পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ ঘাটের ঠিকাদার কখন আসিয়া দাড়াইয়াছিল, সে জোড়হাত করিয়া বলিল—বাবু, তা হ’লে আমার আরজির কথাটা মনে রাখবেন । ૨ જ সেদিন অপরাহ্লে দুৰ্য্যোগটা সম্পূর্ণ না কাটিলেও স্তিমিত হইয়া আসিল । বর্ষণ ক্ষাস্ত হইয়াছে, পশ্চিমের বাতাস স্তব্ধ হইয়া দক্ষিণ দিক্ হইতে মুহ বাতাস বহিতে আরম্ভ করিয়াছে। সেই বাতাসে আকাশের মেঘগুলি দিকৃ পরিবর্তন করিয়া উত্তর দিকে চলিয়াছে । ইন্দ্র রায় আপনার কাছারির বারান্দার সামনের দিকে অল্প ঝুকিয়া এ-প্রাস্ত হইতে ও-প্রান্ত পৰ্য্যস্ত ঘুরিতেছিলেন, দুইটি হাতই পিছনের দিকে পরস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ । একটা কলরব তুলিয়া অচিন্ত্যবাবু বাগানের ফটক খুলিয়া প্রবেশ করিলেন—গেল, এই বার পাষণ্ড মেঘ গেল ! বাপ রে, বাপ রে, বাপ রে—আজ ছ-দিন ধ’রে বিরাম নাই জলের । আর কি বাতাস! উঃ, ঠাণ্ডায় বাত ধরে গেল মশাই! এই বার তিনি আকাশের মেঘের দিকে মুখ তুলিয়া বলিলেন—এই বার ? এই বার কি করবে বাছাধন ? যেতে তো হ’ল ! বামুন, বাদল, বান-দক্ষিণে পেলেই ধান-দক্ষিণে বাতাস বইতে আরম্ভ করেছে, যাও—এই বার যাও কোথায় যাবে ? রায় ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন—কি ব্যাপার ? অনেক কাল পরে যে ? অচিস্ত্যবাবু সপ্রতিভ ভাবে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন— জাঞ্জে হ্যা, অনেক দিন পরেই বটে । শরীর স্বস্ব না থাকলে করি কি বলুন ! অবশেষে কলকাতায় গিয়ে— ; অকস্মাৎ অকারণে হা-হা করিয়া হাসিয়া উঠিয়া বলিলেন— বলুন তো কি ব্যাপার ? চিন্তা-বিভোর মানুষ ভ্রভঙ্গি করিয়া এক ধারার মুন্থ হাসি হাসে, সেই ঈষৎ মৃদু হাসি হাসিয়া রায় বলিলেন— সেটা আবার কি ? হাসিতে হাসিতেই অচিন্তবাবু বলিলেন—দেখুন, ভাল ক’রে দেখুন, দেখে বলুন ! হে হেঁ, পারলেন না তো ? ৰলিয়া আপনার দাতের উপর আঙ ল রাখিয়া বলিলেন— یا حس-۹ ه) কালিদী দাত-দাত । এষ্ট রকম মুক্তোর পাতির মত দাত ছিল আমার ? পোকাথেকে কালো কালো দাত মনে আছে ? এবার ইন্দ্র রায়ের মন কৌতুকবোধে সচেতন হইয়া উঠিল, তিনি হাসিয়া বিস্ময় প্রকাশ করিয়া বলিলেন— তাই তো মশাই, সত্যিই এ যে মূক্তোর পাতির মত দাত । সগৰ্ব্বে অচিন্ত্যবাৰু বলিলেন—তুলিয়ে ফেললাম ! ডাক্তার বললে কি জানেন ? বললে, ওই দাতই তোমার ডিসূপেপসিয়ার কারণ। এখন আপনার পাথর খেলে হজম হয়ে যাবে । —বলেন কি ? —নিশ্চয় । দেখুন না ছ-মাসের মধ্যে কি রকম বিশালকায় হয়ে উঠি ! একেবারে যাকে বলে ইয়ং ম্যান । পরমুহূর্তেই অত্যস্ত দুঃখ প্রকাশ করিয়া বলিলেন–কিন্তু মুশকিল হয়েছে কি জানেন ? খাবার-দাবার—মানে, যাকে বলে পুষ্টিকর খাদ্য, সে তো আর এখানে পাওয়া যাচ্ছে না! রায় বলিলেন—এটা আপনি অযথা নিন্দে করছেন আমাদের দেশের। দুধ-বি এ সব তো প্রচুর পাওয়া যায় আমাদের এখানে । বিষম তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে দুধ ও ধিকে তুচ্ছ করিয়া দিয়া অচিন্ত্যবাবু বলিলেন—আরে মশাই কি ষে বলেন আপনি, বিশেষ ক’রে নিজে তান্ত্রিক হয়ে, তার ঠিক নেই। দুধ-ধিই যদি পুষ্টিকর খাম্ভ হ’ত তবে গরুই হ’ত পশুরাজ ! মাংস—মাংস খেতে হবে—তবে দেহে বল হবে । দুধ-খি খেয়ে বড় জোর চৰ্ব্বিতে ফুলে যও হওয়া চলে, বুঝলেন । রায় হাসিয়া বলিলেন—তা বটে, দুধ-ধি খেয়ে যগু হওয়া চলে, পাষগু হওয়া চলে না, এটা আপনি ঠিক বলেছেন । অচিস্ত্যবাৰু একটু অপ্রস্তুত হইয়া গেলেন, অপ্রতিভ ভাবে কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বিরক্তিভরে বলিলেন— আমিই বোকামি করলাম, আরও কিছু দিন কলকাতায় থাকলেই হ’ত । তা একটা সায়েব কোম্পানীর তাড়ায় এলাম চলে। ভাবলাম, সাওতালদের একটা-দুটো পয়সা দিয়ে একটা করে হরিয়াল, কি তিতির, নিদেন ঘুঘু মারার ব্যবস্থা করে নেব। তাছাড়া, এখানে বন্যশশকও তো প্রচুর পাওয়া যায়, সে পেলে না হয় দু-গও তিন গগু পয়সাই