পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ 8$$ প্রবাসী ૩૭8ષ્ઠ সেই জন্তে আমি বাইরের দিক থেকে সফলতার বিচার করতে চাই নে ; আমি কেবল এই টুকুই দেখতে চাই, আমি যেন সত্য হতে পারি। আমি এই জানি আমার উপর যে ধাৰি আছে সে আমাকে যেমন করে হোক পূরণ করতেই হবে। এ দাবি অন্যে স্বীকার করছে কি না সে কথা বিচার করতে গেলেই নিজের দায় অন্যের স্বন্ধে চাপাবার দুর্বলতা মনকে পেয়ে বসে । আমার অস্তুর্ষামীর সঙ্গে আমার যা বোঝ|পড়া আছে তাই আমি জানি—আমি আর কিছুই জানি নে, জানবার চেষ্টা করতে গেলে পদে পদে ভুল বিচার করি, তাতে কেবল অপরাধ বাড়তে থাকে । আমাদের দাবি হচ্ছে কেবল দেবার দাবি—অন্যের কাছ থেকে পাবার দাবি কিছুই নয়— এই কথাটি যেন প্রসন্নমনে অস্তরের মধ্যে জাগন্ধক রাখতে পারি । বঙ্গলক্ষ্মী ] যুগ-পরিবর্তন ঐরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাজের গভীর পরিষতনগুলি অস্তরের খেকে ঘটে । বাহিরের শিক্ষা ও অবস্থার যোগে এই পরিবতন ক্রমশ বল পেতে থাকে। প্রথার সঙ্গে অবস্থার ও নবশিক্ষিত চিত্তবৃত্তির অসামঞ্জস্য নিয়ে বেদনাবোধ এইটে হচ্ছে পরিব তনের প্রথম সূচনা । স্বভাবতই সাহিত্যের কাজ হচ্ছে এই বেদনাকে প্রকাশ কর । তার ভালোমন্দ বিচার করা বা তার প্রতিকারের উপায় নির্ণয় কর রসসাহিত্যের কতব্য বলে মনে করি নে। দেশের মেয়ের এখনো রয়েছে সাবেক কালে । তাদের শিকড় বাধা সমাজের গল্পীরে, এই কারণেই বর্তমান যুগ যখন নড়েচড়ে ওঠে তখন কঠিন টান পড়ে মেয়েদের জীবনে, তাবা দুঃথ পায় । সেই দুঃখের কথাই আমার লেখায় অনেক বার প্রকাশ পেয়েছে । এই দুঃখের নিরস্তুর আঘাতে সেই চিত্তবৃত্তি ভিতর থেকে আপনি গড়ে উঠবে যা অবস্থাস্তরের সঙ্গে আপন সামঞ্জস্য ঘটিয়ে তুলবে। রাশিয়ায় যা ঘটেছে বা য়ুরোপে যা ঘটে তা সেখানকার মন:প্রকুতির অভিব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে নানা বিরোধের মধ্য দিয়ে সত্য হয়ে উঠছে । আমাদের দেশেও সেইরকম ঘটবে । কিন্তু ঘটবে অস্ত্রকরণ করে নয়, নিজের নিয়মে । যা চলে এসেছে তাই চিরকাল চলবে না এইমাত্র জানি, কেননা প্রতিদিন পঘ বদলাচ্ছে, দিক-পরিবতন হচ্ছে, কারো সাধ্য নেই কালকে প্রতিরোধ করতে পারে । ভারতবর্ষের ইতিহাসেও বৈদিককাল থেকে আজ পর্যস্ত সমাজের প্রভূত পরিবতন হয়েছে আজও নূতন পরিবতনের জঙ্ক প্রস্তুত হতে হবে । অনেক রকম পরীক্ষা হবে কোনোট। টিকবে, কোনোটা টি"কবে না । তারি ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সমাজের স্বষ্টি ক্রিয়া চলবে । জয়শ্ৰী ] রাষ্ট্রভাষা-সমস্যা ঐখগেন্দ্রনাথ মিত্র, এম. এ. --রাষ্ট্রভাষার যে খুয়ে উঠেছে তাতে যেন সত্যের প্রতি জুলুম