পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سام 8 প্রবাসী ১৩৪৬ ফিনর। কিন্তু তাহা অস্বীকার করে। তাহাদের এই অস্বীকৃতি সত্য বলিয়া মনে হয়। ইয়োরোপে ফিনদের দুই বিষয়ে প্রসিদ্ধি আছে। ঐ মহাদেশের মেয়েদের যে রূপের প্রতিযোগিতা হয় তাহাতে একাধিক বার কোন-না-কোন ফিন তরুণী বা কিশোরী মিস ইয়োরোপ (“Miss Europe") “of” scorator” of লাভ করেন। কবির হৃদয়জয়ের যে-সব অভিযান বর্ণনা করেন, তাহাতে এই রকম জয়শ্ৰী কাজে লাগিতে পারে, কিন্তু বাস্তবিক-অভিযানে কাজে লাগে না। অতএব, ইহা ফিনদের আততায়িতার কারণ হইতে পারে না। দ্বিতীয়তঃ, ইয়োরোপে ষে ওলিম্পিক খেলাধুলা হয়, তাহার দৌড় প্রভৃতি সর্বজাতিক প্রতিযোগিতাতেও একাধিক বার ফিনরা প্রথম স্থান অধিকার করিয়াছে । আধুনিক যুদ্ধ যদি সেকালের মত অনেকটা দৈহিক শক্তির ব্যাপার হইত তাহ হইলে ফিনদের আততায়ী হইবার একটা কারণ পাওয়া যাইত। কারণ দৌড়ে দক্ষতা সেরূপ যুদ্ধে আক্রমণ ও পলায়ন উভয় কার্যেই কাজে লাগে । কিন্তু আজকালকার যুদ্ধ দৈহিক শক্তির ব্যাপার নহে । সুতরাং ফিনরা দৌড়ে ভাল বলিয়া রুশিয়াকে আগেই আক্রমণ করিয়াছিল, ইহা বিশ্বাস করা যায় না। রুশিয়া ফিনল্যাণ্ডের সহিত কিছু ভৌগোলিক সীমা আদির অদলবদল চাহিয়াছিল । ফিনল্যাণ্ড রুশিয়ার অনেকগুলা প্রস্তাবে রাজী হইয়াছিল, সকলগুলাতে হয় নাই । ইহা রুশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ আরম্ভ করিবার দ্যায্য কারণ হইতে পারে মা । রুশিয়া যে অদলবদল চাহিয়াছিল, তাহার নানান কারণ থাকিতে পারে। রুশিয়ার সন্দেহ হইয়া থাকিতে পারে যে, তাহাকে কোন বা কোন-কোন শক্তি আক্রমণ করিবে । কিন্তু আপনাকে নিরাপদ করিবার নিমিত্ত অন্য কোন দেশকে অঙ্গহীন, কার্যত পরাধীন, বা দুৰ্ব্বল করিবার, বা তাহার উপর জবরদস্তী করিবার ন্যায্য অধিকার তাহার নাই । রুশিয়। ফিনল্যাণ্ডের সহিত একটা পাকা পারস্পরিক সাহায্যমূলক সন্ধি করিতে পারিত। রুশিয়ার দ্বিতীয় কারণ এই হইতে পারে যে, রুশিয়া এবং তাহার সর্বাধ্যক্ষ স্টালিন কমুনিস্ট হইলেও বস্তুত সাম্রাজ্যিকতাগ্রস্ত, এই জন্য ফিনল্যাণ্ডের নৈসর্গিক সম্পদ অধিকার করিতে চায়। বলা বাহুল্য, কাহারও সাম্রাজ্যিকতা সমর্থনযোগ্য নহে - কমু্যনিস্টদের সাম্রাজ্যিকতিও নহে । তৃতীয় কারণ এই হইতে পারে যে, কমুনিস্ট রুশিয়া বিপ্লবের পর পৃথিবীব্যাপী বিপ্লব ঘটাইবার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিয়াছিল, সেই লক্ষ্য এখনও ত্যাগ করে নাই, এবং সেই উদ্দেশু সিদ্ধির নিমিত্ত রুশিয়া যেমন ইয়োরোপে তাহার অন্ত কতিপয় প্রতিবেশীকে সোভিয়েট সাধারণতন্ত্রে পরিণত করিতেছে ও করিবার চেষ্টা করিতেছে, ফিনল্যাণ্ডেও তদ্রুপ সেই প্রক্রিয়ার অনুসরণ করিতেছে । অন্য বহু রাষ্ট্রনৈতিক মতের মত কমুনিজমও একটি রাষ্ট্রনৈতিক মত। এই মত প্রচার করিবার এবং তস্থার ভিন্ন ভিন্ন মানুষকে ও ভিন্ন ভিন্ন জাতিকে কমু্যনিস্ট করিতে চেষ্টা করিবার অধিকার কমুনিস্টদের আছে-যেমন অন্ত মত প্রচার করিবার এবং ব্যক্তি ও জাতিকে সেই মতে আনিবার অন্যমতাবলম্বীদের আছে । কিন্তু তজন্য বল প্রয়োগ করিবার অধিকার কাহারও নাই। ইয়োরোপীয় খ্ৰীষ্টীয়ান ঐতিহাসিকেরা অনেকে বলেন যে, তরবারির জোরে ইসলাম প্রচারিত হইয়াছিল; কিন্তুঞ্জেলমানরা তাহার তীব্র প্রতিবাদ করেন। কমুনিস্টর বোমার জোরে কমু্যনিজম বিস্তার করিবার চেষ্টা করিতেছেন, এরূপ ধারণা, উক্তি ও গুজবের প্রতিবাদ তাহারা করেন কিনা দেখা যাইবে । ফিনরা কি জিতিবে ? রুশিয়ার চেয়ে ফিনল্যাণ্ডের জনবল ধনবল দুই-ই কম, সমরসজ্জাও কম। তবে কোন সাহসে ফিনরা রুশিয়ার সহিত যুদ্ধ চালাইতেছে ? বানার্ড শ মনে করেন, বিদেশীর সাহায্যের আশায় কিছু করা উচিত নয় ; কেননা বিদেশীর সাহায্য, তিনি মনে করেন, পাওয়া যায় না ; সুতরাং রুশিয়ার দাবী মানিয়া লওয়াই ফিনদের উচিত ছিল। এই ঔচিত্যটা অবশ্ব ধর্ম ও ন্যায়ৰুদ্ধি সঙ্গত নহে, বৈষয়িক ও সাংসারিক বুদ্ধি সঙ্গত । কিন্তু কোন জাতি ন্যায় ও স্বাধীনতাকে ধনপ্রাণ অপেক্ষাও বড় মনে করিলে