পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাক্ষ অচিন্ত্যবাবু চটিয়া উঠিয়া বলিলেন—হেলো না, বুঝলে, হেসো না । এই হ’ল তোমাদের জাতের স্বভাব, বড়কে ছোট ক’রে হাসা আর ভায়ে ভায়ে লাঠালাঠি করা। ইংরেজ হ’ল আমাদের ভাই—তাদিগে লাঠি মেরে তাড়িয়ে নিজের রাজত্ব করবে । বাঃ বেশ । অমল এবং হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল । অচিন্ত্যবাৰু এবার অত্যন্ত চটিয়া উঠিয়া বলিলেন—তুমি তো অত্যন্ত ফাজিল ছেলে হে! বলি এমন ফ্যাক্ ফ্যাক্‌ ক’রে হাসছ কেন শুনি ? অমল বলিল—ইংরেজ আমাদের ভাই ? তক্তাপোবের উপর প্রাণপণ শক্তিতে আবার একটা চাপড় মারিয়া অচিন্তবাবু বলিলেন--নিশ্চয়, সার্টেনলি! ইংরেজ আমাদের ভাই, জ্ঞাতি, এক বংশ । পড় নি ইতিহাস ? ওরাও আর্য্য, আমরাও আর্য্য। আরও প্রমাণ চাও ? ভাষার কথা ভেবে দেখ! আমরা বাবাকে প্রাচীন ভাষায় বলি-পিতা পিতর, ওরা বলে ফাদার ! BBB SBBB S BBSBBS DBBJBBBS তফাং কোনখানে হে বাপু ? আমরা ভয় লাগলে বলি হরি বোল, হরি-বোল, ওরা বলে হরিবল, হরিবল! চামড়ার তফাংট তো বাইরের তফাৎ হে, আর সেট কেবল দেশভেদে, জলবাতাসভেদে হয়েছে । তর্কট। আর অগ্রসর হইতে পারিল না, নায়েব আসিয়া বাধা দিল । বলিল-অচিন্তবাবু, আপনি একটু থামুন মশাই, একটি বাইরের ভদ্রলোক এসেছেন। ধনী মহাজন লোক, কি ভাববেন বলুন তো ? অচিন্ত্যবাবু মুহূর্তে তর্ক থামাইয়া দিয়া ভদ্রলোক সম্বন্ধে উৎসুক হইয়া উঠিলেন, এ-ঘর ছাড়িয়া ও-ঘরে ভদ্রলোকটির সম্মুখে গিয়া চাপিয়া বসিয়া বলিলেন—নমস্কার। মশায়ের নিবাসটি জানতে পারি কি ? প্রতিনমস্কার করিয়া ভদ্রলোক বলিলেন—আমার বাড়ী অবশ্য কলকাতায়, তবে কৰ্ম্মস্থল আমার এখন এই জেলাতেই । সদর থেকেই আমি আসছি । —এখানে, মানে, কি উদ্দেশ্যে, যদি অবশ্য— —আমি এখানে একটা চিনির কল করতে চাই ; শুনেছি এখানে নদীর ওপারে একটা চর উঠেছে, সেখানে আখের চাষ ভাল হতে পারে, তাই দেখতে এসেছি জায়গাট । অচিন্ত্যবাবু গম্ভীর হইয়া উঠিলেন। তাহার বেনার মূলের ব্যবসায়ের পথে প্রতিবন্ধকতা অনুভব করিয়া নীরবে গম্ভীর মুখে বসিয়া রছিলেন। নায়েব বলিল-আপনি বম্বন একটু, আমি দেখে আসি কর্তাবাবুর সন্ধ্যা শেষ হয়েছে কি না ।

  • कांजिणौ

88% নায়েব বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করিয়া ডাকিল-মা। হেমাঙ্গিনী মাথার ঘোমটা অল্প বাড়াইয়া দিয়া ঘর হইতে বারানায় আসিয়া দাড়াইলেন, বলিলেন–কিছু বলছেন ? —আজ্ঞে, কৰ্ত্তাবাবুর সন্ধ্যা শেষ হয়েছে ? —তা আর হয়ে থাকবে বৈকি। কোন দরকার আছে ? —আজো হ্যা । একটি ভদ্রলোক এসেছেন, চক্রবর্তীবাড়ীর ঐ চরটা দেখবেন । তিনি একটা চিনির কল বসাবেন । আমাদের এখানেই এসে উঠেছেন । —ও । আচ্ছা আমি খবর দিচ্ছি, আপনি যান। চা-জলখাবারও পাঠিয়ে দিচ্ছি। নায়েব চলিয়া গেল। হেমাঙ্গিনী চায়ের জল বসাইয়া দিতে বলিয়া উপরে উঠিয়া গেলেন। অৰ্দ্ধেকটা সিড়ি উঠিয়াই তিনি শুনিতে পাইলেন মৃদুস্বরে রায় আজ গান গাহিতেছেন—“সকলই তোমার ইচ্ছ। ইচ্ছাময়ী তার তুমি।” তিনি একটু বিস্মিত হইয়া গেলেন, গান তো তিনি বড় একটা গান না। অভ্যাসমত তিন পাত্র “কারণ পান করিলে রায় কখনও এতটুকু অস্বাভাবিক হন না । পৰ্ব্বে বা বিশেষ কারণে তিন বারের অধিক পান করিলে কখনও কখনও গান গাহিয়া থাকেন। হেমাঙ্গিনী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া দেখিলেন সম্মুখে পাত্রপূর্ণ স্বর। রাখিয়া রায় মৃদুস্বরে গান করিতেছেন। তিনি বেশ বুঝিলেন সন্ধ্যা শেষ হইয়া গিয়াছে, রায় আজ নিয়মের অতিরিক্ত পান করিতেছেন। হেমাঙ্গিনী বলিলেন—এ কি ? সন্ধ্যে তো হয়ে গেছে—তবে যে আবার নিয়ে বসেছ ? মত্ততার আবেশমাথা মৃদু হাসি হাসিয়া রায় হাত দিয়া স্থান নির্দেশ করিয়া দিয়া বলিলেন—ব’স ব’স । মাকে ডাকছি আমার। আমার সদানন্দময়ী মা ! তিনি আবার পূর্ণপাত্ৰ তুলিয়া লইলেন। হেমাঙ্গিনী বলিলেন~~ঐ শেষ কর । পাবে না । রায় বলিলেন—আজি আনন্দের দিন । চক্রবর্তীবাড়ী আর রায়-বাড়ীর বিরোধের শেষ কাটাটাও আঞ্জ মা তুলে দিলেন । আনন্দ করব না ? পাচ হয়েছে সাতে শেষ করব হিমু—সাত-পাচ ভাবা আজ শেষ ক’রে দিলাম । বলিয়া হেমাঙ্গিনীর মুখের সম্মুখে হাত নাড়িয়া আবার গান ধরিলেন— “সকলই তোমার ইচ্ছা ইচ্ছাময়ী তারা তুমি।” ক্রমশঃ আর খেতে