব্ব । চোখের সামনেই তো দেখলাম তাজা লাল রক্ত। প্রতি বিন্দুতে অসংখ্য রক্তকণিকা। জীবনযুদ্ধের অক্ষৌহিণী সৈন্য । ট্রেনের কামরা এতক্ষণে আবার ঠাণ্ডা হয়ে পড়েছে । সবাই মন দিয়েছে যে-যার কাজে । কেউ শুয়ে, কেউ ব’সে, কেউ বা আলোচনারত । রাইকিশোরীবাৰু জানালার উপর মুখ গুজে ঘুমিয়ে পড়েছেন। ওয়াটারপ্রাফের চোখ 'মহামানব’-এর পাতায় নিবদ্ধ, হয়ত সে রক্তের নিশান ওড়াচ্ছে মনের আকাশে । ওপাশে ছত্ৰধারী “এল. এস. ইন হার্টস্ ডেকে হার্ট ফেল করবার জোগাড় । সবাই অল্পবিস্তর আত্মনিমগ্ন । হাত তুলে ইসারায় লোকটাকে ডাকলাম । নূতন উৎসাহে তার চোখদুটি জলে উঠল। তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে হাতের প্যাকেটটি বাড়িয়ে দিল আমার দিকে । বললাম—দু-প্যাকেট দাও । অপ্রত্যাশিত প্রস্তাব । একসঙ্গে দু-প্যাকেট ‘রক্তরি মলম' বোধ হয় সে কখনও বেচে নি । তাড়াতাড়ি মুটকেস খুলে ফু দিয়ে ময়লা ঝেড়ে আর একটা প্যাকেট তুলে নিল। সঙ্গে লালচে বালির কাগজে লেখা একখানি দুমড়ানো বিধান-পত্র । গায়ের ময়লা হাফ-শার্টে প্যাকেটটা ভাল ক'রে মুছে আমার হাতে দিল। বলল - নিয়ে যান বাৰু, রক্ত পড়ার অব্যর্থ যম --ডাক্তার ত্রিনয়ন ত্ৰিপাঠীর চার জানা পয়সা তার হাতে দিয়ে বললাম--ব’লো । কাচুমাচু হয়ে লোকটা বসল আমার পাশে । অত্যন্ত জড়সড় ভাব। কিছুক্ষণ আগের দিগ্বিজয়ী বক্তার আশ্চৰ্য্য পরিবর্তন । শুধালাম-তোমার নাম কি ? —-আজ্ঞে পতিতপাবন দে । —বাড়ী কোথায় ? —ফরিদপুর জেলায়। —এ কাজ আরম্ভ করেছ কত দিন ? --আজ্ঞে, ‘রক্তারি মলম’-এর আপিসে কাজ নিয়েছি প্রায় মাস-চারেক হবে । —তার আগে কি করতে ? –এই ক্যানভাসারিই করতাম । ধরুন, ‘জরশনি পাচন’, ‘ব্যথাবারণ বাতের মালিশ’, ‘স্থাপানি-হরণ বটি’ এমনি কত কি ? এই পাচ সাতটা করেই তো আমাদের সংসার চালাতে হয় বাৰু। —এতে কি রকম পাও মাসে ? —সে কথা আর বলবেন না বাৰু। এক সময় ছিল, যখন এতে ব্যবসা ছিল । এখন হয়েছে এক-পঞ্চাশটা কোম্পানী, তার ন-শ নিরানব্বই জন ক্যানভাসার । ক্যানভাসার তো ছাই, কেবল নামেরই বাহার। নইলে সতের টাকা মাইনে নিয়ে আমি তো চলে এলাম ডাক্তার ত্ৰিনয়ন ত্ৰিপাঠীর কোম্পানীতে, আর তোরা হতভাগা অমনি ‘জর শনি’ কোম্পানীতে লাল বাতি জ্বলিয়ে দিলি । যত সব— বাধা দিলাম। এ যে কলের পুতুল। এক বার চাবি দিলে আর রক্ষণ নেই। কথার তরঙ্গ দেখা দেবে ঈথার-সমুদ্রে । --আচ্ছা পতিতপাবন, এই সামান্ত টাকায় তোমার চলে কি ক’রে ? এক কথায় পতিতপাবনের চেহারা বদলে গেল। করুণ চোখ তুলে বলল—কই আর চলে বাৰু। চলে না ব’লেই তো 'জরশনি’ কোম্পানীর তিন বছরের চাকরি ছেড়ে ডাক্তার ত্রিনয়ন ত্ৰিপাঠীর কাছে চাকরি নিয়েছি । ওষুধটা বাৰু চলে ভাল। তাই কমিশন-টমিশনও দু-চার পয়সা হয় । তাছাড়া, ডাক্তারবাৰু বড় ভালমানুষ । বিনা পয়সায়ই ছেলেটার চিকিৎসাটা চলে ।