পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খাদ্য ও পুষ্টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাষ্টিক অবস্থার উন্নতি উদেশে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার লাভের জন্য আমরা কিছু কাল থেকে প্রাণপণ প্রয়াস -করে আসছি। স্বদেশের শাসন-চালনার দায়িত্ব থেকে বাঞ্চত হওয়াতে আমাদের যে দুৰ্গতি তারই বেদনা আমাদের মনকে সর্বাপেক্ষ পীড়িত করেছে । কিন্তু আমাদের উন্নতির আমাদের আত্মরক্ষার বাধা আমাদের বিনাশের মূলগত আশ্রয়, তাদের সম্বন্ধে দেশের লোকের চেতনা জড়ত্বে আচ্ছন্ন, কেন না তারা আমাদের চিরাভ্যস্ত। সেই সকল অভ্যাসের সাংঘাতিকতা মুগ্ধভাবে আমরা মনেই আনতে পারি নে ৷ বহু কাল ক্রমাগত মমত্বের অন্তরালে তাদের শত্রুরূপে উপলব্ধি করতে পারি নে ব’লেই তাদের নিরবচ্ছিন্ন শক্রতা এমন সর্বনাশা। সেই অস্তঃশত্রু শত শত বৎসর আমাদের মম স্থলে বাসা ক’রে জীবনযাত্রায় আমাদের অকৃতাৰ্থ ক’রে তুলছে, সে থাকে আমাদের দিনযাত্রার সঙ্গে মিলিয়ে, নিমেষে নিমেষে আমাদের আক্রমণ করে । আত্মরক্ষার জন্তে ঝড়ের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করা বনস্পতির কাজ, কিন্তু যদি তার শিকড়ে লেগে থাকে উই, তাহলে তার আত্মরক্ষার সমস্যা বাইরে হয় গৌণ, ভিতরে হয়ে ওঠে মুখ্য । যুরোপে বিগত মহাসমরের যখন অবসান হোলো তখন বিজিত জমানদের যথোচিত আহারের অপ্রতুলতা নিয়ে মানবহিতৈষী নেভিনসন ষে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন অবিকল সেই আক্ষেপই যে আমাদের হয়ে আর কেউ করে না, এমন কি আমরা নিজেও করি নে তার কারণ জগতে আমাদের মনুষ্যত্বের মূল্য অকিঞ্চিৎকর । নেভিনসন বলেছিলেন দেহমনের তেজরক্ষার উপযোগী আহার থেকে সম্প্রতি কিছু কাল জমনরা বঞ্চিত আছে ব'লে সমস্ত জাতির ভাবী উন্নতির পক্ষে বিষম ক্ষতি ঘটছে। অর্থাৎ খাদ্যের অসম্পূর্ণত জমন জাতির জীবনীশক্তির লাঘবতা ঘটাচ্ছে। আলু রুটি মাংস ও মাখন তারা পুরো পরিমাণে পাচ্ছে না এর ক্ষতি যে কত দূরগামী ও ব্যাপক সেই কথা স্মরণ ক’রে তিনি শঙ্কিত হয়েছেন । আহাধের অপূর্ণতাবশত দীর্ঘকাল হ’তে আমাদের প্রাণসম্বলের ক্ষয় হয়েছে এবং নিরস্তর হতে চলেছে সে-কথা এত দিন ভুলেছিলুম, কিন্তু আর ভুললে চলবে না। যে-সকল জাতি প্রবল শক্তিমান তাদের সঙ্গে সকল বিষয়েই আমাদের প্রতিযোগিতার সময় এসেছে । জীবিকার ক্ষেত্রে আমরা ছোটোবড়ো সকল দিক থেকে হটে যাচ্ছি। বাইরের সুযোগ সম্বন্ধে বিঘ্নকে দোষ দিয়ে আমরা সাস্তুনা পাবার চেষ্টা ক’রে থাকি । কিন্তু সেই বিঘ্নের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লড়াই করতে যে পারি নে তার গোড়াকার কারণ আমাদের অপথ্যসংকুল খাদ্য যেটুকু শক্তির জোগান দেয় সে কেবল মানবজগতের বিশ্বব্যাপী প্রতিদ্বন্দ্বিতার নেপথ্যে মাথা গুজে পড়ে থাকবার মতে, সভ্যতার দুরূহ পথযাত্রায় শক্তি দেবার মতো নয়। তাই দুৰ্গমের অধ্যবসায়ে কেবলি আমাদের ক্লাস্তি আসে, আমরা হার মানি । বুদ্ধির মূলধন আমাদের যথেষ্ট নেই সে-কথা সত্য নয় কিন্তু সেই বুদ্ধিকে অক্লাস্ত চেষ্টায় ষোলো আন থাটাতে ষে উদ্যমের প্রয়োজন তাকে রক্ষা করতে পারে পুরুষানুক্রমে যথোচিত খাদ্যসেবন । অতএব যে-সকল কতব্যকে আখ্যা দিয়ে গৌরব ক’রে থাকি ভোজ্যের উৎকর্ষ সাধন তার মধ্যে প্রধান স্থান নিতে পারে । তাই যখন ভারতীয় সকল জাতির খাদ্যবিশ্লেষণ-তালিকায় দেখা যায় বাঙালীর খাদ্য পুষ্টিকরতার গুণে প্রায় সকলের নিচের কোঠায় তখন সে জন্যে লজ্জিত না হয়ে থাকতে পারি নে। বাঙালী জাতিকে কোনো বিদেশী যদি আমরা দ্যাশনাল