করবার আশঙ্ক। হচ্ছে । লোকের প্রকুতি ও রুচি অনুসারে কত শতাব্দী ধরে যে-ভাষা যে-দেশে আত্মলাভ করেছে তার দাবী অগ্রাহ করবার কথা উঠলেই মনে খটকা বাধে। যদি বলেন ধে প্রত্যেক প্রদেশের মাতৃভাষার অনুরাগ বজায় রেখেও একটি রাষ্ট্রভাষা গঠিত হতে পারে, তা হলে সে-কথা সত্য হবে না। কারণ আমরা এখন যেমন করে ইংরেজী শিখে থাকি, তেমনি ভাবে যদি হিন্দী বা হিন্দুস্থানী ভাষার চর্চা করি, তা হলে রাষ্ট্রভাষা তাকে বলা চলবে না । কেনন। এখনও ভেবে দেখলে. বুঝা যায় যে যারা ইংরেজী ভাষা শিক্ষা করে, তাদের সংখ্যা মুষ্টিমের। এই মুষ্টিমেয় লোকের দ্বারা একটা রাষ্ট্রভাষার চলন হতে পারে না । প্রাদেশিক ভাষাকে ডুবিয়ে, তলিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রনৈতিক প্রয়োজনে যদি কোনও ভাষাকে ভারতের একতম ভাষারূপে পরিণত করা যায়, তা হলে অবশ্ব ‘রাষ্ট্রভাষা’ নাম সার্থক হতে পারে। কিন্তু প্রথমত এমন শক্তি করি আছে ৰে এই অসাধ্য সাধন করতে পারবে ? রাজশক্তি পশ্চাতে থাকলেও এ-কাজ সহজ হবে না । অশোকের মত একচ্ছত্র নৃপতি ও ত৷ করতে পারেন নি । র্তার বিভিন্ন দেশের শিলা- ও স্তস্ত- লিপি দেখলে বুঝতে পারা যায় যে, তিনিও সমস্ত দেশে এক ভাষা চালাতে পারেন নি। শুধু শুধু আত্ম প্রতারণার দ্বারা আমরা যলক্ষয় করতে উদ্যত হয়েছি ... আমাদের হিন্দুস্থানী বন্ধুগণ চিরদিন আমাদের প্রতি অমুকুল ছিলেন। আমরা বাঙালীরাও তাদের নানা প্রকারে সাধ্যমত সেবা করে এসেছি । ঠাদের শিক্ষাপ্রচারে, রাজনীতিক ক্ষেত্রে, সমাজ-সংস্কারে আমরা এত দিন যথাসাধ্য সহযোগিতা করে এসেছি । কিন্তু এখন আর আমাদের সেদিন নেই । আমাদের প্রতি র্তার ক্রমেই শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলছেন । যা অবশিষ্ট ছিল, তা এই বাংলা-হিন্দীভাষার প্রতিদ্বন্দ্বিতারূপ বিষাক্ত গ্যাসে নিঃশেযে লুপ্ত হয়ে যাবে বলে মনে হয় । কিন্তু কেন ? প্রত্যেকেই যে নিজের মাতৃভাষার প্রতি অনুরক্ত হবে এ ত স্বাভাবিক । তারা হিন্দীভাষার মহিম কীৰ্ত্তন করুন, আমরা কান পেতে শুনতে রাজী আছি । যে-ভাষায় সুরদাস, তুলসীদাস, নন্দদাস প্রভৃতি অমর কাব্য রচনা করেছেন, তার প্রশংসায় কে কৃপণতা করবে ?---ঔদের এক অখিল ভারত হিন্দী-সাহিত্য সম্মেলনে দেখলাম যেন ওঁর। আগে থেকেই লঙ্ক ভাগ-বাটোয়ার করে ফেলেছেন । র্যার রাষ্ট্রভাষায় পৃষ্ঠপোষক তাদের ফন্তোয় কিন্তু অগুরূপ। তারা হিন্দীভাষা ত চান না । তার চান এমন একটি ভায। যার অন্ধেক হৰে উল্লু আর অৰ্দ্ধেক হবে হিন্দী। এই নরসিংহ মূৰ্ত্তি ভারতীয় সাহিত্যের স্ফটিক স্তম্ভ বিদীর্ণ করে কবে আবিভূতি হবে তা জানি নে । কার বিনাশের জল্প, সেটাও কালই প্রমাণ করবে।-- দেশ ]